প্রতীকী ছবি
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্ব-স্ব অবস্থান থেকে নিজেদের জানান দিতে এরই মধ্যে শক্তি পরীক্ষায় নেমেছে রাজনৈতিক দলগুলো।
তারই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সারা দেশে নয়টি বিভাগীয় গণসমাবেশ ইতোমধ্যে শেষ করেছে। আগামী ১০ ডিসেম্বর সর্বশেষ ঢাকায় বিভাগীয় গণসমাবেশ করবে দলটি।
এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে শর্তসাপেক্ষে বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমোদন দেওয়া হলেও তাতে নারাজ দলটি। পূর্বঘোষিত স্থান নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই এই গণসমাবেশ করতে চাইছে তারা। এই দাবিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
বৈঠকে সমাবেশের স্থানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত না হলেও কিছুটা নমনীয় অবস্থান জানিয়েছেন নেতারা। বলছেন, নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশে যে কোনো স্থানে অনুমতি পেলেই তারা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবেন। বিকল্প ভেন্যুর যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তাতে এটা স্পষ্ট যে, নয়া পল্টনে সমাবেশের করার বিষয়ে কট্টর অবস্থান থেকে সরে এসেছেন তাঁর। এর আগে বিএনপি নেতারা নয়াপল্টনেই সমাবেশ করার ব্যাপারে অনমনীয় ভাব প্রকাশ করে আসছিলেন। আর সরকারের তরফ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কথা বারবার বলা হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও তুরাগ নদীর তীর ছাড়া বিএনপির গণসমাবেশের জন্য পুলিশ বিকল্প প্রস্তাব দিলে বিএনপি বিবেচনা করবে। ওই সমাবেশকে ঘিরে আওয়ামী লীগকে ভীত-সন্ত্রস্ত মনে হলেও, কার্যত শান্তিপূর্ণ পথেই হাঁটতে চায় বিএনপি।
এর আগে, গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রাম থেকে শুরু হয় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ। এরপর ২২ অক্টোবর খুলনায়, ২৯ অক্টোবর রংপুরে, ৫ নভেম্বর বরিশালে, ১২ নভেম্বর ফরিদপুরে, ১৯ নভেম্বর সিলেটে, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লায় এবং ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে গণসমাবেশ করেছে তারা।
আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিভাগীয় গণসমাবেশের ভেন্যু নিয়ে পুলিশের সঙ্গে আলোচনা বসে বিএনপি। এ বিষয়ে আলোচনা করতে পুলিশও সম্মত হয়েছে বলে জানা গেছে। গত রোববার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তার অফিসে যায় বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল।
আলোচনা শেষে বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা দেশের বিভাগীয় শহরে ৯টি সমাবেশ করেছি। কোথাও কোনো ঝামেলা হয়নি, ঢাকাতেও হবে না।
তিনি বলেন, আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি নয়াপল্টনে সমাবেশ করব। এনিয়ে পুলিশের সঙ্গে আমাদের একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। এরমধ্যে পুলিশ আমাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়ে চিঠি দিয়েছে। ভেন্যুর বিষয়ে আরও আলোচনা হবে। সোমবার (৫ ডিসেম্বর) থেকেও এই আলোচনা চলতে পারে, তারপরই ঠিক হবে ভেন্যু।
আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিভাগীয় গণ সমাবেশের ভেন্যু নিয়ে বিএনপি-পুলিশ এখনো মতৈক্যে পৌঁছাতে পারেনি। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পুলিশের অনুমতি ও বিএনপি আপত্তির মুখে চলছে নানা আলোচনা। বিএনপির প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে তাদের প্রতিনিধিকে সঙ্গে নিয়ে সম্ভাব্য ভেন্যুর জন্য একাধিক এলাকা ঘুরে দেখবে পুলিশ।
এর পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির প্রতিনিধি দলটিকে ডিএমপি জানায়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি দলটি যদি অন্য কোনো স্থানের সন্ধান পায়, আর সে বিষয়ে তারা প্রস্তাব দিলে বিবেচনা করা হতে পারে। ডিএমপি বিবেচনা করবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে আরও নিরাপদ কোনো ভেন্যু আছে কিনা।
ডিএমপি আরও জানিয়েছে, তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে কারণ, তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে ওই স্থানটি সবচেয়ে নিরাপদ। তারা বিএনপিকে অনুরোধ করেছে ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করার জন্য। ওই সমাবেশকে কেন্দ্র করে যত ধরনের নিরাপত্তা সহযোগিতা করার দরকার, সেই পদক্ষেপ তারা নেবে।
ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও প্রেস উইংয়ের সদস্য সচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি হিসেবে আমরা ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে করার অনুমেদন চেয়েছিলাম। তার পরিবর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা চাই নয়াপল্টন বা এর আশেপাশে করতে। এনিয়ে অলোচনা চলছে, আশাকরি দ্রুতই এর সমাধান হবে।