বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

|

আষাঢ় ১৮ ১৪৩২

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

২৮৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ, বাবা-ছেলের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১১:০৮, ২ জুলাই ২০২৫

২৮৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ, বাবা-ছেলের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

ফাইল ছবি

নারায়ণগঞ্জের তারাবো পৌরসভার আওয়ামী লীগ মনোনীত সাবেক মেয়র মো. মাহবুবুর রহমান খান ও তার ছেলে যুবলীগ নেতা কে এম মাহমুদ হাসানের বিরুদ্ধে ২৮৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। 

ভুক্তভোগীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত রবিবার তাদের দেশ ত্যাগের নিষেধাজ্ঞা ও পাসপোর্ট জব্দের নির্দেশ দেন ঢাকা জেলা জজ অতিরিক্ত আদালতের যুগ্ম জেলা জজ রুবায়েত ফেরদৌস। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, তারাবোর সাবেক মেয়র মাহবুবুর রহমান খান ও তার ছেলে কে এম মাহমুদ হাসান রুপালী ব্যাংক (মামলা নং ৯৬/১৯) থেকে ১৬৬ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন (২০১৯ সাল), যা বর্তমানে ২০৯ কোটি টাকা হয়। এছাড়াও ২০১১ সালে সাউথইস্ট ব্যাংক থেকে তিন ধাপে ঋণ নেয় এই পরিবার। 

সাউথইস্ট ব্যাংকের মামলা সূত্রে জানা যায়, ২১০১/২০১১-এ ৭৮ কোটি ৮৩ লাখ ৩২ হাজার টাকা, ২১০২/২০১১-এ ৩ কোটি ৩৬ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ও ২১০৩/২০১১-এ ২৭ কোটি টাকা ঋণ নেয়। 

রূপালী ব্যাংক ও সাউথইস্ট ব্যাংক থেকে মোট ২৭৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন এই পরিবার। এছাড়াও বিশিষ্ট কাগজ ব্যবসায়ী মো. ইসহাক দুলালের কাছ থেকে ব্যবসায়িক লেনদেনে দুই বারে ১১ কোটি ৩ হাজার টাকা লোন নেন। এ ঘটনায় ইসহাক দুলাল দুটি মামলাও করেন। এছাড়া গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক (মামলা নম্বর ১৪৭৪২/২১), এনআরবি ব্যাংক (মামলা নম্বর ৩৪৮৯,৩৪৯০,৩৪৯১/২০১২ এবং ৫৯৯০/২৩) ও রাজনৈতিক নানা মামলাসহ এই পরিবারের ১৪টি মামলা রয়েছে। 

বর্তমানে এই লোনের টাকা পরিশোধ না করে আত্মসাৎ করে বাবা-ছেলে বিদেশে পালানোর পাঁয়তারা করছেন। পরে ভুক্তভোগী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক ইসহাক দুলাল একটি (মানিসুট মামলা নম্বর- ০২/২০২৪) মামলা করে আদালতে আবেদন করেন।

আদালত দরখাস্তের বিষয়বস্তু পর্যালোচনা করে, মাহবুবুর রহমান খান ও তার ছেলে কে এম মাহমুদ হাসানকে স্বশরীরে উপস্থিত হওয়ার জন্য আদেশ প্রদান করেন কিন্তু বারবার সুযোগ প্রদানের পরেও আদালতে স্বশরীরে হাজির না হওয়ার বিষয়টি আদালতের নিকট সন্দেহের উদ্যেগ ঘটায়।

সবকিছুর পরিপেক্ষিতে গত রবিবার আওয়ামী লীগ মনোনীত নারায়ণগঞ্জের তারাবো পৌরসভার সাবেক মেয়র মাহবুবুর রহমান খান ও তার ছেলে যুবলীগ নেতা কে এম মাহমুদ হাসান সিয়ামকে দেশ ত্যাগের নিষেধাজ্ঞা ও পাসপোর্ট জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা জেলা জজ অতিরিক্ত আদালতের যুগ্ম জেলা জজ রুবায়েত ফেরদৌস। 

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ইসহাক দুলাল বলেন, ‘মাহবুব ও ছেলে সিয়াম ছিলো ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর। স্থানীয় সাবেক মন্ত্রী ও তার ছেলের সকল অবৈধ কার্যকলাপের সুবিধাভোগী এই বাবা ও ছেলে। জুলাই আন্দোলনে শত শত কোমলমতি ছাত্রদের ওপর হামলা ও গুলির নির্দেশদাতা ছিলেন এই বাবা-ছেলে। এদের বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানাসহ একাধিক থানায় মামলাও রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকার পতনের পর বাবা-ছেলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আশ্রয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু কোনো আশ্রয় না পেয়ে দেশ ত্যাগ করার চেষ্টা করেন। দেশের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। তাই দ্রুত এদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নেওয়ার অনুরোধ রইল।’

প্রসঙ্গত, প্রায় ২০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের তারাব পৌরসভার সাবেক মেয়র মাহবুবুর রহমান খান ও তার স্ত্রী মহিমা রহমানের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারা ও দণ্ডবিধি ১০৯ ধারায় মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে।