শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

|

বৈশাখ ৫ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

রূপগঞ্জে দুই গ্রুপের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ-গুলি, গুলিবিদ্ধসহ আহত-১৫

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১২ জানুয়ারি ২০২৩

রূপগঞ্জে দুই গ্রুপের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ-গুলি, গুলিবিদ্ধসহ আহত-১৫

প্রতীকী ছবি

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জমি সংক্রান্ত বিরোধ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পুলিশের উপস্থিতিতে দুই গ্রুপের মাঝে দফায় দফায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এসময় উভয়পক্ষের লোকজন সাধারণ মানুষের বাড়িঘর- দোকানপাটে হামলা ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে। 

মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারী) রাত থেকে বুধবার (১১ জানুয়ারী) ভোর ৪ টার পর্যন্ত দুই গ্রুপের মাঝে দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে করে এলাকায় সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এখনও এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন সময় আবারো সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।
     
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, তারাব এলাকার যুবলীগ নেতা আকবর বাদশার সঙ্গে অপর যুবলীগ নেতা মনছুর আলীর এলাকার আধিপত্য বিস্তার ও ১০ শতাংশ জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এ বিরোধকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন আগে আকবর বাদশা গ্রুপ ও মনছুর গ্রুপের মাঝে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে গত এক সপ্তাহ আগে জমির বিষয়টি নিয়ে দুইপক্ষ থানায় মীমাংসার জন্য বসলেও কোন লাভ হয়নি।

মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে তারাব বাজারে আকবর বাদশার ভাই সুমন মোবাইল ফোনে মনছুর আলীকে উদ্দেশ্যে করে গালিগালাজ করছিলো। এসময় মনছুর গালিগালাজ শুনে তাকে গালিগালাজের কারণ জিজ্ঞাসা করেন। এসময় সুমন জানায় সে মনছুরকে কিছুই বলছেনা। এক পর্যায়ে দুজনের মাঝে বাকবিতন্ডা হয়। পরে তারা দুজনেই বাড়ি চলে যান। রাত ১০ টার দিকে মনছুর ও বকুল, শাহীনসহ চনপাড়া বস্তি থেকে সন্ত্রাসী ভাড়া করে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আকবর বাদশার বাড়িঘরে হামলা ভাংচুর চালায়। অপরদিকে, আকবর বাদশা ডেমরা থেকে সন্ত্রাসী ভাড়া করে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মনছুরের বাড়িঘরে হামলা ভাংচুর চালায়। এক পর্যায়ে দুই গ্রুপের লোকজন বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এসময় একপক্ষ আরেক পক্ষকে লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এসময় পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলেও তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে করেনি বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। পরে রাত থেকে দুই গ্রুপের সন্ত্রাসীরা রাতভর এলাকায় দেশীয় অস্ত্রসস্তে সজ্জিত হয়ে রাতভর এলাকায় এক প্রকার তান্ডব চালায়। এসময় তারা নুরু মিয়া, সূজন মিয়া, সারোয়ার, আলী হোসেন, পারভীন, রেজীয়া বেগম, তোতা মিয়াসহ সাধারণ মানুষের শতাধিক দোকানপাট ও বাড়িঘরে হামলা ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ভাংচুর লুটপাট বুধবার ভোর ৪ টা পর্যন্ত চলে। এসময় উভয়পক্ষের আকবর বাদশা, হেনা, জমিলা, আছিফ, আশিক, সেলিনা, শাওন, সাখাওয়াতসহ গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে বলে জানা যায়। এদের মধ্যে সাখাওয়াত নামের একজনকে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানা গেছে। সাখাওয়াতের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের আইসিউতে রাখা হয়েছে।     

এছাড়া অন্যান্য আহতদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সেসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এলাকার ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ অভিযোগ করে বলেন, আমরা এই দুই গ্রুপের কারণে এলাকায় শান্তিমতো থাকতে পারিনা। তারা কয়েকদিন পরপরই মারামারি করে। এতে করে এলাকার সাধারণ মানুষ সবসময় আতঙ্কে থাকেন। এতো সাধারণ মানুষের বাড়িঘর ভাংচুর করেছে তারা এগুলোর ক্ষতিপূরণ কে দিবে। ঘটনা চলাকালীন পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছাঁলেও তারা কোন প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। পুলিশ সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে তারা সাধারণ মানুষের বাড়িঘর দোকানপাট সন্ত্রাসীরা এভাবে ভাঙ্গতে পারতো না।

এ ব্যাপারে আকবর বাদশার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মনছুর, বকুল ও শাহীনসহ তাদের সন্ত্রাসীরা আমার উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে আমাদের কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন। আমিসহ আমার লোকজন আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতারে ভর্তি আছি।

এ ব্যপারে মনছুরের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আকবর বাদশা ও তার লোকজন আমার বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে আমার স্ত্রীসহ আমার পরিবারের লোকজনের উপর হামলা চালিয়ে তাদেরকে আহত করেন।

এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) আতাউর রহমান বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া এসব তান্ডবের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।