মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৫

|

অগ্রাহায়ণ ১৭ ১৪৩২

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

শীর্ষ নেতাদের কণ্ঠে তারেক রহমানের ফেরার ইঙ্গিত

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ২১:০৬, ২ ডিসেম্বর ২০২৫

শীর্ষ নেতাদের কণ্ঠে তারেক রহমানের ফেরার ইঙ্গিত

ফাইল ছবি

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হয়ে গত ২৩ নভেম্বর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। প্রথমে ফুসফুসের সংক্রমণের কারণে তার শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেয়। পরবর্তীতে রোগ ছড়িয়ে পড়ে হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসে। গত ২৭ নভেম্বর থেকে তাকে হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে। সোমবার (১ ডিসেম্বর) রাতে তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটে এবং জানা যায়, তিনি ভেন্টিলেটর সহায়তায় রয়েছেন।

খালেদা জিয়ার এই অবস্থায় তার জ্যেষ্ঠ সন্তান ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরছেন, এমন গুঞ্জন রাজনৈতিক মহলে ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও তার আসার নির্দিষ্ট সময় নিয়ে এখনো স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি। কিন্তু শীর্ষ নেতাদের অনেকেই তার ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের জানান, খুব শিগগিরই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরবেন।

এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পুরনো ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে দেখা যায় তারেক রহমান পরিবারসহ লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে হাঁটছেন। কিন্তু ভিডিওটি চলতি বছরের জুন মাসের। গত মে মাসে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান তার শাশুড়ি বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে দেশে এসেছিলেন। জুনে তিনি লন্ডনে ফেরত যান। সে সময় জুবাইদা রহমানকে স্বাগত জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

এর আগে গত শনিবার বাংলাদেশ সময় সকাল পৌনে ৯টার দিকে তারেক রহমান নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লিখেছিলেন, ‘সংকটকালে মায়ের স্নেহ-স্পর্শ পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা যেকোনো সন্তানের মতো আমারও রয়েছে।’ 

তিনি জানান, দেশে ফেরার বিষয়ে সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ তার নিয়ন্ত্রণে নেই এবং বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় বিস্তারিত বলা সম্ভব নয়। তবে রাজনৈতিক বাস্তবতা অনুমোদিত পর্যায়ে পৌঁছালে তিনি দেশে ফিরবেন; এমন আশার কথাও উল্লেখ করেন।

মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) সকালেও তিনি ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। সকাল সাড়ে ১০টার ওই পোস্টে তারেক রহমান লিখেছেন, ‘দেশবাসীর সম্মিলিত সমর্থনই জিয়া পরিবারের শক্তি ও প্রেরণার উৎস। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য যেভাবে সহযোগিতা ও শুভকামনা জানানো হচ্ছে তার জন্য জিয়া পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ।’

তারেক রহমানের এমন বক্তব্যের পর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম তার ফেরার বিষয়ে জানিয়েছেন, এ ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো বাধা নেই। আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলও বলেন, দেশে ফেরার ক্ষেত্রে তারেক রহমানের কোনো আইনি বাধা নেই, তার নিজের সিদ্ধান্তই যথেষ্ট।

মঙ্গলবার একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া বক্তব্যে তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে বলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার মতো শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের পর তারেক রহমান দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেবেন। পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলে শিগগিরই দেশে ফিরবেন তিনি।

তারেক রহমানের দেশে ফেরায় কোনো বাধা নেই বলে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের অনেক সদস্যই জানিয়েছেন। গত দুদিন ধরে বিষয়টি নিয়ে বেশ সজাগ গণমাধ্যমও। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সোমবারও জানিয়েছেন এ তথ্য। মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপের সময়ও তিনি একই কথা উল্লেখ করেন। গতকাল তিনি বলেছেন, তারেক রহমান দেশে ফিরতে চাইলে একদিনেই ওয়ানটাইম পাস (ট্রাভেল পাস) দেওয়া সম্ভব। আজও একই কথা বলেন। তৌহিদ বলেন, তারেক রহমান চাইলেই তাকে ট্রাভেল পাস ইস্যু করা হবে। কিন্তু তিনি এ পাসের জন্য আবেদন করেননি এমনকি তার ফেরার বিষয়ে সরকারকে কোনো আনুষ্ঠানিক তথ্য দেওয়া হয়নি।

অন্তর্বর্তী সরকার খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকার বলছে, বেগম জিয়ার পরিবারের সিদ্ধান্ত হলে তাকে বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গত দুদিন ধরে তারেক রহমানের ফেরা নিয়ে ব্যাপক আলোচনার পরও বিষয়টি যখন অনেকটা ধোঁয়াশায় ছিল, তখন আজ বিএনপির শীর্ষ নেতাকের বক্তব্যে এটি প্রতীয়মান হয়, সহসাই দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এ বিষয়ে কথা হলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বাংলানিউজকে বলেন, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ এ ব্যাপারে যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটিই দলের চূড়ান্ত অবস্থান। এর বাইরে ভিন্ন কোনো মন্তব্য করার সুযোগ নেই। দুদু নিজেও তারেক রহমানের দেশে ফেরার ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়েছেন। 

তিনি আরও বলেন, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ; তার চিকিৎসা সংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য নিয়মিত জানাচ্ছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। দল থেকে আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হচ্ছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। বাইরে অন্য কারও বক্তব্য প্রচার না করার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক  বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে দল নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দেশ ও জাতিকে তথ্য জানাচ্ছে। এ নিয়ে আলাদা কোনো বক্তব্য আমার নেই। দেশনেত্রী অসুস্থ। আমরা তার জন্য দোয়া করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারছি না। তিনি দেশ ও জাতিকে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়ার আহ্বান জানান। দলের সিনিয়র নেতারা তারেক রহমানের ফেরার বিষয়ে সিনিয়র নেতারাই জানিয়েছেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হওয়ায় তাদের নিয়ে গুঞ্জন থাকাটা স্বাভাবিক। তাছাড়া তারেক রহমান তার ফেসবুক পোস্টে বিষয়গুলো পরিষ্কার করে দেশবাসীকে উদ্বিগ্ন না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তার দেশে ফেরা নিয়েও দলীয়ভাবে আগেই জানানো হয়েছে। 

আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তারেক রহমান। তাকে বিভিন্ন মামলায় জেলেও পাঠানো হয়েছিল। ২০০৮ সালের ওয়ান-ইলেভেনের পর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান এবং এরপর থেকে দেশে ফেরেননি। ২০১২ সালে তিনি যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন এবং এক বছরের মধ্যেই তা গৃহীত হয়। দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির নেতারা অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের মিথ্যা মামলা ও বাধার কারণে তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারছেন না। তবে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর তারেক রহমানের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো নিষ্পত্তি হয় এবং তিনি খালাস পান। কিন্তু তারপরও তারেক রহমান দেশে ফেরেননি। এই আসছেন, এই ফিরছেন না এমন পরিস্থিতিও সৃষ্টি হয়। এখন মায়ের গুরুতর অসুস্থতার পরও কেন তিনি লন্ডনে অবস্থান করছেন এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন ও কৌতূহল ক্রমেই বাড়ছে।