সোমবার, ০৬ মে ২০২৪

|

বৈশাখ ২২ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

নেতাকর্মীদের আইনি সহায়তায় নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ ফোরামের বিরুদ্ধে, গঠিত হল ফ্রন্ট

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১৮:০১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

নেতাকর্মীদের আইনি সহায়তায় নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ ফোরামের বিরুদ্ধে, গঠিত হল ফ্রন্ট

ফাইল ছবি

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সমর্থিত আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কর্মকান্ডের তীব্র সমালোচনা করে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আইনজীবী ফ্রন্ট নামে নতুন একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ আদালতের বিএনপি পন্থি আইনজীবীরা। ভবিষ্যতে এই সংগঠনের মাধ্যমে বিএনপির নেতাকর্মীদের আইনী সহায়তা, নারায়ণগঞ্জ আদালতে অগণতান্ত্রিক কর্মকান্ডের সমালোচনা সহ আইনজীবী ফোরামের বির্তকিত কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকবেন বলেন প্রত্যয় নিয়েছেন তারা। সেই সাথে ভবিষ্যতে সংগঠনটি বৃহৎ আকার করতে পারলে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন থেকে এই সংগঠন থেকে প্রার্থী দেওয়া হবে বলেও পরিকল্পনা নিয়েছেন তারা।

তাদের অভিযোগ, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম দুই বছরের জন্য কমিটি করা হলেও দুই বছরের অধিক সময় পর কমিটি প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়াও সরকার বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে বিএনপির যে সকল নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার হয়ে কারাবরণ করেছে তাদেরকে আইনজীবী ফোরামের পক্ষ থেকে কোন রকম আইনী সহযোগীতা করা হয়নি। 

তবে এসব অভিযোগকে অসত্য বলছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতৃবৃন্দরা। তাদের দাবী তাদের অভিযোগ অসত্য, কমিটি কেন্দ্র থেকে দেওয়ার পর প্রকাশ করা হয়েছে। কারো পছন্দ না হলে সে তখন পদ থেকে পদত্যাগ করতে পারেন। কিন্তু কমিটি প্রকাশের পর কেউ পদত্যাগ করেনি। আর নেতাকর্মীদের আইনী সহায়তা না করতে পারার বিষয়টি এখন তারা সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করছেন বলেও মন্তব্য করেছেন ফোরামের নেতারা। কারন যারা ফ্রন্ট গঠন করেছেন তারা সবাই বিএনপি থেকে বহিস্কৃত এবং তৃনমূল বিএনপিতে যাওয়া নেতা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের অনুসারী।

জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আইনজীবী ফ্রন্টের গঠনের অন্যতম একজন নেতা অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান মোল্লা  জানিয়েছেন, আমরা যে দলের রাজনীতি করি, সেই দলের আইনজীবীদের একটি সংগঠন হচ্ছে। যেটার নাম হচ্ছে জাতীয়বাদী আইনজীবী ফোরাম। দুই বছর মেয়াদী কমিটি দেওয়া হয়। কিন্তু কমিটি হওয়ার দুইবছরের আগে কমিটিই প্রকাশ করা হয়নি। কমিটি সম্পূর্ন গোপন রাখা হয়েছে। দুইবছর পর কমিটি প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু প্রকাশের পরেও সভাপতি, সিনিয়র সহ সভাপতি, সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক ছাড়া কে কোন পদে আছে আজ পর্যন্ত আমরা কেউ জানিনা। ঢাকায় বিএনপির ২৮ তারিখের জনসভায় যে ঘটনা ঘটেছে। এরপর সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যেভাবে মামলা মোকাদ্দমা হয়েছে। ওই সময় নারায়ণগঞ্জের ৭টি থানায় বিএনপির নেতাকর্মীদের যেভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ওই পরিস্থিতিতে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের একটা ভূমিকা রাখা উচিত ছিলো। কিন্তু ফোরামের ন্যূনতম কোন ভূমিকা ছিলো না। আমরা তখন নেতাকর্মীদের আইনী লড়াই লড়েছি। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম নামে মাত্র সংগঠন রয়েছে কিন্তু কোন কাজে নেই। তাই আমরা বিএনপি পন্থি আইনজীবীরা এই সংগঠনটি তৈরি করেছি। তার মানে এই না আমরা আইনজীবী ফোরামের বিপক্ষে আমরা। উনারদের যে ভূল ত্রুটি গুলো রয়েছে সেই ভূল ত্রুটি গুলোর প্রতিবাদ আমরা করবো। এটা চলমান থাকবে। যতদিন পর্যন্ত তাদের এই অপকর্ম বন্ধ না হবে।

তিনি আরো বলেন, এই ফ্রন্ট যদি ভবিষ্যতে আমরা আরো শক্তিশালী করতে পারি। তাহলে আমরা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আইনজীবী ফোরাম থেকে যেমন মনোনয়ন দেওয়া হয় আমরাও আমাদের এই ফ্রন্ট থেকে নির্বাচনের জন্য প্রার্থী মনোনয়ন দিবো। তবে এখনই আমরা এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না আমরা ফ্রন্টের নেতৃবৃন্দের সাথে আরো বিস্তর আলোচনা করবো।

