হাফিজুর রহমান মিন্টু
বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২১ এর বিশেষ সম্মাননা পেয়েছেন নারায়ণগঞ্জের প্রবীণ সাংবাদিক হাফিজুর রহমান মিন্টু। তৃণমূল সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তাঁকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। ৩০ মে সোমবার সন্ধ্যায় দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ আয়োাজিত ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে মিন্টুকে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়। তিনি পেয়েছেন এক লাখ টাকা, ক্রেস্ট, সম্মাননা পত্র ও উত্তরীয়। অনুষ্ঠানে ৬৪ জেলার ৬৪ জন প্রবীণ সাংবাদিক ছাড়াও ১১ জন সাংবাদিককে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হক এবং বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২১ এর জুরিবোর্ডের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রহমান। সভায় সভাপতিত্ব করেন বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর।
সম্মাননা পাওয়ার পর প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিক হাফিজুর রহমান মিন্টু বলেন, এই স্বীকৃতি সাংবাদিকদের উৎসাহিত করবে। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকরা সাংবাদিকতায় অবদান রাখতে সচেস্ট হবে। তিনি বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, সাংবাদিকতা জীবনের শেষপ্রান্তে এসে এই সম্মাননা আমাকে নতুন করে বাঁচতে অনুপ্রাণিত করবে। তিনি বলেন, তাঁরা যেন এই মহৎ ধারা অব্যাহত রাখেন, তাহলে এই পেশায় সুস্থ ধারার মানুষ এগিয়ে আসবে।
হাফিজুর রহমান মিন্টু ১৯৫৮ সালের ১৫ নভেম্বর ভারতের মুর্শিদাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা আশরাফ আলী ছিলেন অল ইন্ডিয়া ট্যানারী বোর্ডের পরিচালক আর শামসুন নাহার ছিলেন কংগ্রেস নেত্রী। চিরকুমার মিন্টু ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেন। হাইস্কুলে পড়া অবস্থায় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আসামের মহেন্দ্রগঞ্জ ক্যাম্পে চলে যান। সেখানে তিনি খবরাখবর আনা নেওয়ার কাজে জড়িত ছিলেন।
হাফিজুর রহমান মিন্টু ১৯৭৩ সালে ছাত্রাবস্থায় সাপ্তাহিক একতায় লেখালেখি করে সাংবাদিকতা পেশায় জড়িয়ে পড়েন। পরে তিনি সাপ্তাহিক জাগ্রত জনতা যোগ দেন। ১৯৭৫ সালে যোগ দেন দৈনিক মিল্লাতে। পরে ১৯৮১ সালে দৈনিক ইনকিলাবে যোগ দিয়ে এখনও এই পত্রিকার সাথেই আছেন।
স্মৃতি রোমন্থন করে মিন্টু বলেন, সাংবদিকতার গুরুদায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমার দীর্ঘ সময়ের সাংবাদিকতায় বহুবার হুমকি ধমকীর সম্মুখীন হয়েছি। ১৯৮২ সাল। সারা দেশে এরশাদের সামরিক শাসন চলছে। এই সময় খবর পেলাম নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কুড়িপাড়ায় বাংলাদেশ ক্যামিকেল ইন্ডাস্ট্রীজ কর্পোরেশনের স্টার পার্টেক্স স্বাধীনতার পর থেকে আমদানী নিষিদ্দ ডেলড্রীন সরবরাহের বদলে স্বাধীনতার পূর্বে ব্যবহার করা খালি ড্রাম সমুহের ভিতর শীতলক্ষ্যার পানি ভর্তি করে গুদামে রাখা হয়। উল্লেখ যে, ডেলড্রীন তৈরী হয় এক মামত্র ওয়েষ্ট জার্মানে তাই কথা ছিল দেশীয় কিট নাশক ডায়াজিন সরবরাহের কথা এই সংবাদ তখন দৈনিক মিল্লাতে প্রকাশ করা হলে কর্পোশনের নির্বাহী পরিচালক তার লোকজনদিয়ে আমাকে মেরে ফেলার একাধিকবার চেষ্টা করা হয়।
১৯৯৬ সালে নারায়ণগঞ্জের শহীদ নগরে নারী পাচার শিশু পাচার বিষয়ে দৈনিক ইনকিলাবও সাপ্তাহিক পূর্ণিমাতে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করায় এই জঘন্য কাজের সাথে জড়িতরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। চলতে থাকে একাধিক হুমকি ধামকি । এতেও আমার লেখা বন্ধ না হওয়ায়
জনৈক সি আইডি কর্মকর্তার হাতে মোটা অংকের টাকা দিয়ে আমার লেখালেখি বন্ধ করার জন্য প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করে। এতেও আমি প্রতিবেদন লেখা বন্ধ না করায় আমার প্রাণ নাশের জন্য গভীর রাতে আমার বাসায় হামলা করে। বাসার গেট ও ঘরের দরজা ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে পিস্তল দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করে। এই সময় হামলাকারিরা আমার কাছে থাকা নারী ও শিশু পাচারের তথ্য ফাইল ছিনিয়ে নেয়। এই সময় হামলাকারিরা বলে যায় এরপরও বেশি বাড়াবাড়ি করলে জীবনে মেরে ফেলবে। এই ঘটনার পর নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় মামলা করা হয়। এই মামলায় তিন জনের যাবজ্জীবন সাজা হয়। কিন্ত দু তিন বছরের মধ্যে সবার জামিন হয়ে যায়। এদিকে আমার উপর হামলার পর পরই দুবাই ও বাংলাদেশে শিশু পাচার নারী পাচার রোধে আইন পাশ করা হয় এবং উটের জকিতে বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত শিশুদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জসহ অন্যান্য জেলার ১৮ জন শিশুকে উদ্ধার করে আনা হয় এবং উদ্ধার করা এই শিশুদের তাদের মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়।