শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫

|

জ্যৈষ্ঠ ২৯ ১৪৩২

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

লন্ডন বৈঠকে নজর গোটা দেশের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ২৩:০২, ১১ জুন ২০২৫

লন্ডন বৈঠকে নজর গোটা দেশের

প্রতীকী ছবি

নির্বাচন, সংস্কারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে রাজনৈতিক উত্তেজনা যখন চরমে, ঠিক সে মুহূর্তে লন্ডনে অনুষ্ঠেয় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক দেশবাসীর মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণের দৃষ্টি এখন এই বৈঠকের দিকেই।

সবার প্রত্যাশা, চলমান সংকটে দিশা দেখাতে পারে এই বৈঠক।

চারদিনের সফরে লন্ডনে রয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। ধারণা করা হচ্ছে, শুক্রবার (১৩ জুন) লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে তার সঙ্গে তারেক রহমানের ‘ওয়ান টু ওয়ান’ ওই বৈঠক হতে যাচ্ছে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের একটি সম্ভাব্য মোড়।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ ও সম্ভাব্য রোডম্যাপ ঘোষণা নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলমান আলোচনা ও বিরাজমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে এ বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ধারণা, দুই নেতার এই প্রথম সাক্ষাতের গুরুত্ব অনেক বেশি। বিশেষ করে আগামী নির্বাচনের সময়, নির্বাচন পরবর্তী বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের এজেন্ডা, তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রাসঙ্গিকতাসহ নানা গুরত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে দুই নেতার মধ্যে আলোচনা হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের আমন্ত্রণে তারেক রহমানের এ বৈঠক শুধু দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় সীমাবদ্ধ থাকবে না। বৈঠকে নির্বাচন কমিশন, অন্তর্বর্তী বা ছোট একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভবিষ্যৎ কাঠামো, সংবিধান সংস্কার, রাখাইনে মানবিক করিডোর, বন্দর ব্যবস্থার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসবে।  

বিএনপি মনে করে, মূল রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান নির্ভর করছে এ বৈঠকের ফলাফলের ওপর। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের মতে, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠক ফলপ্রসূ হলে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার উদ্যোগ এবং জুলাই সনদসহ বিভিন্ন ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপির মধ্যে যে মতপার্থক্য ও দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তা অনেকটাই কমে আসতে পারে। বৈঠকে দুই পক্ষই নমনীয় থাকলে এবং ইতিবাচক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারলে পরিবর্তিত হতে পারে নির্বাচনের সময় এবং নির্ধারিত হতে পারে তারেক রহমানের দেশে ফেরার সময়ও।

এই বৈঠক একটি সুন্দর সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করছেন, এই বৈঠকে আগামী নির্বাচন, সংস্কার ও বিচার নিয়ে ড. ইউনূস তার সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরতে পারবেন এবং তারেক রহমানের কাছ থেকেও এসব বিষয়ে মতামত ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে পারবেন। এছাড়া, নির্বাচনের সময় নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল, ঈদের আগের রাতে নির্বাচনের সময় হিসেবে এপ্রিল মাসকে ঘোষণা করায় তা আরও তীব্র হয়েছিল। এতে অনেকেই আশঙ্কা করছিল, জুলাই ঐক্যে ফাটল ধরতে পারে। তবে এই বৈঠককে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে আবার আশার আলো দেখা যাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে লেখক, সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারুফ কামাল খান বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপি এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল। অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপির দ্বন্দ্ব-সংঘাত হলে তা সংস্কার, বিচার, নির্বাচন- সবকিছুকেই বাধাগ্রস্ত করবে। এতে দেশ, জাতি, সরকার বা বিএনপি কারোই লাভ হবে না। আমি মনে করি সমঝোতা হওয়া দরকার। বৈঠকে ওপেন এজেন্ডা রাখাতে ভালো হয়েছে। জানতে পেরেছি, কোনো নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। সুতরাং ওই দুই ঘণ্টা খোলামেলা তাদের দুই পক্ষের যেসব বিষয়ে দ্বন্দ্ব আছে, বা তারা যে বিষয়গুলোতে আলোচনা করার প্রয়োজন মনে করেন- এমন যেকোনো বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।  