এ ব্যাপারে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ন কবির জানান, কমিটি হলে সবার জানার বিষয় না। আইনজীবী ফোরাম একটি নির্বাচিত কমিটি। কেন্দ্র থেকে ৫জনকে নির্বাচিত করে দেওয়া হয়েছে। এরপর তো সবাইকে জানিয়ে কমিটি করা যায়না। অনেকের পদ পছন্দ নাও হলে পারে। তখন যে পদত্যাগ করতে পারে। যখন আমরা কমিটি ঘোষণা দিছি তখন সারা বাংলাদেশেই বিভিন্ন জেলায় কমিটি ঘোষণা হলে সেটা হোক বিএনপি বা আওয়ামী লীগ, যাদের পছন্দ হয়না তারা বিবৃতি দিয়ে পদত্যাগ করে। আমাদের আইনজীবী ফোরামের কমিটি ঘোষণা হওয়ার পরে কেউ যায়নি। যদি কেউ ঘোষণা দিয়ে যায় তাহলে তার যাওয়ার সুযোগ আছে যেতে পারেন। এখন যারা বলতেছে তারা তো কমিটি বানায়নাই। কমিটি বানিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি, আর সেন্ট্রাল থেকে প্রতিটি কমিটি আড়াই বছর তিন বছর করে বিলম্ব হয়েছে। এখন যদি তাদের পছন্দ না হয় তারা চলে যাক। ঢাকায় কেন্দ্রে গিয়ে বলুক আমাদের পছন্দ হয়নি।

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন প্রধান জানান, উনারা যে বক্তব্য দিয়েছেন সেগুলো সম্পূর্ন অসত্য। তাদের যদি কোন কথা থাকতো তাহলে সেটা তারা ফোরামের নেতৃবৃন্দদের সাথে বলতে পারতেন। আসলে যারা ওই সংগঠনটি করেছেন তারা সবাই অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের রাজনীতি করেছে। এখন তারা মূল নেতৃত্বে আসতে চাচ্ছে। তবে তারা যে উদ্যোগ নিয়েছেন আমরা তাদের স্বাগত জানাই। তবে যা কিছু করতে হবে শৃঙ্খলার মধ্যে থেকে করার আহবান জানাচ্ছি। আর তারা যে মামলা মোকাদ্দমার কথা বলছে এর মধ্যে আমি একমাত্র আজিজুর রহমান মোল্লা ছাড়া আর কাউকে মামলা পরিচালনা করতে দেখি নাই, বাকি যা করছে ফোরাম থেকে করছে। তখন আমাদের দলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, ফোরামের সভাপতি, সেক্রেটারী এমনকি আমিও ৪ থেকে ৫টা করে মামলার আসামি হয়েছি। তখন আমরা কেউ আদালতে আসতে পারিনি। এখন তারা সেই সুযোগটাই নিচ্ছে অন্য কিছুনা।

উল্লেখ্য, গত বুধবার ২৪ এপ্রিল দুপুরে আদালত সংলগ্ন হিমালয় চাইনিজ রেস্টুরেন্টে জাতীয়তাবাদী বিভিন্ন পর্যায়ের আইনজীবীদের বৈঠকের মধ্য দিয়ে সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। অ্যাডভোকেট একেএম ওমর ফারুক নয়নে পরিচালনায় বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো, রফিক আহমেদ। ওই বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান মোল্লা, অ্যাডভোকেট কামাল হোসেন মোল্লা, অ্যাডভোকেট মো. আলম খান, অ্যাডভোকেট আজিজ আল মামুন, অ্যাডভোকেট মো. আনিসুর রহমান, অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন সরকার, অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন, অ্যাডভোকেট হামিদা খাতুন লিজা, অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ গোলাম মোর্শেদ গালিব, অ্যাডভোকেট মাসুদা বেগম সম্পা, অ্যাডভোকেট সীমা সিদ্দিকী, অ্যাডভোকেট আল আমিন সিদ্দিকী, অ্যাডভোকেট মোহসীন শেখ, অ্যাডভোকেট সুমন মিয়া, অ্যাডভোকেট সুলতানা নাজনীন, অ্যাডভোকেট মাহমুদা আক্তার, অ্যাডভোকেট অজুফা বেগম পুতুল, অ্যাডভোকেট শাহ আলম শামীম, অ্যাডভোকেট কামরুজ্জামান ভূইয়া রয়েল, অ্যাডভোকেট লায়েস মিয়া, অ্যাডভোকেট জিয়াউর ইসলাম, অ্যাডভোকেট শফিউদ্দিন সজল, অ্যাডভোকেট শাহ জালাল, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আদনান মোল্লা ও অ্যাডভোকেট তাছলিমা আক্তার সহ অন্যান্য আইনজীবীরা।