শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

|

বৈশাখ ৫ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

জাকির খানের বিরুদ্ধে যে সাক্ষ্য দিলেন তৈমূর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

জাকির খানের বিরুদ্ধে যে সাক্ষ্য দিলেন তৈমূর

ফাইল ছবি

নারায়ণগঞ্জে আলোচিত ব্যাবসায়ী নেতা সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলার অন্যতম আসামি জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খানের ফাঁসি চেয়েছেন মামলার বাদী ও সাব্বিরের বড় ভাই সাবেক বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। 

বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা-২ আদালতের বিচারক শাম্মী আক্তারের আদালতে সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহন শুরু হয়। এসময় জাকির খান ছাড়াও মামলার আরো দুই আসামি নাজির হোসেন ও মোক্তার হোসেনকেও আদালতে হাজির করা হয়।

প্রথম দিনে সাক্ষ্য দিয়েছেন মামলার বাদী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। আগামী ৬ মার্চ দ্বিতীয় দফার সাক্ষ্যগ্রহনের জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত।

এদিকে আদালতে সাক্ষ্য দেয়া শেষে সাংবাদিকদের তৈমূর জানান, প্রতিবছর ১৮ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জবাসী সন্ত্রাস প্রতিরোধ দিবস পালন করে। সাব্বির আলম খন্দকার একজন ব্যাবসায়ী নেতা হিসেবে সবসময় জাকির খান এবং তার সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে তারা যেখানে যেখানে সন্ত্রাস করেছে সেসবের বিরুদ্ধে, খুন, রাহাজানি ডাকাতি অস্ত্রবাজিসহ সকল অপকর্মে বিরোধিতা সে করেছে। সাব্বির আলম খন্দকার জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য ছিল। সে বিভিন্ন সংগঠন করত। বিকেএমইএ'র ঝুট নিয়ন্ত্রণ কমিটির সে চেয়ারম্যান ছিল। এগুলো করতে গিয়ে চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ৩১ মামলার আসামি জাকির খান যার বিরুদ্ধে বহু মামলা আছে যেগুলোতে মানুষ ভয়ে সাক্ষী দেয় না। তারপরেও সন্ত্রাস দমন আইনে দুইবার তার সাজা হয়েছিল। একটি সাজায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মতিন চৌধুরীর মাধ্যমে সে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পায়। আরেকটি মামলায় তার আট বছরের সাজা এখনও আছে। সেই সময় সে আগাম জামিন নিয়ে দেশত্যাগ করে পালিয়ে যায়। এতদিন পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেনি। সে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করেছে। আমাদের হুমকি দিয়েছে। তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম সে গ্রেফতার হওয়ার পরেই আমরা সাক্ষী দেব। র‍্যাব তাকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে। আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আদালতে সাক্ষ্য পেশ করবো। 

তিনি আরও বলেন, সাক্ষীতে আমরা জাকির খান কী কী অপকর্ম করেছে তা তুলে ধরেছি। নারায়ণগঞ্জের ৩২টি সংগঠনের মিটিংয়ে অপারেশন ক্লিন হার্টের সময় জিজ্ঞেস করা হয়েছিল আপনারা কে আছেন যে সন্ত্রাস করে না, তার পরিবারেও কেউ সন্ত্রাস করে না। তখন সাব্বির বলেছিল আমি সন্ত্রাস করি না আমার পরিবারেও কেউ সন্ত্রাস করে না। তখন আর্মি অফিসাররা বলেছিল তাহলে আপনি বলেন। তখন সে বলেছিল আমার জানাজায় শরীক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আমি আমার বক্তব্য শুরু করলাম। তখন এই জাকির খানরা কীভবে সন্ত্রাস করে নাম উল্লেখ করে এগুলো সে ব্যাখ্যা করে। তারপরেই তারা সাব্বিরকে হত্যার পরিকল্পনা করে। 

তিনি বলেন, আমি তখন রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করতে কলম্বিয়ায় ছিলাম। তখনও সাব্বির আমাকে টেলিফোন করে জাকির খানদের হুমকির বিষয়টি জানিয়েছিল। জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে, অপারেশন ক্লিন হার্টের সময় এমনকি বিভিন্ন সভা সমাবেশে সে সন্ত্রাসীদের নাম উল্লেখ করে একথা বলেছে। এটাই তার মৃত্যুর কারন। আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই তারা প্রতিবছর এই দিনটি স্মরণ করে। আমি সন্ত্রসীদের সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসি চাই।

সাব্বির আলম খন্দকার ছিলেন দেশের গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার অ্যান্ড ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) এর প্রতিষ্ঠাকালীন পরিচালক ও সাবেক সহ-সভাপতি। তিনি বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকারের ছোট ভাই। তার অপর ভাই মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি।

আসছে শনিবার ১৮ ফেব্রুয়ারি সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলার ২০ তম বার্ষিকী। সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলায় ২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি শহরের মাসদাইর এলাকায় নিজ বাড়ির অদূরে আততায়ীদের গুলিতে তিনি নিহত হন।

হত্যাকাণ্ডের পর তার বড় ভাই তৈমুর আলম বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা) আসনের তৎকালীন বিএনপি দলীয় এমপি গিয়াসউদ্দিনকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। দীর্ঘ প্রায় ৩৪ মাস তদন্ত শেষে সিআইডি ২০০৬ সালের ৮ জানুয়ারি আদালতে ৮ জনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করেন। এ চার্জশিটে মামলার প্রধান আসামি গিয়াস উদ্দিনকে মামলা থেকে বাদ দেওয়ায় মামলার বাদী তৈমুর আলম খন্দকার সিআইডির দেওয়া চার্জশিটের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২৪ জানুয়ারি আদালতে নারাজি পিটিশন দাখিল করেন।

নারাজি পিটিশনে তৈমুর আলম বলেন, ‘গিয়াসউদ্দিনই সাব্বির আলম হত্যাকাণ্ডের মুল নায়ক। গিয়াসউদ্দিন ও তার সহযোগীদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা একটি গোঁজামিলের চার্জশিট দাখিল করেছেন। পরবর্তীতে আদালত মামলাটি পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেন। ’

এর পর থেকে ৬ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জ বিচারিক হাকিম আদালতে (ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট) মামলার শুনানি চলে আসছিল। গত ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে তৈমুর আলম খন্দকার আদালতে দাখিলকৃত না রাজি পিটিশনটি আবেদন করে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। নারাজি পিটিশন প্রত্যাহারের কারণে গিয়াসউদ্দিন এখন আর মামলায় অভিযুক্ত নেই। ফলে সিআইডি ২০০৬ সালের ৮ জানুয়ারি আদালতে যে ৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছেন তার উপর ভিত্তি করেই মামলাটি পরিচালিত হচ্ছে।