ফাইল ছবি
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১০ নং ওয়ার্ডের শতবর্ষী নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের অভ্যন্তরে অবস্থিত দুর্গা মন্দির দখলমুক্ত করার দাবিতে সোমবার ৭ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে স্মারকলিপি দিয়েছেন নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলস দুর্গা মন্দির পরিচালনা কমিটি। নির্বিঘেœ মন্দিরে পূজা-অর্চনার প্রয়োজনে আসন্ন দুর্গাপূজার আগেই লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলর্স দূর্গা মন্দিরের জমি সংক্রান্ত সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান করার দাবি জানিয়েছেন তারা। স্মারকলিপি প্রদানকালে নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলস দুর্গা মন্দির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বকুল বিশ^াস ও সাধারণ সম্পাদক তরুন বেগীসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, শর্তবর্ষী পুরাতন নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলস্ দূর্গামন্দির, পুকুর ও মাঠ ২০১২ সাল থেকে শিল্প প্রতিষ্ঠান নীট কনর্সান গ্রুপ জোর-জবরদস্তি দখলের পায়তারা করে আসছে। ঐতিহাসিক এই মন্দিরে ৮২ বছরের বেশি সময় ধরে ভক্তবৃন্দ ও শেয়ারহোল্ডারগণ নির্বিঘেœ নিয়মিত পূজা-অর্চনা করলেও সাবেক সংসদ সদস্য নাসিম ওসমান, শামীম ওসমান এবং শামসুদ্দিন প্রধান নেতৃত্বাধীন পরিচালনা পর্ষদের যোগসাজসে অবৈধভাবে মিলটি দখলে নেওয়ার পর থেকে মন্দির প্রাঙ্গনে সনাতনী ভক্তবৃন্দের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে পূজা-অর্চনাসহ সকল ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান বন্ধ করে রেখেছে। তারই ধারাবাহিকতায় বিগত ২০২৩ সালের ১৭ জুন প্রার্থনার স্থানটির স্মৃতি চিহ্ন গুড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে বুলডোজার দিয়ে ভাংচুর স্থাপনা গুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। পরে সনাতনী ভক্তবৃন্দ প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকা ব্যায়ে মন্দির সংস্কার করে ও এসময় তৎকালীন পুলিশ সুপার উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে মন্দিরের জমি ৪ বিঘার পরিবর্তে ১ বিঘা বুঝিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় এবং জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে দুর্গাপূজার আয়োজন করতে সক্ষম হয় ভক্তবৃন্দ। তবে দশমী অন্তে মন্দিরের ১ বিঘা জায়গা দখলমুক্ত করে লক্ষ্মীনারায়ন কটন মিলস্ দুর্গা মন্দির কমিটির কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিলেও নীট কনসার্ন গ্রুপের অদৃশ্য প্রভাবে সকল পক্রিয়া আটকে যায়। পরবর্তীদের সমাধান চেয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ও সাবেক পুলিশ সুপারের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও এ ব্যাপারে কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি। বরং অত্যন্ত দু:খজনক হলেও সত্যি এবারও পূজার ঠিক আগমূহুর্তে আবারও দুষ্কৃতিকারীরা মন্দিরের স্মৃতি চিহ্ন গুড়িয়ে দিতে মন্দির ভাঙ্গচুর করেছে। পাশাপাশি নীট কনসার্ন গ্রুপ মন্দিরে ভক্তবৃন্দের প্রবেশাধিকার বন্ধ করে মন্দির প্রাঙ্গনে বহিরাগতদের নিয়ে খেলাধুলার নাম দিয়ে মন্দিরের জায়গা দখলের ষড়যন্ত্র করছে। যা ইতিপূর্বেই সংশ্লিষ্ট থানাকে বহুবার অবগত করা হয়েছে। যেহেতু দুষ্কৃতিকারীরা মন্দিরের স্মৃতি চিহ্ন নষ্ট করতে বারবার মন্দির হামলা-ভাংচুর করছে। এতে মন্দিরের চরম নিরাপত্তা ঝুঁকির তৈরি হয়েছে। এবার যেহেতু গত বছরের সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রতিমা বিসর্জন হবে না, বিগ্রহ মন্দিরেই থাকবে এ অবস্থায় দুষ্কৃতিকারীরা মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাংচুরের হুমকি রয়েছে। এছাড়া দুর্গাপূজা অন্তে আবারও নীট কনসার্ন গ্রুপ তার সন্ত্রাসীদের দ্বারা মন্দিরে ভক্তবৃন্দের প্রবেশাধিকার বন্ধ করে মন্দির ভাংচুর, পূজা-অর্চনা বন্ধ রাখা এবং মন্দির দখলের আশঙ্কা রয়েছে। তাই দুষ্কৃতিকারীদের হাত থেকে মন্দির রক্ষা এবং নির্বিঘেœ মন্দিরে পূজা-অর্চনার প্রয়োজনে আসন্ন দুর্গাপূজার আগেই লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলর্স দূর্গা মন্দিরের জমি সংক্রান্ত সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান প্রয়োজন।
উল্লেখ্য গত ২৬ সেপ্টেম্বর শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত পৃথক সভাতেও নিউ লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলসের দুর্গা মন্দির ভেঙ্গে ফেলার অভিযোগ করেন নেতৃবৃন্দ। পরে গত ২৭ সেপ্টেম্বর সরেজমিনে পরিদর্শন করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোঃ মাহমুদুল হক ও পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার। এসময় তাদের সঙ্গে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখণ সরকার শিপন, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক প্রদীপ কুমার দাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।