দেশ ও জাতির স্বার্থ বিবেচনা করে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের পথ থেকে বের হয়ে দুই পক্ষই একটা সমাঝোতায় পৌঁছাবে—এমন আশাবাদ প্রকাশ করে মারুফ কামাল খান বলেন, ড. ইউনূস একজন বিশ্ববিশ্রুত মানুষ, তারেক রহমানও দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলের কার্যত এখন প্রধান। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত, উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে তিনি এসেছেন। সব ব্যাপারে একমত হওয়া তো সম্ভব না। গণতন্ত্রে ভিন্নমতও থাকে। তবে মেজর যেসব দ্বান্দ্বিক বিষয় আছে, সেগুলো নিরসন হওয়া উচিত এবং অনেকটাই নিরসন হবে বলে আমি মনে করি।

রাজনীতির এই চলমান উত্তেজনা ও টানাপোড়েনের মুহূর্তে এই বৈঠক রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য একটি নতুন দুয়ার খুলে দিতে পারে বলে মনে করছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার (১০ জুন) এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ঈদ পরবর্তী সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বলেন, যদি সব কিছু ঠিকঠাক থাকে, তাহলে এই সাক্ষাৎ রাজনীতিতে একটি টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই বৈঠকের গুরুত্ব অনেক বেশি।  

এই আলোচনার মাধ্যমে বহু সমস্যার সমাধান সম্ভব। এতে দুই পক্ষের মধ্যকার সম্পর্ক সহজ হতে পারে এবং রাজনীতিতে নতুন একটি মাত্রা সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন তিনি।

লেখক ও সাংবাদিক আমীন আল রশীদের মতে, এই বৈঠকের আলোচনার মূল বিষয় হবে নির্বাচন। এ প্রসঙ্গে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমার ধারণা, তারেক রহমান জাতীয় নির্বাচন আরেকটু এগিয়ে আনার পরামর্শ দেবেন। বিএনপি যেমন এখন পর্যন্ত ডিসেম্বরেই আটকে আছে, তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনায় সমঝোতা হলে হয়তো এটা ডিসেম্বর ও এপ্রিলের মাঝামাঝি ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এগিয়ে আসতে পারে। মনে রাখতে হবে, সেনাপ্রধান গত বছরের সেপ্টেম্বরে রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে যে ১৮ মাসের কথা বলেছিলেন, সেই ১৮ মাস হয় কিন্তু আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে। জামায়াতও বলছে ফেব্রুয়ারিতে হলে ভালো হয়। তাছাড়া আবহাওয়া, রোজা, মাধ্যমিক পরীক্ষা—সব মিলিয়ে অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি হচ্ছে নির্বাচনের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। ফলে আমার ধারণা, নির্বাচন হয়তো এপ্রিল ও ডিসেম্বরের মাঝামাঝি কোনো একটা সময়ে অনুষ্ঠানের ব্যাপারে একটা সমঝোতা হতে পারে।

সংস্কার নিয়েও আলোচনা হতে পারে জানিয়ে আমীন আল রশীদ বলেন, বিএনপি বরাবরই তাদের যে ৩১ দফার কথা বলছে, ড. ইউনূসকে তারেক রহমান সেটি স্মরণ করিয়ে দেবেন এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিএনপির আলোচনার বিষয়ও নিশ্চয়ই উঠে আসবে।  

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, তারেক রহমানের উচিত হবে, দেশে গত ৫ আগস্টের পর থেকে যে ‘মব’ বা জনবিশৃঙ্খলা চলছে এবং কথিত ‘তৌহিদী জনতা’র নামে বিভিন্ন স্থানে যেসব কর্মকাণ্ড চলছে, সেগুলো শক্ত হাতে দমনের জন্য তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে অনুরোধ করবেন। এই ঘটনাগুলো বাংলাদেশ সম্পর্কে দেশের বাইরে খুব খারাপ বার্তা দিচ্ছে। দেশের ভেতরেও ইসলাম সম্পর্কে মানুষের মনে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করছে।

