শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

|

বৈশাখ ৫ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

মেয়রের বাড়ির কাছে মাদকের হাট!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ২৩:৩৯, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

মেয়রের বাড়ির কাছে মাদকের হাট!

প্রতীকী ছবি

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার রামচন্দ্রদী দক্ষিণপাড়া গ্রামে সন্ধ্যার পর থেকেই বসে মাদকের হাট। হাটে শাক-সবজি বিক্রির কৌশলেই মাদক কারবারিরা রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। কয়েকগজ পর পর দু’তিনজন মাদক বিক্রেতার অবস্থান।  যুবক, কিশোর থেকে শুরু করে নারী বিক্রেতা পর্যন্ত রাস্তায় নেমে আসে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার পর রাত যতই রাড়তে থাকে নিজেদের ডেরা (আস্তানা) থেকে বেরিয়ে আসে মাদক বিক্রেতারা। সবাই মূলত: ইয়াবার কারবারি। স্থানীয়দের ভাষায় ইয়াবাকে ‘বড়ি’ বলা হয়। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন আকার ইঙ্গিতে বলে বাতের বড়ি লাগবোনি।  কেউ বলে দাঁত ব্যথার বড়ি আছে। জ্বর-ঠান্ডা কাশির বড়ি লাগবোনি। মাদক বিক্রেতারা প্রকাশ্যেই দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণপাড়ায় মাদক বিক্রি করে যাচ্ছে। স্থানীয় গ্রামবাসী অনেক প্রতিবাদ করেও গ্রাম্য জনপদের অভিনব মাদকের হাট বন্ধ করতে পারেনি।

রামচন্দ্রদী দক্ষিণপাড়া গ্রামবাসীর অভিযোগ, এই গ্রামেই গোপালদী পৌরসভার মেয়র এমএ হালিম সিকদারের বাড়ি। তাঁর বাড়ির একশ গজের মধ্যেই প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত বসে মাদকের হাট। অনেকে কটাক্ষ করে ‘বড়ির হাট’ বলে থাকে।  মেয়র চাইলেই এই মাদকের হাট চিরতরে বন্ধ হবে। নচেৎ নয়। মাদক বিক্রেতারা অনেকেই সিকদার বংশের আত্মীয় স্বজন বলে প্রভাব দেখায়। মেয়র হালিম সিকদার মাদকের হাটের বিষয়ে কখনোই জোরালো পদক্ষেপ নেয় না। তার ভূমিকা বরাবরই রহস্যজনক ঠেকে সবার কাছে।

গ্রামবাসী সুত্রে জানাগেছে, গোপালদী পৌরসভার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিল্প এলাকা হচ্ছে রামচন্দ্রদী। রামচন্দ্রদী দক্ষিণপাড়া ও আশপাশে অসংখ্য পাওয়ারলুম কারখানায় বিপুল পরিমান শ্রমিকের বসবাস। দক্ষিণপাড়ায় কমপক্ষে ১২ টি মাদকের স্পট। সে সব স্পটে সন্ধ্যার পর থেকেই মাদক বিক্রি শুরু হয়। ১২টি মাদক স্পটের মধ্যে ৭টি স্পট মেয়র এমএ হালিম সিকদারের বাড়ির একশ গজের মধ্যেই অবস্থিত। তবুও মেয়র ব্যবস্থা নেয় না। ১২টি স্পটের মধ্যে ২টি স্পটে বিক্রি হয় দেশীয় চোলাই মদ।

মাদক কারবারি যারা :
গ্রামবাসী ও মাদক কারবারিদের একাধিক  সূত্র থেকে জানা যায়, রামচন্দ্রদী দক্ষিণপাড়া এলাকার মাদক বিক্রেতারা হলো, সাত্তার, হাছিনা (স্বামী মৃত ইব্রাহিম), রহমত উল্লাহ পিতা মৃত জামাল, মুছা পিতা মৃত করিম, রুবেল পিতা মৃত বসু সিকদার, আকাশ পিতা মৃত আলাল, মুজাফফর পিতা মঙ্গল মেম্বার, আমির পিতা মৃত নুরু, নবী হোসেন পিতা মৃত ছানু মিয়া, হাবি পিতা মৃত ছাদু, শফি পিতা মৃত নুরু, জামাল পিতা মৃত মালু মিয়া।

গোপালদী রামচন্দ্রদী দক্ষিণপাড়ায় কুখ্যাত মাদক স¤্রাজ্ঞী হিসেবে পরিচিত হাছিনা ও সাত্তার চোলাই মদ বিক্রি করে। হাছিনার ছেলে মহসিন কয়েকদিন আগে চোলাইমদসহ পুলিশের কাছে  গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগ করছে। মহসীন পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিতে বলেছে সিকদার বংশের প্রভাবশালী কয়েকজন নিয়মিত দেশী মদ নিয়ে যায়। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গোপালদী তদন্তকেন্দ্রের ইন্সপেক্টর ফজলুল হক খান বলেন, আমরা নিয়মিত পুলিশী অভিযান চালাচ্ছি। বুধবার মহসীন নামে একজনকে চোলাইমদ সহকারে আটক করেছি। স্থানীয় লোকজন মাদকের ব্যাপারে সোচ্চার না হলে পুলিশের পক্ষে একা অনেক ক্ষেত্রে মাদক পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব পর হয় না।

এ ব্যপারে গোপালদী পৌর মেয়র এম এ হালিম সিকদার মাদকের ব বলেন, ‘আমি মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছি। আমার এলাকায় কোন মাদক বিক্রেতার ঠাঁই নেই’। প্রশাসনকে কঠোর হস্তে মাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য দাবী জানাচ্ছি। এতে তিনি যেকোন সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছেন।