
১৯ জুলাই আন্দোলনকারীদের উপর সশস্ত্র হামলা চালান শামীম ওসমান ও তার অনুসারীরা
নারায়ণগঞ্জে জুলাই আন্দোলন চলাকালীন সময়ে ১৯ জুলাই আন্দোলনকারীদের উপর সশস্ত্র হামলা চালান শামীম ওসমান ও তার অনুসারীরা। অপকর্ম ঢাকতে সেদিন নারায়ণগঞ্জ শহরে সংবাদকর্মীদের প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। বিভিন্ন ছাদ ও বাসা থেকে কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লেও সেগুলো ছিল অস্পষ্ট। তবে সাম্প্রতিক সময়ে নারায়ণগঞ্জের ফটোগ্রাফার পারভেজ আসিফ আহমেদ উৎস আন্দোলনকারীদের ওপর ওসমান বাহিনীর চালানো হামলার বেশ কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করার পর তা ছড়িয়ে পড়েছে।
এসকল ছবিতে ফুটে উঠেছে আন্দোলনকারীদের ওপর শামীম ওসমান ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের চালানো বর্বরতার দৃশ্য। ১৯ জুলাই দিনটি ছিল শুক্রবার। এর আগে শনিবার দিনভর চলা সংঘাতে রণক্ষেত্রে পরিনত হয়েছিল নারায়ণগঞ্জ। শুক্রবার সকাল থেকেই থমথমে ছিল নারায়ণগঞ্জের পরিস্থিতি। জুমার নামাজের পর শহরের ডিআইটি মসজিদসহ বিভিন্ন মসজিদ থেকে আন্দোলনকারীরা সংগঠিত হতে চেষ্টা করলে আন্দোলনকারীদের দমন করতে সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে মাঠে নামেন শামীম ওসমান। সেদিন নারায়ণগঞ্জ শহরে পুলিশের তেমন একটা উপস্থিতি দেখা যায়নি।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রত্যক্ষদর্শী পারভেজ আসিফ আহমেদ উৎস জানান, ১৯ জুলাই বাদ জুমা মিছিল করতে করতে ডিআইটি থেকে ২ নং গেইটের দিকে রওনা হয় ছাত্র জনতা। ধীরে ধীরে ভরে যায় ২ নং গেইট চত্ত্বর। হঠাৎ এই মিছিলকে কাউন্টার করে সন্ত্রাসী বাহিনী বের হয়ে আসে নারায়ণগঞ্জ ক্লাব থেকে। কয়েক দফা ককটেল ও অসংখ্য গুলি ছুড়ে মিছিলের দিকে।
তিনি আরও জানান, আন্দোলনকারীরা রেল গেইট ক্রস করলেই নারায়ণগঞ্জ ক্লাব থেকে শামীম ওসমান, অয়ন ওসমান ও শাহ নিজাম সহ আরো আওয়ামী নেতা-কর্মীরা সশস্ত্র হামলা করে আন্দোলকারীদের উপর। মিছিলটি লক্ষ্য করে তারা ককটেল ছুড়ে মারে। এলোপাথাড়ি গুলি করে। ওদের সাথে অটোমেটিক রাইফেল ও ছিলো, তবে গুলি করা হইছিলো পিস্তল দিয়ে। পিস্তলধারী ছিলো কমপক্ষে ৬ জন। আমাকে ছবি তুলতে দেখে ৩ টি গুলি ছুড়ে গুলি লাগে গাছের ডালে। সেখান থেকে পিছু হটার সময়। আরেক জন গুলি করে।
সেই দিনের ভয়াবহ পরিস্থিতির বর্ণনা দিতে গিয়ে উৎস বলেন, সামনের দিকের গোলাগুলি ফেইস করতে পারলেও যখন ৩ দিক থেকে গুলির আওয়াজ পাইলাম তখন আর ২ নং গেইট থাকা সম্ভব ছিলো না। তবে অনেকে তখনও সামনে থেকে ঢিল ছুড়ে যাচ্ছিলো। পিছনে বন্ধু ডাক দিলে দৌড়ে গিয়ে অটোতে উঠি। এসময় অলরেডি প্রাইভেট কার দিয়ে পাঠাগার পর্যন্ত সন্ত্রাসীরা পৌছে যায়। তাদের সাথে যুক্ত হয় দেওভোগ থেকে আসা আরেক দল। অটোতে করে যখন মন্ডলপাড়া পুলে আসি তখন অবস্থা বেগতিক দেখে অটো থেকে নেমে যাই। ভাড়া দেওয়ার সাথে সাথেই আমাকে উদ্দেশ্য করে গুলি করে৷ গুলি শরীরে না লাগলে কে গুলি করছে তা বের করা যাইতো। ব্লিডিং এর কারনে কোনোরকমে রিক্সায় করে সেফ লোকেশনে চলে যাই। কিন্তু রিক্সার পিছন পিছন ও অটোতে করে কিছু লোক তখনও আসছিলো। পরে চালাকি করায় আর পিছু করতে পারে নাই৷
তিনি আরও জানান, শার্ট প্যান্ট রক্তে ভরা। ঐদিকে ভিক্টোরিয়াতে গেলে জান যাবে। পরে নিজেই বন্ধুর সহযোগীতায় জোড়া তালি দিয়ে ব্যান্ডেজ করে জামা ধুয়ে ইস্ত্রি করে শুকিয়ে আবার রাস্তায় বের হই৷ রক্ত তখন ও পরে কিন্তু খেয়াল করি নাই৷ বাসায় আইসা খাওয়ার টাইমে হঠাৎ পুরো রক্তে মাখামাখি অবস্থা৷ আবারও ড্রেসিং করি৷ কিন্তু সমস্যা হওয়ায় আসরের নামাজ পড়ে বাসা থেকে বের হয়ে লেক পাড়ে যাই৷ তখন ও ডিআইটি ধুম গোলাগুলি। ৫/৬ জন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আমার সামনে দিয়েই ভিক্টোরিয়াতে যায়৷ পরে ভিক্টোরিয়াতেও হামলা হয়।
তিনি বলেন, আমি এক প্রাইভেট ক্লিনিকে যাই। ক্লিনিকের মালিক ভয়ে চিকিৎসা করতে চায় না৷ পরে ব্যাক করি। ঐদিন রাত্রে ডিআইটি-পাঠাগার-সিটি কর্পোরেশন ইত্যাদি জায়গায় ১২ টা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নিজেদের লোক দ্বারা ভাঙচুর চলে। এগুলি রাস্তায় থেকেই ঐ অবস্থাতেই দেখি৷ তখন ছাত্র-জনতা সদরে বিচ্ছিন্ন অবস্থায়। রাম দা-পাইপগান-পিস্তলের ছড়াছড়ি। ১২ টা নাগাদ ১৪৪ ধারা জারি হলে বাসায় চলে আসি। পরিস্থিতি এতো খারাপ ছিলো যে চিকিৎসা করাতে গেলে গ্রেফতার হিওয়ার সম্ভাবনা ছিলো। ১৯ তারিখের পর ৯ দিন পলাতক ছিলাম৷