গত বছরের ৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পর ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেও প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে তার এখনো সাক্ষাৎ হয়নি। তাই প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রথম যুক্তরাজ্য সফরে দুই নেতার দেখা-সাক্ষাতের সম্ভাবনা নিয়ে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলে জল্পনকল্পনা শুরু হয়।

নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে বিএনপির পক্ষ থেকে এ বৈঠকে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে প্রথমে কিছুটা অনীহা ছিল। তবে সরকারের কয়েকজন সিনিয়র ও প্রভাবশালী উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকটি আয়োজনের চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। এ নিয়ে ঢাকা ও লন্ডনে কূটনৈতিক তৎপরতাও চলতে থাকে। আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যমান ইস্যুগুলো সমাধানের বিভিন্ন সম্ভাবনা তুলে ধরে বৈঠকে রাজি করাতে চেষ্টা চালানো হয়।  

একাধিক সূত্রে মতে, বিএনপি চেয়ারপারসন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পরামর্শেই দৃশ্যপট পাল্টে যায়। এই সাক্ষাৎ বাস্তবায়নে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শেষ মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। পরবর্তীতে উভয় পক্ষের আগ্রহে, বিশেষ করে সরকারের বাড়তি উৎসাহে সাক্ষাতের সময় চূড়ান্ত হয়।

বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক অঙ্গনে খালেদা জিয়ার এমন প্রজ্ঞার উদাহরণ অতীতেও দেখা গিয়েছে। দেশের স্বার্থের প্রশ্নে যেমন তিনি সবসময়ই আপসহীন, তেমনই দেশের বৃহৎ স্বার্থে তিনি ঐক্যের পক্ষেও বিভেদ সৃষ্টি করতে চাইছেন না। এই প্রেক্ষাপটে শনিবার (৭ জুন) ঈদের দিন রাতে স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সিনিয়র নেতারা বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে তাকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে গেলে, তিনি দলের নেতাদের সঙ্গে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন।  

এই আলোচনার বিষয়ে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন অঙ্গনে খবর ছড়ায়, বিএনপি চেয়ারপারসন সেখানে স্পষ্টভাবে বলেছেন- সরকারের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে গেলে বিএনপির কোনো রাজনৈতিক লাভ নেই। তিনি নেতাদের কৌশলগত সংলাপ ও আলোচনার পথে এগোনোর পরামর্শ দেন।

এই পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (৯ জুন) রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ড. ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সম্ভাব্য বৈঠক এবং বর্তমান রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। কমিটির সদস্যরা মনে করেন, এই সাক্ষাৎ দেশের ভবিষ্যৎ ও জাতির কল্যাণে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। পরে মঙ্গলবার (১০ জুন) দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর লন্ডনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বলে সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন।

এই বৈঠক প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান এবং একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তি। অন্যদিকে দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে যুক্তরাজ্যে নির্বাসনে রয়েছেন। আমরা মনে করি, সরকারের প্রধান ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের এই সাক্ষাৎ হওয়া উচিত, এটি রাজনৈতিক শিষ্টাচারেরও একটি অংশ। এতে অনেক সমস্যারই সমাধান আসতে পারে। ’

সব মিলিয়ে, তারেক রহমান ও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এই ‘ওয়ান টু ওয়ান’ বৈঠক শুধু রাজনৈতিক অঙ্গনেই নয়, পুরো দেশের জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে উঠেছে। এতে রাজনৈতিক উত্তেজনা প্রশমিত হওয়ার পাশাপাশি নতুন একটি সংলাপমুখী ধারার সূচনা হতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিএনপির বিরুদ্ধে ‘মিডিয়া ক্যু’?
যদিও কোনো কোনো বিশ্লেষক মনে করেন, সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার আলোচনার বিষয়টি ঘিরে বিএনপির বিরুদ্ধে ‘মিডিয়া ক্যু’ হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বিএনপির মধ্যে এক ধরনের বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা চলছে এবং জনমনেও বিএনপি সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। খালেদা জিয়া অসন্তুষ্ট বা সমঝোতা করতে বলেছেন বলে যে প্রচারণা হয়েছে, তার মধ্য দিয়ে বিএনপিকেই পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারুফ মল্লিক এক ফেসবুক বার্তায় লিখেছেন, ‘গতকাল ভাইরাল হলো যে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ইউনূসের বিরুদ্ধে আন্দোলনের হুমকিতে অসন্তুষ্ট হয়েছেন। ইউনূসের সঙ্গে সমঝোতা করতে বলছেন। এটা মূলত ঈদের দিন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দলের নেতারা সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে করতে গেলে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেন বলে সংবাদ প্রচারিত হয়েছে। এবং আরও বলা হয়েছে বিএনপি ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করতে রাজি ছিল না। ’

