
ফাইল ছবি
নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়ায় বসানো হচ্ছে বজ্র নিরোধক দণ্ড। সাম্প্রতিক সময়ে বজ্রপাতের আশঙ্কাজনক বৃদ্ধির শঙ্কা ও নগরবাসীর নিরাপত্তা বিবেচনায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) এই উদ্যোগ নিয়েছে।
জানা গেছে, শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর আশপাশে এবং উন্মুক্ত এলাকাগুলোতে ধাপে ধাপে বজ্র নিরোধক স্থাপন করা হবে। তারই অংশ হিসেবে প্রথম পর্যায়ে চাষাঢ়া গোলচত্বর ও আশপাশের এলাকায় বসানো হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তির স্টেইনলেস স্টিলের বজ্রনিরোধক দণ্ড।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আবহাওয়ার অস্বাভাবিক পরিবর্তনের কারণে বজ্রপাতের হার বেড়ে গেছে। বিশেষ করে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়কালে প্রতি বছরই দেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। নারায়ণগঞ্জেও কয়েকটি মর্মান্তিক ঘটনার পর এই উদ্যোগ হাতে নেয় নাসিক।
কর্তৃপক্ষ জানায়, বজ্র নিরোধক দণ্ড মূলত উঁচু ভবন, গাছ বা স্থাপনায় বজ্রপাত প্রতিরোধে সহায়তা করে। এটি স্থাপনের ফলে বাজ পড়ে সরাসরি মাটি দিয়ে নির্গত হয়ে যাবে, ফলে প্রাণহানি বা অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি কমবে।
জানা গেছে, প্রথম পর্যায়ে চাষাঢ়া কেন্দ্রিক অঞ্চল যেমন সার্কিট হাউজ মোড়, আলী আহাম্মদ চত্বরে, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, শহীদ মিনার এলাকা ও নাসিক ভবনের ছাদে স্থাপন করা হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে বড় স্কুল, হাসপাতাল, খেলার মাঠ ও খোলা স্থানে বসানো হবে আরও দণ্ড।
চাষাঢ়া এলাকার বাসিন্দারা এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। এক ব্যবসায়ী বলেন, শহরে এখন এমন অনেক জায়গা আছে যেটা খোলা থাকে। বজ্রপাতের সময় আমরা নিরাপদ থাকি না। এই দণ্ড বসালে অন্তত আতঙ্কটা কিছুটা কমবে।
তোলারাম কলেজের শিক্ষার্থী সাদিদ জানান, আমরা অনেকে এখানে আসি, আড্ডা দেই। হঠাৎ বৃষ্টি বা বজ্রপাত হলে আশ্রয় নেওয়ার জায়গা পাই না। এখন যদি কিছু জায়গায় নিরাপদ ব্যবস্থা থাকে, তাতে উপকার হবে।
পরিবেশ ও দুর্যোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু বজ্র নিরোধক বসালেই হবে না, শহরের মানুষকে সচেতন করতে হবে বজ্রপাতের সময় কী করণীয়, কোথায় গেলে নিরাপদ, এসব নিয়েও। স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমের মাধ্যমে প্রচার চালানোর সুপারিশ দিয়েছেন তারা।
নাসিকের বজ্র নিরোধক স্থাপনের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয় হলেও এটি যেন এককালীন কার্যক্রমে সীমাবদ্ধ না থাকে, এমনটাই প্রত্যাশা নগরবাসীর। জলবায়ু পরিবর্তনের এই সময়ে দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি ও সচেতনতা দুটোই সমান জরুরি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফীন জানান, বড় হাই রাইজ বিল্ডিংগুলোতে সাধারণত এই বজ্র নিরোধক দন্ডগুলো লাগানো হয়। এগুলো লাগানোর উদ্দ্যেশ্য হল এতে সেসকল এলাকায় বজ্রপাত হবে না। এতে বজ্রপাতে হতাহতের আশংকা অনেকাংশেই কমে আসে। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা বজ্রপাতের প্রবনতা বেশি দেখতে পাচ্ছি, দেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে বহু হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। নারায়ণগঞ্জেও বড় ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকাগুলোতে বা জনসমাগম বেশি হয় এমন খোলা জায়গায় বজ্রপাতে যেন হতাহতের ঘটনা না ঘটে সেজন্যেই এই বজ্র নিরোধক দন্ডগুলো লাগানো হচ্ছে।