বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

|

বৈশাখ ১১ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

সিদ্ধিরগঞ্জে গ্রেপ্তারের আতংকে বাড়ি ছাড়া বিএনপির নেতাকর্মীরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ৮ ডিসেম্বর ২০২২

সিদ্ধিরগঞ্জে গ্রেপ্তারের আতংকে বাড়ি ছাড়া বিএনপির নেতাকর্মীরা

প্রতীকী ছবি

আগামী ১০ই ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে বেশ কিছুদিন যাবত রাজনৈতিক মাঠ উত্তপ্ত রেখেছিলেন বিএনপির নেতা কর্মীরা। এরইমধ্যে  ঘটে যায় পুলিশের উপর ককটেল নিক্ষেপ ও মহাসড়কে আগুন দেওয়ার মতো দুটি ঘটনা।

এই ঘটনার পর পুলিশ বাদী হয়ে বিএনপি, জামায়াত ও গনঅধিকার পরিষদের ৯৫ জন নেতাকর্মীকে আসামি করে দুটি মামলা দায়ের করা হয় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায়। এরপর থেকে শুরু হয় পুলিশের গ্রেপ্ত্রারী অভিযান।

কয়েক দিন ধরে চলছে পুলিশের ধরপাকড় অভিযান । তাই গ্রেপ্তারের আতঙ্কে ভুগছেন বিএনপির নেতা কর্মীরা। গ্রেপ্তারের ভয়ে এদলের বেশিরভাগ নেতা-কর্মী রাতে নিজের বাসায় থাকছেন না। 

এছাড়া মামলার বাহিরে থাকা কিছু সিনিয়র নেতাদের দিনের বেলা চখে পড়লেও রাত বাড়লে তাঁরা নিজেদের সুবিধামতো জায়গায় চলে যাচ্ছেন।

দলের নেতারা মনে করছেন, পুলিশ বিএনপিকে মাঠ থেকে উঠিয়ে দিতে অভিযান চালাচ্ছে। তবে পুলিশ বলছে, কোনো নির্দিষ্ট দলের নয়, যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে শুধুমাত্র তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

এদিকে পুলিশের বিশেষ এই অভিযান শুধু বিএনপির নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে পরিচালনা করছে বলে অভিযোগ করছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। যাঁদের নামে কোনো মামলা নেই তাদেরকেও ধরে নিয়ে গিয়ে আগের নাশকতার ও ছোটখাটো মামলার অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে।

পুলিশের দায়ের করা এসব মামলা গুলো সম্পূর্ণ গায়েবী। আগামী ১০ ডিসেম্বরকে সামনে রেখে গায়েবী ভাবে এসব মামলা উপস্থাপন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন এদলের নেতারা।

তাছাড়া গত বৃহস্পতিবার (০১ ডিসেম্বর) রাতে নারায়ণগঞ্জ-০৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বর্তমান জেলা বিএনপির  আহবায়ক গিয়াস উদ্দিনের বাসায় রাত ১ টার দিকে ডিপি পুলিশ অভিযান পরিচালনা করেন। এমন একটি সিসি টিভির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যে চোখে পড়ে। 

অন্যদিকে পুলিশের দায়ের করা  মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের ধারাবাহিকতার বিশেষ অভিযানে গত পাঁচ দিনে ১৪ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। যাদের মধ্যে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক মামুন মাহমুদের ড্রাইভার ও সহকারী সহ বিএনপ ও গনঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা।

গত শনিবার (২৬ নভেম্বর) রাতে মিজমিজি সিআই খোলা এলাকায় ১০ই ডিসেম্বর  নাশকতার পরিকল্পনায় বিএনপির নেতাকর্মীদের গোপন মিটিং সংবাদের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। সেখানে থাকা অভিযুক্তরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তাদের উপর ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। পরে পুলিশ কর্মকর্তারা নিজেদের আত্মরক্ষায় পাল্টা ১১ রাউন্ড গুলি ছুড়লে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে অভিযুক্তরা। তারা পালিয়ে গেলে পুলিশ সেখান থেকে ৪টি অবিস্ফোরিত ককটেল ও একটি বিস্ফোরিত ককটেলের আলামত উদ্ধার করে। পরেরদিন (২৭ নভেম্বর) পুলিশের ওপর ককটেল নিক্ষেপের অভিযোগে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সানোয়ার হোসেন বাদী হয়ে বিএনপির ৩৯ জন নেতাকর্মীদের নামে একটি মামলা দায়ের করে।

