ফাইল ছবি
জামায়াত ও বিএনপি’র সঙ্গে আতাঁতকারী নেতার কবল থেকে মুক্তি চায় ১৮নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ। দীর্ঘদিন ধরে ১৮নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগে নেতৃত্ব দিয়ে আসলেও জামায়াত ও বিএনপির সঙ্গে আতাঁতের অভিযোগ রয়েছে ১৮নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক কাউন্সিলর কবির হোসাইনের বিরুদ্ধে। বিগত দিনে তার সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ছাড়াও ঘরোয়া বৈঠকেও জামায়াত ও বিএনপির অনেক নেতার সরব উপস্থিতি দেখা গেছে। অথচ সেসব অনুষ্ঠানে আওয়ামীলীগের কোন নেতাকর্মীরা দাওয়াত পেত না। বিগত দিনে ১৮নং ওয়ার্ডে তার নেতৃত্বে কখনো ওয়ার্ড কমিটি পরিচিতি সভা ও কার্যকরী কমিটির সভা করেনি। এমনকি কেন্দ্র ঘোষিত দলীয় কর্মসূচীতেও তার দেখা মিলতোনা। এছাড়াও বিগত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনেও আওয়ামীলীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর নির্বাচনী কেন্দ্রেও জামায়াত ও বিএনপি’র দুই নেতার নাম অর্ন্তভুক্ত করার অভিযোগ ছিল সাবেক কাউন্সিলর কবির হোসাইনের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যে তাকে ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ থেকে বাদ দেয়ার দাবিতে মিছিল সমাবেশও করেছে স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতারা।
জানা গেছে, আজ শনিবার ২৮ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের অধীনস্থ ১৮নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ২০০৪ সালে শহর আওয়ামী লীগ থাকা সময় ১৮নং ওয়ার্ডে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহার স্বাক্ষরিত ওই ওয়ার্ড কমিটি অনুমোদন করা হয়। ওই সম্মেলনে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহবায়ক ও সাবেক এমপি এস এম আকরাম, নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান ও শহর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি সেলিনা হায়াৎ আইভী। কমিটি হওয়া পর অদ্যাবধি কে কোন পদে আছে জানেনা নেতাকর্মীরা। এমনকি সভাপতি শরফুদ্দিন রবি ও সাধারণ সম্পাদক কবির হোসাইন কখনো ওয়ার্ড কমিটি পরিচিতি সভা ও কার্যকরী কমিটির সভা করেনি। তাঁরা কখনো দলীয় কোন প্রোগ্রাম করেনি। তাঁরা জাতীয় সংসদ নির্বাচন এলে গুটি ২-৩ জন এদিক ওদিক ছোটাছুটি করত। ওয়ার্ড সভাপতি শরফুদ্দিন রবি মারা গেছে প্রায় ১ বছর। নেতাকর্মীরা দুই সপ্তাহ আগেও কবির হোসাইনের কাছে কার্যকরী কমিটির তালিকাও চেয়েও পায়নি।
গত ২০ জানুয়ারী সম্মেলনকে স্বাগত জানিয়ে চার প্রার্থীর নেতৃত্বে মিছিল করেছে নেতৃবৃন্দ। এ সময় জামায়াত-বিএনপি মুক্ত ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কমিটি গঠনে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তাঁরা। ১৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী বঙ্গবন্ধুর সহচর প্রয়াত আওয়ামী লীগের সদস্য তসাদ্দক হোসেনের ছেলে ১৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য জাকির হোসেন, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম আজাদ, মহানগর যুবলীগের সহ সভাপতি আমিনুর রহমান ও ১৮নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক নেতা আবুল আহসানের নেতৃত্বে বিশাল মিছিল ওয়ার্ডের প্রতিটি এলাকা প্রদক্ষিণ করে। এ সময় মিছিলকারীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এমপি শামীম ওসমান, আনোয়ার হোসেন ও খোকন সাহার নামে স্লোগান দেয়।
সেসময় মিছিল শেষে সভাপতি প্রার্থী জাকির হোসেন বলেন, আমরা এতদিন ধৈর্য্য ধরেছি। আমাদের ধৈর্য্যরে বাঁধ ভাঙ্গবেন না, জামায়াত-বিএনপির উত্তরসূরি মুক্ত করবো ১৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কমিটি।
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সেলিম আজাদ বলেন, ২০০৩ সাল থেকে এই ওয়ার্ডে যারা কমিটির নেতা হয়েছে, ১৯ বছরে এখনো তাঁরা আওয়ামী লীগের কর্মীদের সাথে সমন্বয় গড়ে তুলতে পারে নাই। তাঁরা উল্টো জামায়াত-শিবির-বিএনপিকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে জামায়াত-শিবিরদেরকে আমাদের পিছনে লেলিয়ে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের দুর্গকে তছনছ করার জন্য ষড়যন্ত্র লিপ্ত হয়েছে। এই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগে নোংরা রাজনীতি মুক্ত রাখতে আমরা সবাই একত্রে হয়েছি। এই ওয়ার্ড কমিটিকে জামায়াত-বিএনপি মুক্ত কমিটি হিসেবে গড়ে তুলতে পারবো। ১৯ বছরের আওয়ামী লীগে দায়িত্ব থাকা নেতারা ভুল কার্যক্রমের কারণে আমরা সকলে অবহেলিত হয়েছি। এ ধারাবাহিকতা আর চলতে দেয়া হবে না।