শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

|

বৈশাখ ১১ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

দর্শনার্থীর ভিড়ে জমজমাট বাণিজ্য মেলা, অতিরিক্ত দামের অভিযোগ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ২০:৩৫, ১৪ জানুয়ারি ২০২৩

দর্শনার্থীর ভিড়ে জমজমাট বাণিজ্য মেলা, অতিরিক্ত দামের অভিযোগ

২৭তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা

রাজধানীর পূর্বাচলে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ চীন মৈত্রী এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) চলছে ২৭তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। এবারের মেলা শুরু হয় ঠিক বছরের প্রথম দিনেই।

শুরুর দিকে মেলায় দর্শনার্থীদের ভিড় তেমন একটা ছিল না। তবে দিন যত গড়াচ্ছে দর্শনার্থীদের চাপ তত বাড়ছে। ছুটির দিন হওয়াতে আশপাশের জেলা থেকেও প্রচুর লোক ভিড় করেছে বাণিজ্য মেলায়। একই সঙ্গে বিক্রি বেড়েছে স্টলগুলোর। বিগত দিনের তুলনায় ছুটির দিনে বেচা-বিক্রি বেশি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। যদিও ক্রেতারা বলছেন, মাত্রাতিরিক্ত দাম রাখছে বেশিরভাগ নন ব্রান্ডের স্টলগুলো।  

শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) সরেজমিনে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পূর্বাচলে অবস্থিত ২৭তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে মেলায় ঘুরতে আসেন কর্মজীবী সাধারণ মানুষ। অনেকে তাদের পছন্দের জিনিসপত্র কেনাকাটা করেন। এ দিন মেলায় স্বাভাবিকের তুলনায় ভিড় ছিল প্রচুর।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অন্যান্য সময় মেলায় দর্শনার্থী হিসেবে আসতেন সাভার ও ঢাকায় বসবাসকারীরাই। তবে এদিন (১৩ জানুয়ারি) বন্ধের দিন হওয়ায় আশেপাশের বেশ কিছু জেলা, যেমন- গাজীপুর, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও কুমিল্লা থেকেও অনেকে ঘুরতে আসেন বাণিজ্য মেলায়। এদের মধ্যে অনেকেই শুধু ঘোরার উদ্দেশ্যে এসেছেন। অনেকে আবার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে মেলায় এসেছেন। এসব দর্শনার্থীর মধ্যে বেশিরভাগই আবার নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জের বাসিন্দা। তবে ঢাকার দর্শনার্থীদের সংখ্যাও কম নয়।

এদিকে, বাণিজ্য মেলায় এ পর্যন্ত ১৪ বার অংশ নিয়েছে সুমি এন্টারপ্রাইজ নামক একটি কাপড়ের শোরুম। তাদের প্রধান শাখা হচ্ছে ঢাকার নিউ এলিফ্যান্ট রোডের আলপনা প্লাজায়। মেলায় এই স্টলটিতে ব্লেজার, কোটি এবং বাচ্চাদের ব্লেজার বিক্রি হচ্ছে ১৮০০ টাকায়। মেলায় এই দামে বিক্রি করলেও রাজধানীর মার্কেটে একই পণ্য ২৪০০ টাকায় বিক্রি করেন বলে জানান শোরুমের বিক্র‍য় প্রতিনিধি রবিউল ইসলাম রবিন।

তিনি বলেন, মেলা উপলক্ষে আমরা ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ছাড়ে আমাদের পণ্য বিক্রি করছি। এতদিন বেচা বিক্রি কম থাকলেও আজ বিক্রি অনেকটা ভালো। তিনি আরও বলেন, ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকায় এই স্টলটি ভাড়া নিয়েছি। যদি বেচাকেনা ভালো না থাকে, তাহলে বড় ধরনের লোকসান হবে। আমরা বেশি দামে কোনো কিছু বিক্রি করছিনা।

সোনারগাঁয়ের ঐতিহ্যবাহী জামদানি শাড়ি ও টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি ১০ শতাংশ ছাড়ে বিক্রি করছেন নৌসিন জামদানী উইভিং ফ্যাক্টরী নামের একটি স্টল। ৬৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত জামদানি এবং তাঁতের শাড়ি আছে এই স্টলটিতে। মেলার বাইরে তাদের পণ্য বিক্রির কোনো শোরুম নেই। প্রতি বছর মেলায় অংশ নেন তাদের পণ্য সাধারণের সামনে তুলে ধরতে। মেলা শেষে কেউ যদি তাদের পণ্য কিনতে চান, তাহলে নারায়ণগঞ্জে তাদের ফ্যাক্টরিতে গিয়ে কিনতে হবে।  

এই স্টলের বিক্রয় প্রতিনিধি মো তুহিন বাংলানিউজকে বলেন, সামাজিক অনুষ্ঠানে পরার মতো বাহারি ডিজাইনের জামদানি শাড়ি আমাদের স্টলে ক্রেতাদের চাহিদার শীর্ষে।

এদিকে, বাণিজ্য মেলা দেখতে এবং প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার উদ্দেশ্যে টাঙ্গাইল থেকে এসেছেন মো. সজিব নামে এক সৌদি প্রবাসী। পরিবার নিয়ে ভোর সকালে টাঙ্গাইল থেকে রওনা হয়ে সরাসরি বসুন্ধরা আবাসিকে বোনের বাসায় যান তিনি। সেখান থেকে দুপুরে বাণিজ্য মেলায় আসেন। মেলা থেকে ব্লেজারসহ কিছু ফুড আইটেম কেনেন সজিব।  

