প্রতীকী ছবি
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার কাদিরগঞ্জ এলাকায় চট্টগ্রাম থেকে ভাড়া করে এনে মালবাহী জাহাজ কেটে বিক্রির ঘটনায় মালিকপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা করা হয়েছে।
অভিযুক্ত নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি শাহাদাত হোসেনের বাবা সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম ও জাহাজের মালিক রাকেশ শর্মা তিনশ টাকা স্ট্যাম্পে এ সমঝোতা চুক্তি সম্পন্ন করেন।
শনিবার (২৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকার নয়াপল্টন নুরজাহান ট্রেড সেন্টারের মিহির ওভারসিজ কোম্পানি লিমিটেডের কার্যালয়ে এ সমঝোতা করা হয়।
সমঝোতায় প্রধান শর্ত আরোপ করা হয় কেটে ফেলা জাহাজটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হবে। সমঝোতা চুক্তিতে ৮ জন সাক্ষী স্বাক্ষর করেন। সমঝোতা চুক্তিতে উভয়পক্ষ আরও ১১টি শর্ত জুড়ে দেন।
এতে জাহাজটি সম্পূর্ণ মেরামতের জন্য ৪৫ দিন সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। জাহাজটি ছাত্রদল নেতার বাবা পূর্বের মতো ফিরিয়ে আনতে জাহাজের বর্তমান প্লেটের থিকনেস অনুযায়ী উইন্স, দোতলা কেবিন, টেপারসহ সম্পূর্ণ জাহাজ মেরামত করে দেবেন। তবে, মেরামতের সব প্রকার খরচ বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম বহন করলেও শ্রমিক খরচ বাবদ ১৫ লাখ টাকা জাহাজের মালিক রাকেশ শর্মা বহন করবেন। প্রথম ধাপে রাকেশ শর্মা কাজ শুরুর প্রথম সপ্তাহে চেক মারফত ৮ লাখ টাকা দেবেন। কাজ শেষ হওয়ার পর বাকি ৭ লাখ টাকা চট্টগ্রাম বার্জ ও টাগ মালিক সমিতির মাধ্যমে পরিশোধ করবেন।
জাহাজটি মেরামতের সময় জাহাজ মালিকপক্ষের দেখাশোনার সময়ে কোনো প্রকার হুমকি প্রদান করতে পারবেন না। হুমকি-ধমকি দিলে আইনের আশ্রয় নিতে পারবেন রাকেশ শর্মা। এছাড়াও জাহাজ মেরামতের পর জাহাজটি চট্টগ্রাম বার্জ ও টাগ মালিক সমিতির কাছে পৌঁছে দিতে হবে। মেরামত শেষে জাহাজ হস্তান্তরের পর থানায় দায়ের করা মামলা উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে প্রত্যাহার করবেন। মামলা প্রত্যাহারের সব খরচ অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম বহন করবেন।
জানা যায়, উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের কাদিরগঞ্জ এলাকায় অভিযুক্ত ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি শাহাদাত হোসেনের বাবা সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলামের মালিকানাধীন মেঘনা নদীর তীরে এইচবি হারুন এন্ড ব্রাদার্স মেঘনা শিপইয়ার্ডে জাহাজটি ৭ জনের সিন্ডিকেট কেটে টুকরো করে বিক্রি শুরু করেন। এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী জাহাজ মালিক রাকেশ শর্মা বাদী হয়ে সোনারগাঁ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরের দিন বুধবার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে নজরুল ইসলাম নামের একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি শাহাদাত ৭ জনের একটি সিন্ডিকেট করে চট্টগ্রাম থেকে ডাম্ব বার্জ (ডিবি) নামের একটি জাহাজ ভাড়া করে নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে শাহাদাতের নেতৃত্বে বিএনপি কর্মী মো. জাফর, ইকবাল হোসেন, নজরুল ইসলাম, এমদাদুল হক, জাফর মিয়া ও হোসেনের একটি সিন্ডিকেট করে তার বাবার মালিকানাধীন শিপইয়ার্ডে জাহাজটি কেটে স্টিলের প্লেট বিক্রি শুরু করেন। গত ২৩ নভেম্বর সকালে মোবাইল ফোনে এক পরিচিত ব্যক্তি তাদের জাহাজ কেটে ফেলেছে বলে জানায়। খবর পেয়ে ওইদিন রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের মালবাহী জাহাজ কেটে ফেলার সত্যতা পান। পরে ৭ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজের মালিক রাকেশ শর্মা জানান, চট্টগ্রাম বার্জ ও টাগ মালিক সমিতির প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে শাহাদাতের বাবার সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে। তাদের জাহাজটি মেরামত করে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে এনে চট্টগ্রামে হস্তান্তর করবেন। আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে জাহাজটি মেরামত করে দেবেন।

