বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

|

বৈশাখ ১১ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

রোজা রেখে যেভাবে সতেজ থাকবেন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ২৩:০২, ৩ এপ্রিল ২০২২

আপডেট: ২৩:১৪, ৩ এপ্রিল ২০২২

রোজা রেখে যেভাবে সতেজ থাকবেন

সংগৃহীত

সংযম এবং সাধনার এক অপূর্ব সমন্বয় নিয়ে পবিত্র মাহে রমজান মাস শুরু হয়েছে। এবার রোজা রাখার সময়কাল প্রায় ১৪ ঘণ্টা।

দীর্ঘ একমাস স্বাভাবিক পানাহার থেকে বিরত থাকবেন সব মুসলিমরা। এর ফলে শরীরে প্রভাব পড়তে পারে। তাই এই সময় নিজেকে সুস্থ রাখতে এবং ফিট থাকতে খাবার দাবারের প্রতি একটু বাড়তি নজর দেওয়া জরুরি।

কাঠফাটা গরমে শরীরকে সতেজ রাখা বেশ চ্যালেঞ্জিং। কিছু স্বাস্থ্যবিধি এ সময় আমাদের জীবনযাত্রাকে সহজ করে দিতে পারে।

ভারসাম্যপূর্ণ খাবার গ্রহণ এবং কিছু নিয়ম মেনে চললে রোজায় থাকা যাবে স্বাভাবিক কর্মক্ষম ও সতেজ। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক রোজায় কর্মক্ষম ও সতেজ থাকতে কী কী খাবার খাবার খাবেন-

যেমন:

♦রোজায় খাওয়া-দাওয়া নিয়ে যে ভুল ধারণাটি সর্বাধিক তা হলো- সাহরি ও  ইফতারে বেশি করে খেলে ক্ষুধা দেরিতে লাগবে। ভাত রুটির মতো ভারী খাবারগুলো আমাদের দেহে হজম হতে ছয় থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগে। পরিমাণ যাই হোক হজমের সময়কাল প্রায় এক। অর্থাৎ পাহাড় প্রমাণ খেলেও নির্দিষ্ট সময় পর আপনার ক্ষুধা লাগবেই। তাই বেশি খেলে ক্ষুধা দেরিতে লাগবে এই বিষয়টি একেবারেই সঠিক নয়।

♦খাবার অন্ত্রে শোষণ ও হজম হতে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। তাই আপনি সাহরিতে যত বেশি খাবেন সেই খাবার শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে পানি টেনে এনে হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করার চেষ্টা করবে। বিশেষ করে সাহরিতে আতপ চালের ভাত বা খিচুড়ি খেলে হজমে মাত্রাতিরিক্ত পানি প্রয়োজন হয়। ফলে অল্পসময়ে পানিশূন্য হয়ে যায়। পানিশূন্যতা ইফতারের পর তীব্র মাথা ব্যথা ও এসিডিটি কারণ হতে পারে।

♦ইফতারের শুরুতে ঘন শরবতের পরিবর্তে পাতলা শরবত খাওয়া উচিত। আবার ইফতারে তৃষ্ণা মেটানোর জন্য একেবারে অধিক বেশি পানি ও ঠাণ্ডা শরবত বা ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করা পানীয় পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। ইফতার থেকে সাহরি পর্যন্ত অল্প অল্প করে পানি খেতে হবে।

♦ ইফতারে তেলে ভাজা খাবার পুরোপুরি এড়িয়ে চলা উচিত এই মাসে। পানিশূন্যতার পাশাপাশি ঘন ঘন বায়ুত্যাগের প্রবণতা কমে যাবে।

♦ডাল জাতীয় প্রোটিন বেশি দ্রুত সতেজ করে তাই ইফতারে হালিম বা ডালের স্যুপ খুবই কার্যকরী। তবে ব্যতিক্রম হলো যাদের হজমের সমস্যা আছে ও কিডনি রোগে ভুগছেন তারা এ জাতীয় খাবার কম খাবেন।