মেলার জিনিসপত্রের দাম কেমন জানতে চাইলে মো. সজিব বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সাধারণত মেলায় আসি কম দামে এবং ভালো পরিমাণ ছাড়ে জিনিস কিনব এই উদ্দেশ্যে। কিন্তু মেলায় ব্র্যান্ডের দোকানগুলো বাদে অন্য সব দোকানে উল্টাপাল্টা দাম চাচ্ছে। আমার একটা ব্লেজার পছন্দ হয়েছে, যেটা ১৮০০ টাকায় কিনেছি। এই একই ব্লেজার ঢাকার বাইতুল মোকাররম অথবা এলিফ্যান্ট রোড থেকে কিনলে ১৫০০ টাকা কিনতে পারতাম। কিন্তু পছন্দ হওয়াতে এবং হাতে সময় কম থাকায় মেলা থেকেই কিনলাম।

পণ্যের দাম নিয়ে বাণিজ্য মেলায় বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ক্রেতাদের তেমন কোনো অভিযোগ নেই। তবে শুধুমাত্র মেলা কেন্দ্রিক গড়ে ওঠা বেশির ভাগ ছোট-খাট নন ব্রান্ডের স্টলে পণ্যের দাম মাত্রাতিরিক্ত রাখছেন এমন অভিযোগ বেশির ভাগ ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের। ফলে বেশির ভাগ দর্শনার্থী মেলা থেকে কিছু না কিনে ঘুরাঘুরি করেই চলে যাচ্ছেন।

এসব নন ব্রান্ডের স্টলগুলোতে পণ্যের গায়ে কোনো প্রাইজট্যাগ দেওয়া নেই। বেশিরভাগ পণ্যের গায়ে হাতে লেখা মূল্য। আবার কিছু কিছু পণ্যের দাম কয়েকবার কেটে পরিবর্তন করা হয়েছে। মূলত এসব কারণেই ক্রেতারা দাম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।  

যদিও বিক্রেতাদের ভাষ্য, অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে ইজারাদার থেকে স্টল ভাড়া নিয়েছেন। যে কারণে কম মূল্যে পণ্য বিক্রি করলে লাভ ওঠাতে পারবেন না তারা।

যদিও বড় নামিদামি কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে দাম নিয়ে এমন অভিযোগ পাওয়া যায় না। উল্টো মেলা উপলক্ষে তারা পণ্যের দামের ওপর বিভিন্ন ডিসকাউন্ট দিয়ে থাকেন। তাদের দাবি, আপনি যদি বেশি মূল্যে কোনো কিছু বিক্রি করেন, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই সেটা কেউ কিনবে না। যে কারণে ব্যবসায়ীরা বলে থাকেন তাদের লস হচ্ছে, বিক্রি নাই। বেশি দাম রাখায় মেলা শেষে এব নন ব্রান্ডের স্টলগুলো তাদের বেশির ভাগ পণ্য ফেরত নিয়ে যায়। অন্যদিকে দামী ব্রান্ডগুলো মেলাতেই তাদের পণ্য বিক্রি শেষ করে ফেলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছোট উদ্যোক্তারা না বুঝেই ইজারাদার থেকে বেশি দাম দিয়ে স্টল ভাড়া নিচ্ছেন।

এ বিষয়ে বাণিজ্য মেলা পরিচালক ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী (ইপিবির সচিব) বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবার মেলার শুরুর দিকে ছোট-খাটো নন ব্রান্ডের স্টলগুলো দাম বেশি রাখে- এমন অনেক অভিযোগ আমারা পাই। তবে এরাই মেলার শেষের দিকে কম মূল্যে পণ্য বিক্রির জন্য উঠেপড়ে লাগে। কারণ তারা ইজারাদারদের কাছ থেকে না বুঝেই অতিরিক্ত দাম দিয়ে মেলায় স্টল ভাড়া নেন। মূলত এরা মেলাকে উদ্দেশ্য করেই ব্যবসা করে থাকেন।  

ছোট উদ্যোক্তাদের কথা মাথায় রেখে আগামীতে বাণিজ্য মেলায় স্টল ইজারা দেবার বিষয়ে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হবে বলেও জানান বাণিজ্য মেলার পরিচালক।  

ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, বর্তমানে ইজারার ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে অনেকে তার একটি স্টলকে কয়েক ভাগে ভাগ করে ছোট ছোট করে বিভিন্ন জনের কাছে ভাড়া দিচ্ছেন। আর সেই স্টলগুলোই অতিরিক্ত টাকা দিয়ে ছোট ছোট উদ্যোক্তারা ভাড়া নিচ্ছেন। তবে এসব ছোট উদ্যোক্তাদের (উৎপাদনশীল) জন্য আমরা আগামীতে আলাদা স্টলের ব্যবস্থা করব। যার ফলে অন্য কারো থেকে ভাড়া নেবার প্রয়োজন হবে না তাদের। এক্ষেত্রে তারা যে পণ্য উৎপাদন করে, এমন কাগজপত্র বা ডকুমেন্টস আমাদের দেখালেই আমরা তাদের নামে স্টল বরাদ্দ দেবো।  

এর ফলে শুধু মেলা কেন্দ্রিক গড়ে ওঠা ব্যবসায়ীদের সংখ্যাও কমবে বলে জানান ইপিবির এই সচিব।