এরপর গেল বুধবার (৩০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মৌচাক এবং মাদানীনগর এলাকার মধ্যবর্তী স্থানে কিছুসংখ্যক নেতাকর্মী মশাল মিছিল নিয়ে ককটেল বিস্ফোরণ ও রাস্তায় অগ্নিসংযোগ করলে। পরের দিন বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক দেবাশিষ কুন্ডু বাদী হয়ে বিস্ফোরক আইনে বিএনপি, জামায়াত ইসলাম ও গণঅধিকার পরিষদের ২১ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে এবং আরও ৩৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। 

এদিকে দুটি মামলা দায়ের করার আটদিনের মধ্যে টানা পাঁচ দিনের অভিযানে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

গত বৃহস্পতিবার ( ১ ডিসেম্বর) সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৬জন বিএনপি ও নাগরিক ঐক্যের নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার হওয়া  নেতাকর্মীরা হলেন, নাসিক ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও সাবেক বিএনপির কাউন্সিলর মোঃ দিদার আলম (৬১), নাগরিক ঐক্যের থানার সমন্বয়ক আলী হোসেন ওরফে নূর (৪৮), নাগরিক ঐক্যের মাঠ পর্যায়ের কর্মী সংগ্রাহক মোঃ মেহেদী হাসান রতন (২৮), বিএনপি কর্মী মোঃ সুজন (২৪), মোঃ রুবেল (২৫) ও মোঃ রবিউল হাসান (২৮)।

এর পর (২ ডিসেম্বর) রাতে সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাংরোড থেকে নারায়ণগঞ্জ ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন জেলা বিএনপির প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক মামুন মাহমুদের ব্যক্তিগত সহকারী, গাড়িচালকসহ ৩ জন। এবং কুতুবপুর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড যুবদলের সহ-সভাপতিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদেরকে রাতেই সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের হাতে হস্তান্তর করে ডিবি। 

গ্রেপ্তারকৃতদের নাম হলো, মোঃ মহসিন, গাড়ী চালক জুয়েল আহম্মেদ ও কর্মী মোঃ লিটন ও ইমরান হোসেন বাবু(৩৫)।

অভিযানের ধারাবাহিকতায় (৩ ডিসেম্বর ) দিবারাত্রি অভিযান চালিয়ে আরও ৩ জনকে  গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন, সিদ্ধিরগঞ্জ গোদনাইল এলাকার বাসিন্দা মৃত আব্দুল মালেক ভুইঁয়ার ছেলে সাবেক থানা শ্রমিক দলের সহ-সভাপতি মোঃ রাজিব ভুঁইয়া (৩৪), নাসিক ৮নং ওয়ার্ড বিএনপির সক্রিয় সদস্য মৃত ওসমান গনি মাস্টারের ছেলে মোঃ কাজী গোলাম কাদির (৫২) এবং ৪ নং ওয়ার্ড বিএনপির সক্রিয় সদস্য আঃ হকের ছেলে  মোঃ সোহেল (৫০)।

সর্বশেষ রবিবার (৪ ডিসেম্বর) অভিযান চালিয়ে  নাসিক ৯ নং ওয়ার্ড জালকুড়ি দক্ষিণ পাড়া এলাকার বিএনপির সক্রিয় সদস্য মৃত রসূল বক্সের ছেলে জামান বক্স (৩৬) কে গ্রেপ্তার করেন পুলিশ। 

এবিষয়ে নারায়ণগঞ্জ- ০৪ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির আহবায়ক গিয়াস উদ্দিন বলেন, 'নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক হিসেবে কে কোথায় কোন কর্মসূচী পালন করবে তা আমি জেনে রাখি এবং আমাকে জানানো হয়। পুলিশের উপর ককটেল বিষ্ফোরনের যেসব অভিযোগ আনা হচ্ছে এগুলো সব বানানো। 

আমাদের দল বা অঙ্গ সংগঠনের কোন নেতাকর্মী কোন ধরণের মিছিল বের করেনি। এসব মামলা আগামী ১০ ডিসেম্বরকে সামনে রেখে গায়েবী ভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। যেসব ঘটনা কেউ দেখেনি, কেউ জানেনা অথচ পুলিশ সবই জানে। 

তিনি আরো বলেন, আমি পুলিশকে অনুরোধ করবো তারা যেন কোন দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব না করে।