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৮নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক কাউন্সিলর কবির হোসাইনের বিরুদ্ধে জামায়াত ও বিএনপির নেতাদের সঙ্গে আতাঁতের রাজনীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের দ্বিতীয় নির্বাচনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হলেও কবির হোসাইন ১৮নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগকে সুসংগঠিত করার বদলে জামায়াত ও বিএনপি নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা বজায় রেখে চলেছেন। কবির হোসাইনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আওয়ামীলীগ নেতাদের দেখা না মিললেও শহীদ নগরের বাসিন্দা সাবেক শিবির নেতা বর্তমানে জামায়ত নেতা ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন ও জামায়াত নেতা আদর্শ স্কুলের শিক্ষক মুসলিম উদ্দিনসহ স্থানীয় জামায়াত শিবিরের অনেক নেতাকর্মীর দেখা মিলতো। এছাড়াও ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন দেওয়ানের বড় ভাই বিএনপি নেতা তোফাজ্জল হোসেন টিয়াকেও তার সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা যেতো। এছাড়া জামায়াত ও বিএনপি নেতাদের অনেক ঘরোয়া বৈঠকেও কবির হোসাইনকে দেখা যেতো বলে অভিযোগ রয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ কবির হোসেন আশির দশকে তৎকালীন জাতীয় পার্টির চীফ হুইপ সাত্তারের হাত ধরে কিছুদিন জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। পরে টাইগার ফারুকের সঙ্গে মিলে বেশ কিছু বিএনপির রাজনীতিতে থিতু হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। পরে ৯৬ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পরে আওয়ামীলীগে থিতু গন। ২০০১ সালে বিএনপি জামায়াতের নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসলে সুযোগ বুঝে ২০০৪ সালে ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের শীর্ষ পদে আসীন হন কবির হোসাইন। তবে এই দীর্ঘ দেড় যুগে ওয়ার্ড আওয়ামীলীগকে শক্তিশালী করতে তাকে কোন ধরনের পদক্ষেপ নিতে দেখেনি নেতাকর্মীরা। এমনকি ৫ বছর সে ওয়ার্ডের সর্বেসর্বা থাকলেও আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা তার কাছে উপেক্ষিত ছিল। বরং সর্বশেষ ২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তৃতীয় নির্বাচনের পূর্বে আওয়ামীলীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর যে কেন্দ্র কমিটি গঠন করা হয়েছিল সেখানে ১৮নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক কাউন্সিলর কবির হোসাইন ওই কমিটির তালিকায় বিএনপি ও জামায়াতের দুই নেতার নাম ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। পরে গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা এলাকায় অনুসন্ধানের পরে বিষয়টির সত্যতা পেলে তৎকালে মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর মিডিয়া সেলের ১৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম জহিরের মাধ্যমে বিষয়টি অবগত হন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। পরে ওই কেন্দ্র কমিটি থেকে বিএনপি ও জামায়াত নেতার নাম বাদ দেয়া হয়। দলীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ নাসিক মেয়র ডা. আইভীকে বিতর্কিত করার উদ্দেশ্যেই কবির হোসাইন এহেন ন্যাক্কারজনক কাজ করেছেন। আর এতেই প্রমাণিত হয় যে ১৮নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক কাউন্সিলর কবির হোসাইনের সঙ্গে জামায়াত ও বিএনপি নেতাদের মধ্যে গভীর সখ্যতা রয়েছে। যে কারণে শনিবার অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ১৮নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ থেকে কবির হোসাইনকে বাদ দেয়ার জোর দাবি উঠেছে আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে। যদি তাদের এই দাবি বাস্তবায়ন করা না হয় তাহলে ভবিষ্যতে ১৮নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ অস্তিত্ব সঙ্কটে ভুগবে বলে মনে করছেন নেতকর্মীরা। এ বিষয়ে মহানগর আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের সহ কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন নেতাকর্মীরা।