বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫

|

আষাঢ় ৩ ১৪৩২

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

শামীম ওসমান পলাতক, অস্ত্র ভান্ডার কোথায়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১২:২৪, ১৮ জুন ২০২৫

শামীম ওসমান পলাতক, অস্ত্র ভান্ডার কোথায়

ফাইল ছবি

নারায়ণগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে পুলিশের পাশাপাশি অত্যাধুনিক অস্ত্র নিয়ে মাঠে নামেন ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। বিশেষত নারায়ণগঞ্জের সাবেক এমপি শামীম ওসমান তার পুত্র অয়ন ওসমানসহ ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠ নেতাকর্মীরা এসকল অস্ত্র ব্যাবহার করেছিলেন। 

পাঁচ আগষ্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর শামীম ওসমান ও তার পরিবারের সদস্যরা বিদেশে পালিয়ে গেছেন। শামীম ওসমান পালিয়ে গেলেও আন্দোলন দমনে ব্যাবহৃত সেই বিশাল অস্ত্র ভান্ডারের অস্ত্রগুলোর হদিস এখন পর্যন্ত মেলেনি।

২০২৪ এর ১৭ জুলাই নারায়ণগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দুপুর বারোটার দিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। মুহুর্তেই সংঘাত পুরো শহরে ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের সাথে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরাও শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়। শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশের লাঠিচার্জ ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে মাইকে ঘোষণা দিয়ে দেওভোগ, বাবুরাইল, নিতাইগঞ্জ, মিশনপাড়াসহ আশেপাশের এলাকার সাধারণ মানুষও রাস্তায় নেমে আসে। দুপুর বারোটায় শুরু হওয়া এই সংঘর্ষ গভীর রাত পর্যন্ত চলে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে থাকলে ১৭ জুলাই বৃহস্পতিবার রাতে কারফিউ জারি করে সরকার। সেই সাথে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়।

শুক্রবার পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে জুমার নামাজের পর কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি নিতে থাকেন শিক্ষার্থীসহ সমমনা বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে সক্রিয় ছিলেন না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের দিয়ে আন্দোলন দমন করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। সেই নির্দেশ পালন করতেই মাঠে নামেন শামীম ওসমান। 

শুক্রবার সকাল থেকেই নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া ও আশেপাশের এলাকায় সশস্ত্র অবস্থান নেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। জুমার নামাজের পর ডিআইটি এলাকায় শিক্ষার্থীরা মাঠে নামতে পারে এমন গুঞ্জন ছিল শহরজুড়ে। 

দুপুর বারোটার কিছু সময় পরে নারায়ণগঞ্জে আসেন শামীম ওসমান। শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে নেতাকর্মীদের জড়ো করতে শুরু করেন শামীম ওসমান। এসময় বিভিন্ন জায়গা থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র সংগ্রহ করে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে নিয়ে আসা হয়। নেতাকর্মীরা জানান, বিশাল এই অস্ত্র ভান্ডারের যোগানদাতা ছিলেন শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমান ও তার শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটু। 

জুমার নামাজের কিছুক্ষণ পরেই মুসল্লীরা বের হতে শুরু করলে নারায়ণগঞ্জ ক্লাব থেকে পিস্তল, শর্টগান, অটোমেটিক রাইফেল নিয়ে রাস্তায় নামেন শামীম ওসমান। এসময় তার পাশে দেখা গেছে শ্যালক টিটু, ছেলে অয়ন, বেয়াই লাভলু ও তার ছেলে ভিকিকে। এসময় অস্ত্র নিয়ে গুলিবর্ষণ করতে করতে ডিআইটি এলাকার দিকে অগ্রসর হতে শুরু করেন তারা।

বিকেল পর্যন্ত শামীম ওসমান ও তার বাহিনীর গুলিবর্ষণের কারণে পিছু হটতে থাকে। এসময় কয়েক হাজার রাউন্ড গুলি চালান শামীম ওসমান ও তার নেতাকর্মীরা। তবে বিকেল নাগাদ প্রায় সকলেরই গুলি ফুরিয়ে আসলে পিছু হটতে শুরু করেন শামীম ওসমান ও তার নেতাকর্মীরা। 

এদিন শামীম ওসমান, তার পরিবারের সদস্য ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের গুলিতে প্রচুর হতাহতের ঘটনা ঘটে। ঠিক কতজন সেদিন গুলিবিদ্ধ হয়েছিল এবং মারা গিয়েছিলেন তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

এদিকে মুসল্লী ও শিক্ষার্থীদের ওপর উপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে সাধারণ মানুষ। শিক্ষার্থীদের সাথে আশেপাশের এলাকা থেকে সাধারণ জনতা যোগ দিলে পালিয়ে যান শামীম ওসমান। এসময় বিক্ষুব্ধ জনতা শামীম ওসমান ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের আশ্রয় দেয়ায় নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে হামলা, ভাংচুর চালায় ও অগ্নিসংযোগ করে। একই সময়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনেও হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা। 

শহরে জনতার প্রতিরোধের মুখে পালিয়ে লিংকরোডের দিকে চলে যান শামীম ওসমান ও তার বাহিনী। এসময় জালকুড়ি এলাকায় আন্দোলনরত জনগণের সাথে সংঘর্ষে জড়ায় শামীম ওসমান ও তার সশস্ত্র বাহিনী। এসময় জালকুড়ি এলাকায় গুলিবর্ষণ করতে দেখা গেছে শামীম ওসমান ও তার পুত্র অয়ন ওসমানকে। তবে জনগণের প্রতিরোধের মুখে সেখান থেকেও পালিয়ে বাঁচতে হয় শামীম ওসমান ও তার পরিবারের সদস্যদের। 

এদিকে পাঁচ আগষ্ট আওয়ামী লীগের পতনের সাথে সাথে নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে পালান শামীম ওসমানসহ তার অনুগতরা। ওসমান পরিবারের সদস্যরা দেশ ত্যাগ করার পর আত্মগোপনে চলে যান তার অনুগত নেতাকর্মীরাও। পরবর্তীতে নানা উপায়ে দেশ ছাড়েন অনেকে। অনেক নেতাকর্মীরা এখনও দেশে আত্মগোপনে আছেন। 

এদিকে আওয়ামী লীগের পতনের পর অস্ত্র উদ্ধারের বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করা হলেও ওসমানদের ব্যাবহৃত অস্ত্র এখনও উদ্ধার করতে পারেনি প্রশাসন। থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা গেলেও এসকল অবৈধ অস্ত্র এখনও ওসমান পরিবারের অনুগত সন্ত্রাসীদের কাছে লুকানো রয়েছে বলেই মনে করেন আন্দোলনকারীরা।