বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

|

আষাঢ় ১১ ১৪৩২

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনেই নির্বাচনী প্রস্তুতি তুঙ্গে জামায়াতের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১০:৪৬, ২৬ জুন ২০২৫

নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনেই নির্বাচনী প্রস্তুতি তুঙ্গে জামায়াতের

ফাইল ছবি

নারায়ণগঞ্জ জেলার রাজনীতিতে একটি সময় ছিল যখন জামায়াতে ইসলামী সীমিত পরিসরে সক্রিয় থাকলেও মাঠপর্যায়ে তাদের উপস্থিতি চোখে পড়ত না। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে রাজনীতির গতিপথে পরিবর্তন এসেছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জেলার পাঁচটি আসনেই এখন জামায়াতের সক্রিয় উপস্থিতি লক্ষণীয়। মাঠে নামছেন শীর্ষস্থানীয় নেতারা। তৃণমূলেও বাড়ছে গতিশীলতা।

জেলা পর্যায়ে জামায়াতের সাংগঠনিক কাঠামো ও নির্বাচনী প্রস্তুতির তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তারা প্রার্থী বাছাই থেকে শুরু করে জনসংযোগ, সভা-সমাবেশ, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, ত্রাণ ও সেবা কার্যক্রম চালিয়ে সংগঠনের ঘাঁটি শক্ত করতে শুরু করেছেন।

আওয়ামী শাসন আমলে প্রকাশ্যে তেমন একটা সভা, সমাবেশ বা রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হতে না পারলেও গত ৫ আগষ্টের পর থেকে প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ পেয়ে বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছেন দলটির নেতাকর্মীরা।

গত ৫ আগষ্টের পর থেকে এই পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের কোন জামায়াত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে কোন প্রকার  বিতর্কিত কর্মকান্ডের অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

রূপগঞ্জ আসনে জামায়াত থেকে নির্বাচন করবেন আনোয়ার হোসাইন মোল্লা। পেশায় ব্যবসায়ী হলেও রাজনৈতিক মাঠে তার সরব পদচারণা রয়েছে। বিগত কয়েক মাস ধরেই তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। স্থানীয় বাজার, মসজিদ-মাদ্রাসা এবং মেহনতি জনগণের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গেও তার যোগাযোগ নিবিড়। দলীয় সূত্র বলছে, তিনি রূপগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়নে কমিটি পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।

এইদিকে নারায়ণগঞ্জ ২ আসনে লড়াই করবেন অধ্যাপক ইলিয়াস মোল্লা, যিনি দুপ্তারা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলা জামায়াতের সমাজকল্যাণ সম্পাদক। তার পরিচিতি একজন শিক্ষাবান্ধব, সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত রাজনীতিক হিসেবে। জামায়াতের মূলধারার রাজনীতির পাশাপাশি আড়াইহাজারে তার একটি শক্তিশালী তৃণমূল ভিত্তি রয়েছে। ইলিয়াস মোল্লা বেশ কয়েকটি ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থাকায়, ইসলামপন্থী ভোটারদের বড় অংশ তার দিকে ঝুঁকছে বলে স্থানীয়দের অভিমত।

সোনারগাঁয়ের ৩ আসনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে ড. ইকবাল হোসাইন ভূঁইয়াকে। তিনি একজন শিক্ষিত ও বুদ্ধিজীবী শ্রেণির প্রতিনিধি। তার প্রার্থিতা সোনারগাঁয়ের জামায়াতপন্থী ভোটারদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। পাশাপাশি স্থানীয় ইসলামী সংগঠনগুলো ও দারুল উলুম মাদ্রাসাভিত্তিক কিছু সমর্থনও তার প্রতি রয়েছে। তিনি ইতোমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে সফর করে কর্মীদের সংগঠিত করছেন এবং সামাজিক নানা উদ্যোগেও অংশ নিচ্ছেন।

নারায়ণগঞ্জ মহানগর জামায়াতের আমীর এবং দলটির কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আব্দুল জব্বার ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ ৪ আসনে নির্বাচনে অংশ নেবেন। তিনি ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি হওয়ায় সংগঠন পরিচালনায় দক্ষ এবং তৃণমূলে রয়েছে তাঁর শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন মাদ্রাসা, কওমি আলেম সমাজ, ওয়ার্ডভিত্তিক সংগঠনগুলো তার প্রতি আস্থা রাখছে। এরইমধ্যে কয়েকটি এলাকার কওমি পটভূমির নেতাদের সঙ্গে তার একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সদর-বন্দর ৫ আসনে নির্বাচনে অংশ নেবেন মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমেদ। তিনি জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরের সাবেক আমীর। রাজনীতির পাশাপাশি তার আলেম সমাজের মধ্যে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। বন্দর উপজেলার ইসলামিক বক্তৃতা, হুজুর সমাজ এবং তৃণমূল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো তার জন্য জনসম্পৃক্ত প্রচারণা শুরু করেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গনে জামায়াত এখন আর শুধু নিভৃতচিন্তার নাম নয় তারা এখন মাঠে, তারা কর্মসূচিতে এবং তারা নির্বাচনী লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। বিরোধী জোট যদি মাঠে দুর্বল থাকে, তাহলে জামায়াত-ঘনিষ্ঠ প্রার্থীরা এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে ফেলতে পারে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

জামায়াতের নির্বাচনী মাঠ সম্পর্কে নারায়ণগঞ্জ মহানগর জামায়াতের আমীর মাওলানা আব্দুল জব্বার জানান, আমরা যেহুতু সুযোগ পেয়েছি কাজ করার ইনশাআল্লাহ আমরা মানুষের কাছে পোঁছাব এবং মানুষের দুঃখ কষ্ট শুনবো আমাদের সাধ্য মতো আমরা তাদের সেবা করার চেষ্টা করবো। আর এই পর্যন্ত যেহুতু আমাদের দলের কোন কর্মীর বিরুদ্ধে কোন ধরনের কোন অপকর্মের অভিযোগ নেই, আশা করি আগামী দিনগুলোতেও এমন স্বচ্ছ থাকার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।