ফাইল ছবি
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার বারদীতে লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রমে পূজা অর্চনার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আধ্যাত্মিক সাধক শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর ১৩৫তম তিরোধান উৎসব।
মঙ্গলবার সকাল থেকে উৎসব ঘিরে বারদী আশ্রম ও এর আশপাশের এলাকা ইতোমধ্যে ভক্তদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে লোকনাথ ভক্তরা এসে আশ্রমে তিরোধান উৎসবে যোগ দিয়েছেন।
সকালে পূজা অর্চনা, গীতা পাঠ, কীর্তন, রাজভোগ, বাল্যভোগ ও প্রসাদ বিতরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। পরে ঊষা কীর্তন শুরু হয়।
এদিকে তিরোধান উৎসবকে ঘিরে স্থানীয় প্রশাসন বারদী আশ্রম এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। উৎসবকে ঘিরে বারদী এলাকায় বসেছে ৫ দিনব্যাপী লোকজ মেলা।
অভিযোগ উঠেছে, এ মেলাকে কেন্দ্র করে প্রভাবশালী একটি মহল একাধিক পয়েন্টে জুয়ার আসর বসিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন এ বিষয়ে নীরব ভূমিকা পালন করছে।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মতে, লোকনাথ ব্রহ্মচারী ১৭৩০ খ্রিস্টাব্দে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার বারাসাতের দে গঙ্গা থানার কচুয়া (কাঁকড়া) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা রাম নারায়ণ ঘোষাল ও মা কমলা দেবী। লোকনাথ ব্রহ্মচারী ছিলেন তার মা-বাবার ছোট ছেলে। তিনি হিমালয়ে গিয়ে ৪০ বছর সাধনা করেন। তিনি আফগানিস্তানের কাবুলে আরবি ভাষা ও কুরআন শাস্ত্র শিক্ষা করে ইসলাম ধর্ম এবং এর দর্শন সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেন। মানবতাই মানুষের শ্রেষ্ঠ ধর্ম এ বাক্য অন্তরে লালন করে মানবজাতির কল্যাণে কাজ করে দীর্ঘ ২৬ বছর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার বারদী এলাকায় অবস্থান করেন মহাসাধক লোকনাথ ব্রহ্মচারী। ১৬০ বছর বয়সে ১৯ জ্যৈষ্ঠ তারিখে বারদী আশ্রমে এ সাধকের মহাপ্রয়াণ ঘটে। এরপর থেকে প্রতি বছর ১৯ জ্যৈষ্ঠ লোকনাথ ব্রহ্মচারীর তিরোধান দিবস পালন করে আসছে আশ্রম কর্তৃপক্ষ।
তিরোধান উৎসব উপলক্ষে লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম কর্তৃপক্ষ আয়োজন করেছে দিনব্যাপী বিভিন্ন নানা অনুষ্ঠানমালার। এতে রয়েছে প্রভাত কীর্তন, গীতাপাঠ, লোকনাথ ব্রহ্মচারীর জীবন বৃত্তান্ত নিয়ে আলোচনা, বাল্যভোগ, রাজভোগ বিতরণ, ভক্তিমূলক গান, সন্ধ্যা আরতি, ফল প্রসাদ, জল প্রসাদ বিতরণসহ বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় অনুষ্ঠান। আশ্রমে আগত লোকনাথ ভক্তরা সকাল সন্ধ্যা আরাধনা করছেন মনোষ্কামনা পূরণের আশায়।
এছাড়াও উৎসবে আগতদের জন্য বিনামূল্যে শিশুদের দুধ বিতরণ, ওষুধসহ চিকিৎসাসেবা, মিষ্টি, চিড়ামুড়ি, বাতাসা, পানি ও শরবত বিতরণের ব্যবস্থা নিয়েছে লোকনাথ সেবা সংঘ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, সীতা রাম সংঘ, শারদাঞ্জলি ফোরাম বাংলাদেশসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
বারদী লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব সাংবাদিক শংকর কুমার দে জানান, তিরোধান উৎসবে অংশ নিতে প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটান ও শ্রীলংকা থেকেও বিপুল সংখ্যক লোকনাথ ভক্ত বারদী আশ্রমে এসে সমবেত হয়েছেন।
তাদের থাকা ও খাওয়ার সু-ব্যবস্থা করা হয়েছে। পূজা অর্চনা, ঊষাকীর্তন, বাল্যভোগ, রাজভোগ বিতরণ, গীতা পাঠ, প্রসাদ বিতরণ, লোকনাথ ব্রহ্মচারীর জীবন নিয়ে আলোচনা, সন্ধ্যা কীর্তনসহ বিভিন্ন ধর্মীয় কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। এলাকা পরিদর্শন করে লোকনাথ ভক্তদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা, খাবার স্যালাইন, পানি ও শিশুদের জন্য দুধ বিতরণ করা হচ্ছে।
সোনারগাঁ থানার ওসি মফিজুর রহমান জানান, লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রমে আসা ভক্তদের নিরাপত্তায় পুলিশ সর্বদা কাজ করে যাচ্ছে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই প্রতিরোধে আশ্রম এলাকায় সেনাসদস্য, পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্যসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন রয়েছে। এছাড়াও আশ্রম এলাকায় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত আশ্রম এলাকায় কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। লোকনাথ ভক্তরা শান্তিপূর্ণভাবে তিরোধান দিবস উদযাপন করছে।
