ফাইল ছবি
নারায়ণগঞ্জে হাসিনা সরকারের শেষের দুই বছরে সরকার বিরোধী আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। একের পর এক চমক দেখিয়ে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের ক্ষমতাধর তকমা পাওয়া নেতাদেরও সেসময় 'টেনশনে' ফেলে দিয়েছিল বিএনপি। আর এর নেপথ্যে ছিলে জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন।
ঢাকার সবচেয়ে কাছের জেলা হওয়ায় আন্দোলন সংগ্রামে বরাবরই বাড়তি দায়িত্ব থাকত নারায়ণগঞ্জ বিএনপির। সেই দায়িত্ব অত্যান্ত সুনিপুণভাবে পালন করেছেন গিয়াসউদ্দিন। জেলাজুড়ে দলকে সুসংগঠিত করে দাঁড় করিয়েছিলেন গিয়াস।
২০০৯ সালের পর দীর্ঘদিন রাজনীতি থেকে অনেকটা দূরেই ছিলেন গিয়াসউদ্দিন। তবে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি হয়নি গিয়াসের। নিয়মিত দলীয় নেতাকর্মীদের খোঁজ খবর নিতেন তিনি। কখনও কখনও কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতেন। তবে পুরোদমে সক্রিয় না থাকলেও গিয়াসের ওপর ক্ষমতাসীনদের নির্যাতনের অন্ত ছিল না। একের পর এক মামলায় জর্জরিত হতে থাকেন গিয়াসউদ্দিন। জেল খেটেছেন একাধিকবার।
২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর গিয়াসউদ্দিনকে আহ্বায়ক করে জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর পরেই নারায়ণগঞ্জ বিএনপির চেহারা পাল্টে যায়। একের পর এক কর্মসূচিতে নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতাদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ান গিয়াসউদ্দিন। দায়িত্ব নেয়ার কয়েকদিনের মাথায় শহরের খানপুর এলাকা থেকে গিয়াসের নেতৃত্বে পদযাত্রা বের করে জেলা বিএনপি। কয়েক হাজার নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করে এই পদযাত্রায়। বহু বছর পর নারায়ণগঞ্জ শহরে বিএনপির এত বড় জমায়েত দেখেছিল নগরবাসী। এতে শহরজুড়ে আলোচনায় উঠে আসেন গিয়াসউদ্দিন।
এদিন বিএনপির পদযাত্রায় চাষাঢ়াইয় গাড়ি নিয়ে থমকে দাঁড়ান নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান। পরে অবশ্য তিনি নিজে পদযাত্রায় নাশকতা যেন না হয় সেটা দেখতে গিয়েছিলেন বলে দাবী করেন তিনি।
গিয়াসউদ্দিনের নেতৃত্বেই দীর্ঘ ১৪ বছর পর নারায়ণগঞ্জে বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে জেলা বিএনপির সভাপতি নির্বাচিত হন গিয়াসউদ্দিন।
২০২৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর নিজের ও সাবেক এমপি শামীম ওসমানের নির্বাচনী এলাকা ফতুল্লায় মহাসমাবেশ করে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করেন গিয়াসউদ্দিন। সেদিন মহাসমাবেশে অর্ধলক্ষ লোকের সমাগম ঘটেছিল।
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগ পর্যন্ত রাজপথে সক্রিয় ছিলেন গিয়াসউদ্দিন। ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ গুলোতে নিয়মিত হাজার হাজার নেতাকর্মী নিয়ে অংশগ্রহণ করতে দেখা যেত গিয়াসউদ্দিনকে। ২৮ অক্টোবরের পর হরতাল ও অবরোধে গিয়াসউদ্দিনের নির্দেশে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ককে কেন্দ্র করে নিয়মিত বিক্ষোভ মিছিল করেন আন্দোলন চাঙ্গা রাখেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।
নির্বাচন শেষে সরকার গঠনের পর ক্ষমতাসীনদের রোষানলে পড়েন গিয়াসউদ্দিন। ২০২৪ সালের ১২ মে দুর্নীতির মামলায় গিয়াসউদ্দিনকে কারাগারে পাঠানের নির্দেশ দেয় আদালত। পরবর্তীতে হাইকোর্ট থেকে এই মামলায় জামিন পান গিয়াসউদ্দিন।
আন্দোলন সংগ্রামের দীর্ঘ এই পথে কখনও হতাশ দেখা যায়নি গিয়াসউদ্দিনকে। সাধ্যমত চেষ্টা করে গেছেন তিনি। দলের দুঃসময়ে দলের পাশে থেকেছেন, আবার নেতাকর্মীদেরও আগলে রেখেছেন এই নেতা।