শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

|

বৈশাখ ৫ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

কোন প্রক্রিয়ায় নারায়ণগঞ্জের কমিটি, প্রশ্ন মহাসচিবের!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১৯:২৩, ২ অক্টোবর ২০২২

কোন প্রক্রিয়ায় নারায়ণগঞ্জের কমিটি, প্রশ্ন মহাসচিবের!

ঢাকায় মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা

নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে এবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নারায়ণগঞ্জ বিএনপির রাজনীতির পরিচিত প্রভাবশালী ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের কৌশলে মাইনাস করে কমিটি ঘোষণার ঘটনায় বিস্মিত বিএনপির হাই কমান্ডও। 

দলের কেন্দ্রীয় একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

শনিবার (১ আগষ্ট) ঢাকায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ দলটির সিনিয়র নেতাদের সাথে নিজেদের অভিযোগ তুলে ধরেন মহানগর বিএনপির নবগঠিত কমিটি থেকে পদত্যাগকারী নেতাকর্মীরাসহ অন্তত দেড় থেকে তিনশ নেতাকর্মী।

এসময় মহাসচিবের কাছে মহানগর বিএনপির কমিটির অসঙ্গতি তুলে ধরেন নেতারা৷ নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির প্রায় ৩০০ বিদ্রোহী নেতাকর্মী সেখানে উপস্থিত ছিলেন বলে একাধিক দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছেন। এসময় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত শীর্ষ নেতাদের এ ব্যাপারে অবহিত করা হয়। 

দলীয় সূত্র জানায়, নেতাকর্মীদের অভিযোগ শুনে রীতিমতো বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা৷ এসময় কোন প্রক্রিয়ায় এই আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে এমন প্রশ্নও তোলেন মহাসচিবসহ কয়েকজন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে মহানগর বিএনপির কমিটির বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন ফখরুল। 

এদিকে বিদ্রোহীদের নালিশের পর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদের ওপর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন দলটির সিনিয়র নেতারা। কমিটিতে সক্রিয় ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দেয়া নিয়ে সালামের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির একটি বড় অংশের রয়েছে চাপা ক্ষোভ। 

এর আগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির ৪১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে হাই কমান্ড। কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয় অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান এবং সদস্য সচিব পদে আছেন আবু আল ইউসুফ খান টিপু। কমিটি ঘোষণার আগ পর্যন্ত মহানগর বিএনপির এই দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে ছিল সাপ-নেউলের সম্পর্ক। নারায়ণগঞ্জ পোস্টকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে বিষয়টি স্বীকার করেছিলেন খোদ আবু আল ইউসুফ খান টিপু। রাতারাতি কমিটি ঘোষণা ও তাদের সম্পর্ক পাল্টে যাওয়া নিয়ে কানাঘুষা শুরু হয় তৃণমূলে।

নবগঠিত কমিটিতে রাখা হয়নি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের চার বারের সাবেক সাংসদ আবুল কালামকে৷ কমিটিতে ঠাই হয়নি ৭১ মামলার আসামি রাজপথের সক্রিয় মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি ও কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদদেরও৷ অন্যদিকে কমিটিতে নিষ্ক্রিয় হওয়ার পরেও বেশ কয়েকজন নেতার অন্তর্ভুক্তিতে চলছিল সমালোচনা। 

আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার কয়েক ঘন্টার মাথায় নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু এক পোস্টে কমিটিতে খোরশেদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি সামনে আনেন। 

কমিটি ঘোষণার ছয় ঘন্টা পার না হতেই বড়সড় ধাক্কা খায় মহানগর বিএনপি। আহ্বায়ক কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সাবেক এমপি আবুল কালামের পুত্র আবুল কাউসার আশা। কমিটিতে সিনিয়রদের যথাযথ মূল্যায়ন না করা ত্যাগীদের মাইনাস করাসহ নানা অভিযোগ তোলেন তিনি।

নবগঠিত কমিটির সমালোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, মতবিরোধ থাকতেই পারে। আমাদেরও ছিল তাই বলে কাউকে মাইনাস করতে পারেন না। খোরশেদের মত নেতার রক্ত শ্রম উপেক্ষা করবেন তা হতে পারে না। এমন আরও অনেক নেতাকর্মী আছেন যারা লোভ লালসার ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করেছেন। 

আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার ছয় দিনের মাথায় বিদ্রোহ ঘটে মহানগর বিএনপিতে। ১৮ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির ৪১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি থেকে একসাথে ১৫ নেতা পত্যাগ করেন। এসময় কমিটি থেকে রাজপথের ত্যাগী নেতাকর্মী ও বিএনপির প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিদের বাদ দেয়ার অভিযোগ আনেন তারা। 

আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর টিপু সাখাওয়াতের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নবগঠিত কমিটির প্রথম কর্মসূচিতে নিজেদের সক্ষমতার পরিচয় দেয়া। ১৮ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহানগর বিএনপির সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। দলের নবগঠিত কমিটির প্রথম সেই কর্মসূচি সমাবেশে টিপু সাখাওয়াতসহ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির মাত্র এগারোজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। মূলত জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়েই এদিন সমাবেশে লোকসমাগম ঘটানোর চেষ্টা করেন নবগঠিত কমিটির নেতারা৷ 

এদিকে কমিটি নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজমান অবস্থায়ই বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদকে নারায়ণগঞ্জে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন বন্দর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আতাউর রহমান মুকুল। এসময় নারায়ণগঞ্জে আসলে তার পিঠের চামড়া থাকবে না বলেও হুশিয়ারী দেন তারা। 

এ ঘটনার পর ২৪ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও নেতাকর্মীদের রোষানলে পড়ার ভয়ে নারায়ণগঞ্জ আসেননি সালাম। মামলার দোহাই দিয়ে নারায়ণগঞ্জ না আসলেও ঢাকায় ঠিকই সমাবেশে বক্তৃতা করতে দেখা গেছে এই নেতাকে।

এদিকে কমিটি ঘোষণার পর থেকেই এই কমিটিকে দুর্বল ও অকার্যকর কমিটি হিসেবে আখ্যা দিয়ে আসছে বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। তাদের মতামত জনপ্রিয় ও প্রভাবশালীদর বাদ দিয়ে এমন কমিটি গঠন বিএনপিকে দুর্বল করার পাঁয়তারার একটি অংশ। সবশেষ মহানগর বিএনপিতে চলমান অস্থিরতা নিরসনে কেন্দ্রের দ্বারস্থ হয়েছেন জেলার নেতারা৷ সক্রিয়দের শক্ত অবস্থানে সাখাওয়াত টিপুর নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিটি আর খুব বেশিদিন টিকবে না এমন মতামত নেতাকর্মীদের।