♦দুধ জাতীয় খাবার অন্ত্রে খুব ধীরে ধীরে শোষিত হয় সাহরিতে দুধ বা টক দই খেলে একটু একটু করে সারাদিন শক্তি পাওয়া যাবে।

♦ ইফতারে কিছু উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত যেমন খেজুর ও ছোলা। ইফতারিতে মিষ্টি জাতীয় খাবার খুব দ্রুত শরীরে শক্তি জোগায়। খেজুরে থাকা গ্লুকোজ খুব দ্রুত শরীরে শোষিত হয়। অন্যান্য মিষ্টি জাতীয় খাবার যেমন জিলাপি খুব কম সময়ের মধ্যে শক্তি দেয়।

♦ইফতারির সময় অতিরিক্ত খেয়ে ফেলবেন না। সময় নিয়ে অল্প করে খেতে হবে। সারা দিন খালি পেটে থাকার পর রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কম থাকে। ইফতারির সময় দ্রুত খাবার খেতে থাকলে হঠাৎ করে অতিরিক্ত খাবারের কারণে রক্তে নিঃসৃত ইনসুলিনের প্রভাবে রক্তে থাকা অবশিষ্ট গ্লুকোজও শেষ হয়ে যায়। ফলে খুব বেশি ক্লান্তিবোধ করতে পারে।

♦সাহরির সময়  আঁশ জাতীয় খাবার বেশি করে খেতে হবে।  রমজানে অনেকেই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় পড়েন। তাদের জন্য আঁশযুক্ত খাবার খুব দরকার। পানি পানের সঙ্গে মাঝে মধ্যে ইসবগুলের ভূষি খেতে পারেন।

♦এই মাসে ওজন বাড়া খুবই বিপজ্জনক ঘটনা। এ সময় পেশির ওজন খুব কম পরিমাণে বাড়ে। যতটুকু বাড়বে বুঝতে হবে তার পুরোটাই চর্বির ওজন। তাই যতটা সম্ভব খাবারে স্যাচুরেটেড ফ্যাট এড়িয়ে চলুন।

♦ বাড়িতে সিনিয়র সিটিজেন, ডায়াবেটিক, কিডনি, হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীরা তাদের সঠিক খাদ্যাভ্যাসের জন্য পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেবেন।

♦অনেকেই আছেন গভীর রাতে উঠতে পারেন না। কিন্তু রোজা রাখার কারণে সাহরিতে উঠতে হয়। এজন্য ঘুমের কিছুটা ব্যাঘাত ঘটে। রোজার সময় একটু আগে ঘুমিয়ে পড়ুন। কখনোই সারারাত জেগে সাহরি খেয়ে ঘুমাতে যাবেন না। এতে শারীরিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। ঘুম কম হলে হিটস্ট্রেস দেখা দিতে পারে এবং সারা দিন রোজা রাখতে কষ্ট হয়। তাই দিনের বেলায় কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে বা ঘুমিয়ে পুষিয়ে দেওয়া যায়। তাই বলে সারা দিন ঘুম নয়। যারা কর্মজীবী তারা কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নিতে পারেন।

তারাবিহ ২০ রাকাত নামাজ রমজানের সময় শারীরিক পরিশ্রম সুনিশ্চিত করে। এছাড়া হালকা ব্যায়াম গুলো চালিয়ে যেতে পারেন।

রমজানের প্রতিটি দিন আপনার সুস্থতা নিশ্চিত করুন। রমজান মাস রহমতের মাস, নাজাতের মাস, ক্ষমার মাস। প্রতিদিন একজনকে ক্ষমা করুন। দান করুন প্রাণ ভরে। দেখবেন, এক নতুন মানুষ হিসেবে নিজেকে আবিষ্কার করছেন। খোশ আমদেদ মাহে রমজান।