‘মূল ঘটনা হচ্ছে, মে মাসে প্রধান উপদেষ্টার বিলেত সফর নির্ধারিত হওয়ার পরপরই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের আগ্রহ দেখায় সরকার। বিএনপিও আন্তরিকভাবেই বৈঠকের প্রস্তাব গ্রহণ করে জানিয়ে দেয় বৈঠক হবে। বিএনপির ধারণা ছিল ওই বৈঠকে নির্বাচন, সংস্কারসহ সার্বিক বিষয়ে আলোচনা করে একটা গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছা যাবে। কিন্তু ঝামেলা বাঁধে ঈদের আগের দিন ড. ইউনূসের ভাষণে এপ্রিলে নির্বাচন ঘোষণা দেওয়ার পর। কারণ বিএনপি ডিসেম্বরেই নির্বাচনের দাবি করেছে। জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারিতে হলেও বিএনপি সম্ভবত মেনে নিতো। কিন্তু এপ্রিলে নির্বাচন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। উপদেষ্টাদেরও দুই-একজন একই মতামত দিয়েছিলেন। ’

ড. ইউনূস এখন দুষ্টচক্র দ্বারা পরিচালিত হচ্ছেন উল্লেখ করে মারুফ মল্লিক আরও বলেন, ‘সম্ভবত তাদের পরামর্শে তিনি এগুয়েমি করে এপ্রিলের ঘোষণা দেন। এতে করে সরকারের আদৌ নির্বাচন করার সদিচ্ছা নিয়ে সন্দেহ জাগে। কারো মনে সন্দেহ, সরকার এপ্রিলের নির্বাচন বাতিল করে দেবে কোনো একটা কারণ দেখিয়ে। সব মিলিয়ে বিএনপি বৈঠক নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যায়। নির্বাচন নিয়েই যদি আলাপ না হয় এবং আদৌ নির্বাচন না হয় তবে বৈঠকে চা পানি খাওয়া ও ফটোসেশনের কোনো প্রয়োজন নেই। মূলত এসব বিষয় নিয়েই দলের সিনিয়র নেতারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেন। সিদ্ধান্ত হয় রাজনৈতিক শিষ্টাচারের অংশ হিসেবে বৈঠক হবে, যেহেতু সরকারের দিক থেকে বৈঠকের প্রস্তাব এসেছে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত স্থায়ী কমিটির বৈঠকের মাধ্যমে জানানো হবে। খালেদা জিয়া সবাইকে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মেনে চলার পরামর্শ দেন। এখানে সমঝোতারও কিছু নেই ড. ইউনূসের সঙ্গে। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন না দিলে যে যার অবস্থান থেকে রাজনীতি করবে। ’

বিএনপির বিরুদ্ধে ‘মিডিয়া ক্যু’ হয়েছে উল্লেখ করে এ বিশ্লেষক আরও বলেন, ‘বিএনপির হাতে যেহেতু কোনো গণমাধ্যম নাই, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খুবই দুর্বল, যে কারণে কাল দিনভর প্রচারণা হয়েছে যে খালেদা জিয়া অসন্তুষ্ট বা সমঝোতা করতে বলছেন। এখানে বিএনপি পিছিয়ে গেছে ভয়ানকভাবে। জাশি, এনসিপির সমন্বিত অংশগ্রহণে বিএনপির বিরুদ্ধে ‘মিডিয়া ক্যু’-এর ট্রায়াল আমরা গতকাল দেখলাম। এই রকম মিডিয়া ক্যু সামনে আরও হবে। ’

সুত্রঃ বাংলানিউজ