বুধবার, ০৪ জুন ২০২৫

|

জ্যৈষ্ঠ ২০ ১৪৩২

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

অর্ধশতাধীক নারী-পুরুষ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত

রূপগঞ্জে টানা বৃষ্টিতে ৭ গ্রামের ২০ হাজার মানুষ পানিবন্ধি, চরম দূর্ভোগ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১০:৫১, ২ জুন ২০২৫

আপডেট: ১০:৫১, ২ জুন ২০২৫

রূপগঞ্জে টানা বৃষ্টিতে ৭ গ্রামের ২০ হাজার মানুষ পানিবন্ধি, চরম দূর্ভোগ

ফাইল ছবি

গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় ৭ গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানি বন্ধি হয়ে পড়েছে। জলাবদ্ধতা বন্যায় রুপ নিয়েছে। এতে করে প্রায় অর্ধশতাধীক নারী-পুরুষ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। পানি বন্ধি হয়ে পড়েছে স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। এতে করে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চরম ভাবে ব্যহত হচ্ছে। জলাবদ্ধতায় পুকুরের মাছ ভেসে গিয়ে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছেন স্থানীয় মাছ চাষীরা। ইষ্টউড সিটি নামের এক আবাসন কোম্পানি বালু ফেলে ছোট বড় সব মিলিয়ে প্রায় ২০টি পানি নিষ্কাশন সরকারী খাল ভরাট করায় এ জলাবন্ধতার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। শনিবার (৩১ মে) সড়েজমিনে ঘুরে উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভা, ভুলতা ও গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের ৭টি গ্রামের এমন চিত্র দেখা যায়।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কাঞ্চন পৌরসভা, ভুলতা ও গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের হাটাবো টেকপাড়া, কালাদি, নলপাথর, নরাবো, কোশাব, আইতলা, ডুলুরদিয়া গ্রামে প্রায় ২০ হাজার মানুষের বসবাস। এসব গ্রামের কৃষি জমিতে পানি নিষ্কাশনের জন্য ছোট বড় সব মিলিয়ে প্রায় ২০টি খাল রয়েছে। এসব খাল দিয়ে বৃষ্টির পানি সড়ে যেতো। বেশ কয়েক বছর ধরে ইষ্টউড সিটি নামের একটি আবাসন প্রকল্প পানি নিষ্কাশন সরকারী খাল গুলো ভরাট করে দখলে নিয়ে গেছে। এতে করে বৃষ্টি হলেই পানি আটকে গিয়ে জলাবন্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে এলাকা গুলো।

বিশেষ করে, হান্ডি মার্কেট হতে ডেওরি বিল পর্যন্ত খাল, মুকসুর বাড়ি থেকে মগার বাড়ি পর্যন্ত চিপা খাল, কালাদি থেকে ভুলতা বড় খাল, বাড়ৈপাড় থেকে ডুলুরদিয়া হয়ে নলপাথর খাল, ইকবালেরটেক থেকে নরাব খাল এবং নরাব থেকে নলপাথর পানি নিষ্কাশন খালটি বালু ভরাট করে বন্ধ করে ফেলা হয়েছে।

কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে এখন ওই ৭টি গ্রামে জলাবন্ধতা সৃষ্টি হয়ে প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে। ওইসব এলাকায় বেশ কয়েকটি পাঁকা রাস্তা ডুবে গেছে। ময়লা ও আবর্জনাযুক্ত এসব পানিতে শিশু, বৃদ্ধ থেকে শুরু করে নারী-পুরুষরা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। গত কয়েক দিনে প্রায় অর্ধশতাধীক মানুষ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এসব গ্রামের মানুষ এ সমস্যায় ভুগছেন প্রায় ৫ বছর ধরে। গত এক সপ্তাহ আগেও শত শত গ্রামবাসী সরকারী খাল ভরাট, অবৈধ ভাবে মানুষের বাড়িঘরের অনুমোদনের প্রতিবাদে ইষ্টউড সিটির বিরুদ্ধে মানববন্ধন কর্মসুচী পালন করেছেন। প্রতিবাদ করেও কোন সুফল পাচ্ছেননা এলাকাবাসী।

হাটাবো টেকপাড়া এলাকার ঝালমুড়ি বিক্রেতা সেলিম মিয়া অভিযোগ করে বলেন, আমাগো গরীব মানুষের কথা কেডা হুনবো। মেঘ আইলে বন্যা হইয়া বাড়িঘর তলাইয়া ডুইবা মরি। আবার হুনছি আমাগো বাড়িঘরও নাকি অনুমোদন নিয়া গেছে কামাল সাবে। কহন জানি বাড়িঘর থুইয়া যাওন লাগেগা।

আনোয়ারা বেগম নামের এক গৃহিনী অভিযোগ করে বলেন, আপনেরা দেইখা যান আমরা বন্যায় ডুবছি। বাড়িঘর উঠানে হাটু ও কোমড় পানি। বাধের ভেতর বসবাস করলেও মনে অইবো নদীর পাড়ের মানুষ আমরা। দয়া কইরা স্থায়ী ভাবে আমাগো সমাধান কইরা দেন।

নুরে মদিনা ইন্টারন্যাশনাল মাদরাসার শিক্ষার্থী ইমান হোসেন, আলী মোহাম্মদসহ আরো অনেকে জানান, তাদের মাদ্রাসায় যাওয়ার রাস্তাটি ডুবে গেছে। কোন স্থানে হাটু পানি আবার কোন কোন স্থানে কোমড় পানি। পানি ভেঙ্গে ভিজেই তারা মাদ্রাসায় আসছেন। এতে করে তাদের লেখাপড়া চরম ভাবে ব্যহত হচ্ছে।

পারভিন আক্তার নামের আরেক গৃহিনী বলেন, যে ভাবে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে এখন নৌকায় চড়া ছাড়া আমাদের উপায় নেই। এছাড়া বসতঘরে পানি ডুকে পড়ায় রান্নাবান্না করতে পারছিনা। বাজার থেকে খাবার কিনে এনে খাচ্ছি। সরকারী খাল গুলো দখলমুক্ত করে পরিষ্কার করা হলে পানি আর থাকবেনা। স্থানীয়দের এ ধরনের অভিযোগের শেষ নেই।

এ বিষয়ে ইষ্টউড সিটির প্রজেক্ট ইনচার্জ জসিম উদ্দিন বলেন, খাল ভরাটের বিষয়টি মিথ্যা। আমরা এখানে ব্যবসা করতে এসেছি মানুষের ক্ষতির জন্য নয়। আমরা পানি সড়ানোর জন্য খাল আরো পরিষ্কার করে দিয়েছি।

গ্রামবাসীর অভিযোগের ভিত্তিত্বে জসিম উদ্দিন বলেন, পানি কি কারনে আটকে গেছে সেটা গ্রামের মানুষ বলতে পারবে। আমাদের সঙ্গে তাদের কোন সংযোগ নেই।

রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আইভি ফেরদৌস বলেন, ইদানিং চর্ম ও পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আমরা তাদের চিকিৎসা ও ওষুধপত্র দিচ্ছি। তবে, ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি থেকে সকলকে সাবধান থাকতে হবে।

কাঞ্চন পৌরসভার প্রশাসক তারিকুল ইসলাম বলেন, জলাবন্ধতার বিষয়টি শুনেছি। সড়েজমিনে গিয়ে গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।