
ওয়াসার সরবরাহকৃত পানিতে ময়লা
নারায়ণগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকায় ওয়াসার সরবরাহকৃত পানিতে তীব্র দুর্গন্ধ ও ময়লার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। চাষাঢ়া, খানপুর, মাসদাইর, দেওভোগ, বাবুরাইল, পাইকপাড়া ও তল্লা এলাকাসহ প্রায় সকল এলাকার বাসিন্দারা প্রতিনিয়তই ভোগান্তির মুখে পড়ছেন এই পানি ব্যবহার করে। তবে এই সমস্যা দীর্ঘদিনের হলেও সমাধানের কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না এমনটাই জানাচ্ছেন নগরবাসী।
ওয়াসার পানি ব্যাবহারকারীদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, ওয়াসার পানি থেকে তীব্র গন্ধ আসে। কেউ কেউ বলেন, এই পানি দিয়ে মুখ ধুলেও গন্ধ লেগে থাকে। রান্নার পর খাবারে একধরনের বাজে গন্ধ পাওয়া যায়। আবার অনেকে বলছেন, গোসলের পর ত্বকে চুলকানি বা র্যাশ হচ্ছে, চুল পড়ার ঘটনাও বাড়ছে।
খানপুরের বাসিন্দা গৃহিণী ফারহানা আক্তার বলেন, পানি ফোটালেও দুর্গন্ধ যায় না। বাধ্য হয়ে খাওয়ার জন্য জার পানি কিনতে হচ্ছে। কিন্তু গোসল, রান্নায় তো আর সেই পানি ব্যবহার করা যায় না। শিশুদের নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তায় আছি।
দেওভোগ এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম জানান, রাতের দিকে পানির গন্ধ আরও বেশি হয়। মনে হয় মাটি বা নর্দমার গন্ধ। তবু কিছু করার নেই, ওয়াসার পানি ছাড়া বিকল্প নাই।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ শহরের অনেক জায়গায় এখনও পুরনো ও মরিচাধরা পাইপ ব্যবহার হচ্ছে। অনেক সময় নিকটবর্তী নর্দমা কিংবা সেপটিক ট্যাংকের লিকেজ থেকে সেই লাইনগুলোতে বর্জ্য বা গ্যাস ঢুকে পড়ে, যা পানির স্বাদ-গন্ধ বদলে দেয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত পরিশোধনের পাশাপাশি পাইপলাইন মেরামত না করলে এসব দুর্গন্ধ কমবে না।
বিশেষজ্ঞরা জানান, পুরনো লাইন বদলানো বা ক্লোরিনেশন ছাড়া এই দুর্গন্ধের সমাধান সম্ভব নয়। অনেক জায়গায় পাইপের জয়েন্ট থেকে ময়লা পানি ঢুকে যাচ্ছে, যা ফিল্টারেও ধরা পড়ে না।
ওয়াসা কর্তৃপক্ষ জানান, তারা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত এবং কিছু এলাকায় লাইনের সংস্কার কাজ চলছে। এছাড়া পানির মান পরীক্ষার জন্য পরীক্ষাগারে নমুনাও পাঠানো হচ্ছে বলে দাবি তাদের। তবে মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা বলছে, এখনো অধিকাংশ এলাকাতেই সমস্যার কোনো দৃশ্যমান সমাধান হয়নি।
জানা যায়, বর্ষার সময় নদীর পানির মান অনেক সময় খারাপ হয়ে যায়। তবে কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করছে পানির গুণগত মান ঠিক রাখতে। তবে পুরনো লাইন ও এলাকায় এই জটিলতা নিরসন কিছুটা সময়সাপেক্ষ।
নগরবাসীরা বলছেন, পানি মানেই জীবন। সেই জীবনের উৎস যদি এমনভাবে দূষিত ও দুর্গন্ধযুক্ত হয়, তাহলে পুরো পরিবার স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ে। একদিকে পানির জন্য বাড়তি ব্যয়, অন্যদিকে মানসিক অস্বস্তি দুটোই ভোগান্তি তৈরি করছে।
পরিবেশবিদরা জানান, এই পানিই অনেকে ফুটিয়ে খাচ্ছে, ছোট শিশুরা গোসল করছে। দীর্ঘমেয়াদে এটি পানিবাহিত রোগ বাড়াবে। ওয়াসার দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। ওয়াসার পানি শুধুই গন্ধের সমস্যা নয়, এটি এখন একটি জনস্বাস্থ্য ইস্যুতে রূপ নিচ্ছে। তাই দ্রুত, সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ ছাড়া এই পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে উঠবে।
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ ওয়াসার দায়িত্বপ্রাপ্ত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী (সিইও) জাকির হোসেন জানান, আমরা ওয়াসা নিয়ে খুবই কনসার্ন। আমরা কাজ করছি, দ্রুতই সকল সমস্যার সমাধান হবে।