রোববার, ০৪ মে ২০২৫

|

বৈশাখ ২০ ১৪৩২

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে দূরত্ব কমবে ৯০ কিলোমিটার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১৫:৫৩, ৪ মে ২০২৫

ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে দূরত্ব কমবে ৯০ কিলোমিটার

প্রতীকী ছবি

ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ। এ পথে রেল সংযোগের উন্নয়নে কয়েক বছর ধরেই গুরুত্বপূর্ণ কর্ডলাইন নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।

নানা কারণে থমকে যায় সেই পরিকল্পনা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার বন্ধ হয়ে যাওয়া সেই কর্ডলাইন সমীক্ষার কাজ ফের শুরুর উদ্যোগ নিয়েছে।

রেলপথে ঢাকা-চট্টগ্রামের দূরত্ব ৩২০ কিলোমিটার। এই পথে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাতায়াত করতে হয় টঙ্গী-ভৈরব-আখাউড়া ঘুরে। এতে সময় বেশি লাগে। এই বাড়তি সময় কমিয়ে এনে ট্রেনযাত্রা সহজ করতে ঢাকা-লাকসাম কর্ডলাইন নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। চলছে সমীক্ষার কাজ।

রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কর্ডলাইন নির্মাণ ব্যয় কম, আবার নির্মাণে সময়ও লাগবে কম। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সর্বোচ্চ যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি রেলে আয় বাড়বে। বর্তমানে চলমান রুটে মাত্র তিন শতাংশ মালামাল ট্রেনে বহন করা সম্ভব হচ্ছে। বাকি ৯৭ শতাংশ মালামাল সড়ক পথেই পরিবহন হয়ে থাকে। কর্ডলাইন নির্মাণ হলে রেলে মালামাল পরিবহন বাড়বে প্রায় ৩৭ শতাংশ। সব মিলিয়ে যাত্রী ও মালামাল উভয় দিক থেকেই রেলের আয় বাড়বে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম পথে কর্ডলাইন নির্মাণের এ উদ্যোগ অনেক আগের। প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছিল ২০১০ সালে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের আওতায় ২০১২ সালে এই লাইন নির্মাণের একটি প্রস্তাবও তৈরি করেছিল রেলপথ মন্ত্রণালয়। তবে অজ্ঞাত কারণে সে উদ্যোগ আর এগোয়নি।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এই প্রকল্পে আগ্রহ দেখানোর পর ২০২০ সালে ২৩৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকার কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর ‘রেলওয়ে কানিক্টিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট প্রিপারেটরি ফ্যাসিলিটি’ নামের প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা-লাকসাম রুটে কর্ডলাইন নির্মাণের জন্য সমীক্ষার কাজ শুরু করা হয়।

জাপান, ফ্রান্স ও মালয়েশিয়ার তিন পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের একটি কনসোর্টিয়ামকে এ কাজে নিযুক্ত করা হয়। ২০২৪ সালে সেই কাজ থেমে যায়। গত ৫ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার সেই কর্ডলাইন সমীক্ষার কাজ শুরুর উদ্যোগ নেয়। এটি বাস্তবায়নে গেল বছরের নভেম্বরে এ সংক্রান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক থেকেই সমীক্ষা পুনরায় শুরুর নির্দেশনা আসে।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগের সমীক্ষা যাচাই-বাছাই করে ঢাকা-কুমিল্লা-লাকসাম কর্ডলাইনের জন্য মোট চারটি বিকল্প রুটের কথা উপস্থাপন করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সেখানে অপশন-১ এ, অপশন-১ বি, অপশন-২, অপশন-৩ নির্ধারণ করা হয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রামে পথে যাতায়াতে সময় লাগে ৫ ঘণ্টার বেশি। এই পথে কর্ডলাইন নির্মাণ হলে সময় কমবে দেড় ঘণ্টা, আর দূরত্ব কমবে প্রায় ৯০ কিলোমিটার।

‘কর্ডলাইন কারিগরি সহায়তা প্রকল্প’র পরিচালক মো. আবিদুর রহমান বলেন, আমাদের সবশেষ বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই প্রকল্পে সমীক্ষার কাজ চলমান। এটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে জুনে। বৈঠকে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সমীক্ষা শেষে চূড়ান্ত করা হবে কোন কোন প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা সহজ হবে।

তিনি বলেন, বর্তমান আর্থিক বাস্তবতা, বিদ্যমান রেল নেটওয়ার্কের পরিপ্রেক্ষিতে এবং কার্যকর যাত্রীসেবা নিশ্চিতে নারায়ণগঞ্জ-লাকসাম কর্ডলাইনে টালগো ইন্টারসিটি মডেলটি বেশি উপযোগী। এটি দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য, তুলনামূলক সাশ্রয়ী এবং বহুমাত্রিক ব্যবহারের উপযোগী।