
ফাইল ছবি
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জের পাইকারি বাজার নিতাইগঞ্জে ৭৪ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা লবণের দাম একলাফে বেড়েছে ২৫০ টাকা। চামড়া সংরক্ষণের জন্য কোরবানির ঈদে চাহিদা বেশি থাকায় লবণের দাম বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন পাইকারেরা। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, সিন্ডিকেট, আবহাওয়া পরিস্থিতি ও পরিবহন ব্যয় বাড়ার কারণে লবণের দাম বেড়েছে।
নারায়ণগঞ্জ শহরের পাইকারি ব্যবসাকেন্দ্র নিতাইগঞ্জ। এখানে আটা, ময়দা, ভোজ্যতেল, চিনি, লবণ মিলসহ লবণের পাইকারি ব্যবসা চলে। নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদীসহ অনেক জেলায় লবণ সরবরাহ করা হয় এই পাইকারি ব্যবসাকেন্দ্র নিতাইগঞ্জ থেকে।
সরেজমিনে ব্যবসায়ী ও পাইকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পবিত্র কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে লবণের বাজার দুই সপ্তাহ ধরে চড়া যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারেরা এখানে আসেন লবণ কিনতে। অনেকে লবণ কিনে নিয়ে গাড়িতে লোড করে নিয়ে যাচ্ছেন। আয়োডিনবিহীন ৭৪ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা লবণ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা এবং ক্রসিং লবণ প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়। এ ছাড়া ডাইং কারখানায় ও ইটিপি প্ল্যান্টে এই লবণ ব্যবহৃত হয়। মূলত এই সময়ে লবণগুলো কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণের জন্য কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
এক মাস আগেও প্রতি বস্তা লবণের দাম ছিল ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা। ঈদের কয়েক দিন পরও এই লবণের চাহিদা বেশি থাকে। এ কারণে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা নিতাইগঞ্জ থেকে লবণ সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন।
নিতাইগঞ্জের ডিএস এন্টারপ্রাইজের মালিক দিলীপ সাহা প্রথম আলোকে বলেন, চামড়া সংরক্ষণের জন্য লবণের প্রয়োজন পড়ে। চাহিদা অনুযায়ী বাজারে লবণ আছে। মোকামে মূল্যবৃদ্ধি, বৃষ্টি ও পরিবহন ব্যয় বাড়ার কারণে বাজারে লবণের বাজারদর বেড়েছে।
চামড়া সংরক্ষণের জন্য বড় ট্যানারি ব্যবসায়ীরা আগেই লবণ মজুত করেছেন বলে দাবি করেন নারায়ণগঞ্জ সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপক বিপ্লব সরকার। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এক মাস আগেই লবণ উৎপাদনের সিজন শেষ হয়েছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে বস্তাপ্রতি লবণ ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। পরিবহন ব্যয় বাড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগে ট্রলারে প্রতি বস্তা লবণ পরিবহনের ভাড়া ছিল ৯০ টাকা, সেটি এখন বেড়ে ১২০ টাকা হয়েছে। এসব কারণে লবণের বাজারদর চড়া।
পাইকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক মাস আগেও ৭৪ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা গবাদি পশুর লবণ বিক্রি হয়েছে ৬৫০ টাকা থেকে ৭০০ টাকায়। এখন সেই লবণ প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা দরে।
লবণ কিনতে মুন্সিগঞ্জের বালিগাঁও এলাকা থেকে আসা পাইকার আমান মিয়া বলেন, গত ১৫ দিন আগেও লবণের দাম কম ছিল। কোরবানির ঈদের কারণে একলাফে লবণের দাম বেড়েছে বস্তাপ্রতি ২৫০ টাকা।
সিন্ডিকেটের কারণে ব্যবসায়ীরা লবণের দাম বাড়িয়েছেন বলে অভিযোগ করেন নরসিংদীর মাধবীর পাইকার সুনীল রায়। তিনি বলেন, মাত্র লবণের মৌসুম গেল। এই মুহূর্তে লবণের দাম বাড়ানোর কোনো কারণ নেই। কিন্তু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে বেচাকেনা করছেন।
তবে ব্যবসায়ীরা বলেন, লবণের বাজারে সিন্ডিকেট করেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। তারা যেটা বাজারদর নির্ধারণ করে দেন, সেটির ওপর নির্ভর করে বাজার নিয়ন্ত্রণ হয়। এই ঈদে লবণের বাড়তি চাহিদা থাকে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারেরা এসে লবণ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
নিতাইগঞ্জের পাইকারী লবণ ব্যবসায়ী খাজা গরিবে নেওয়াজের ব্যবস্থাপক ফাহাদ খান প্রথম আলোকে বলেন, কোরবানির ঈদে লবণের চাহিদা প্রচুর। বড় বড় ট্যানারির ব্যবসায়ীরা সরাসরি চট্টগ্রাম মোকাম থেকে লবণ কিনে নেন। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারেরা লবণ কিনে নিয়ে যান নিতাইগঞ্জ থেকে। বাজারে লবণের সরবরাহ ভালো। বাজারে লবণের কোনো ঘাটতি নেই।
এ বিষয়ে নিতাইগঞ্জ পাইকারী ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি শংকর সাহা প্রথম আলোকে বলেন, কিছু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আছেন, যাঁরা সুযোগ পেলেই পণ্যের দাম বাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এ বিষয়ে বাজারে নজরদারি ও আইনের প্রয়োগ প্রয়োজন।