রোববার, ০৪ মে ২০২৫

|

বৈশাখ ১৯ ১৪৩২

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

কদম রসূল সেতুর পশ্চিমাংশের মুখ পরিবর্তনের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১২:৩৬, ৩ মে ২০২৫

আপডেট: ২১:৫০, ৩ মে ২০২৫

কদম রসূল সেতুর পশ্চিমাংশের মুখ পরিবর্তনের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন

সংবাদ সম্মেলন

নারায়ণগঞ্জের শহরের কদম রসূল সেতুর যথাযথ সমীক্ষার মাধ্যমে সেতুটির পশ্চিমাংশের মুখটি পুনঃনির্ধারণের দাবি জানিয়েছে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক আন্দোলন।

শনিবার (৩ মে) নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবী জানান নারায়ণগঞ্জ নাগরিক আন্দোলনের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি। 

এসময় তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে বড় একটি সমস্যা যাতায়াত ব্যবস্থা। একটি নগরে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ সড়ককে আদর্শ হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের এখানে রয়েছে ৭ শতাংশ। এখানে অপরিকল্পিত নগরায়নের সাথে সাথে গড়ে উঠেছে অপরিকল্পিত পরিবহন ব্যবস্থা। এক সময় যাতায়াতের সুব্যবস্থার কারণে যে নারায়ণগঞ্জ পূর্ববঙ্গের সিংহদ্বারে পরিণত হয়েছিল, আজকে একশ চল্লিশ বছর পরে তা জনদুর্ভোগের বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে চলমান বিভিন্ন প্রকল্পের মধ্যে একটি হচ্ছে শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব ও পশ্চিম পাড়কে সংযুক্ত করার প্রয়োজনে নদীর উপর কদম রসুল সেতু নির্মাণ। সেতু নির্মাণের সংবাদটি আমাদেরকে আনন্দিত করেছে।

তিনি বলেন, এই প্রকল্পটি ২০১৭ সালে একনেকে অনুমোদিত হয়। এর কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৮ সালে। এর মেয়াদ ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। এর প্রকল্প ব্যয় ৭৩৫ কোটি টাকা। সেতুটির মূল দৈর্ঘ ৩৮০ মিটার, প্রশন্ত ১২ দশমিক ৮০ মিটার। সংযোগ সড়ক ১৩৭৯ মিটার। সেতুটি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) যৌথভাবে নির্মাণ করবে। কিন্তু এই সেতুর প্রকল্প-প্রক্রিয়া দীর্ঘ দিন ধরে চলমান থাকলেও এই সেতু ব্যবহারকারি নাগরিকদের সাথে এ প্রকল্প নিয়ে মতবিনিময় বা তাদের অভিমত জানার জন্য কখনো কোন কর্তৃপক্ষ কোন উদ্যোগ গ্রহণ করে নাই।

তিনি বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বহু প্রকল্প, মেগা-প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে যা, কেবল মাত্র নিজেদের ব্যক্তি বিশেষের অর্থ লুটপাটের উদ্দেশ্যে গ্রহণ করা হয়েছে বলে পরবর্তীতে প্রমাণ হয়েছে। সেসব প্রকল্প বিভিন্ন জায়গায় উপকারের চেয়ে ক্ষতির কারণ হয়ে উঠেছে। কদম রসুল সেতুটির প্রকল্প নকশায় দেখা যায় এর পশ্চিমাংশের মুখটি শহরের অত্যন্ত ব্যস্ততম সড়ক ফলপট্টি এলাকায় নারায়ণগঞ্জ কলেজের সামনে এসে নেমেছে। এইটি এভাবে বাস্তবায়িত হলে তা নারায়ণগঞ্জের মানুষের জন্য একটি ভয়াবহ দুর্ভোগের কারণ হবে বলে আমরা মনে করছি। এমনিতে এক নং রেলগেট থেকে পুরো সিরাজোদ্দৌলা সড়কটিতে সব সময় অস্বাভাবিক ট্র্যফিক জ্যাম থাকে। এখানে শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ বড় স্কুল নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুল, পাশে নারায়ণগঞ্জ কলেজ, এর সাথে দিগুবাবুর বাজারে প্রদেশের মুখ, এইটি শহরের রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল ও লঞ্চঘাটের সংযোগ সড়ক, সর্বপরি দেশের বৃহত্তর রঙ ও সুতার বাজার টানবাজারে প্রবেশের এইটি একটি প্রধানতম সড়ক হওয়ায় এখানে প্রতিনিয়ত যেমনি ভয়াবহ যানজট লেগে থাকে, আবার এর সাথেই রেল ক্রসিং থাকায় বিভিন্ন সময় এখানে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এমনি একটি ব্যস্ততম সড়কে কদম রসুল সেতুর মুখ যদি যুক্ত হয় তা হলে এই সেতু থেকে যানবাহন সড়কে নামার ক্ষেত্রে যেমনি বড় ধরণের সংকটে পড়বে, অন্যদিকে এই পুরো এলাকাটিই সম্পূর্ণ ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে উঠবে। এত বড় সেতুর নকশা তৈরির ক্ষেত্রে নগরের এই বাস্তবতা সংকটটি গভীর ভাবে বিবেচনায় নেয়া উচিত ছিল বলে আমরা মনে করি। এই প্রকল্পে যথাযথ সমীক্ষার ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে বলে আমরা মনে করছি।

তিনি বলেন, এই সেতু দিয়ে ঘন্টায় কত যান চলাচল করবে এবং তার ধারণ সক্ষমতা সংশ্লিষ্ট সড়কের কতটুকু রয়েছে তা এই প্রকল্পের নকশা তৈরির ক্ষেত্রে সঠিক ভাবে গুরুত্ব পেলে, এত বড় ভুল হতো বলে আমরা মনে করি না। প্রতিদিন শীতলক্ষ্যা নদীর বন্দর ঘাট দিয়ে এক লক্ষ বিশ হাজার থেকে দেড় লক্ষ লোক যাতায়াত করে। এই সংখ্যার ৬০ শতাংশ যদি সেতু ব্যবহার করে তা হলে সেতু ও সড়কে তার প্রভাব কতটা পড়বে তার যথাযথ সমীক্ষা এখানে করা হয় নাই। এই শহরে আজকে সাড়ে নয় লক্ষ মানুষের বসতী। যদি বর্তমান হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায় তাহলে আগামী এক'শ বছরে এই সংখ্যা দাঁড়াবে এক কোটিরও বেশি। এ ধরণের প্রকল্প অন্তত একশ বছর সামনে রেখে গ্রহণ করা হয়ে থাকে।

তিনি আরো বলেন, আমরা অতি দ্রুত যথাযথ সমীক্ষার মাধ্যমে এই ত্রুটি সমাধান করে গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুটির পশ্চিমাংশের মুখটি পুনঃনির্ধারণের দাবি জানাচ্ছি। আমরা উল্লেখ করতে চাই অপরিকল্পিত উন্নয়ন জনদুর্ভোগ বৃদ্ধি করা ছাড়া কোন সুফল বয়ে আনে না। যেনতেন ভাবে প্রকল্প সম্পন্ন করে নারায়ণগঞ্জের মানুষের দুর্ভোগ আরও বৃদ্ধি করার কোন উদ্যোগ নারায়ণগঞ্জবাসী মেনে নেবে না।