শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

|

বৈশাখ ৫ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

রাজপথে নেতাকর্মীদের দাপুটে অবস্থান ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ

গিয়াস খোকনের অগ্নিপরীক্ষা মঙ্গলবার!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১৮:০৬, ২১ নভেম্বর ২০২২

গিয়াস খোকনের অগ্নিপরীক্ষা মঙ্গলবার!

ফাইল ছবি

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির নবগঠিত কমিটির প্রথম রাজপথের কোন কর্মসূচী পালিত হবে মঙ্গলবার। বিগত কমিটির রাজপথের মূল সড়কে বিশাল সমাগম নিয়ে নেতাকর্মীদের দাপুটে অংশগ্রহণের সেই ঐতিহ্য কি ধরে রাখতে পারবে এ কমিটি নাকি এবার তারা সেটি পারবেনা। এ নিয়ে চলছে কানাঘুষা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে বিএনপির সমাবেশের লিফলেট বিতরণকালে পুলিশের গুলিতে নিহত সোনারামপুর ইউনিয়নের ছাত্রদলের সহ-সভাপতি নয়ন মিয়া নিহতের প্রতিবাদে কেন্দ্র কর্তৃক আগামী ২২ নভেম্বর মঙ্গলবার দেশের সকল জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ কর্মসূচী ঘোষণা দিয়েছে দলটি। এটি জেলা বিএনপির নতুন কমিটির জন্য একটি পরীক্ষা। মূলত এ পরীক্ষাটি আহবায়ক গিয়াসউদ্দিন ও সদস্য সচিব খোকনের জন্য। তবে তারাও এটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছেন।  

জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ৯ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর)। এ কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াসউদ্দিনকে ও সদস্য সচিব করা হয়েছে জেলা যুবদলের আহ্বায়ক গোলাম ফারুক খোকনকে। এতে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে মামুন মাহমুদ, মনিরুল ইসলাম রবি, শহিদুল ইসলাম টিটু, মাসুকুল ইসলাম রাজীব, লুতফর রহমান খোকা, মোশারফ হোসেন ও জুয়েল আহমেদকে।

দলের সূত্রমতে, জেলা বিএনপির বিগত কমিটির নেতারা অলিগলি থেকে জেলা বিএনপিকে টেনে রাজপথের মূল সড়কে এনেছেন। প্রতিটি কর্মসূচীতে নেতাকর্মীদের জাগ্রত করেছেন এবং তাদের সমন্বয় করে রাজপথে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছেন। সমন্বয় করেছেন জেলা বিএনপির সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকে। প্রতিটি উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের যুক্ত করেছেন কর্মসূচীতে। রাজপথে নিজেদের দক্ষ সংগঠক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন সর্বশেষ কমিটি বিদায়ী নেতারা। সেই নেতাদের সেই রাজপথের অবস্থান কি এবার নতুন নেতৃত্ব গিয়াস খোকন ধরে রাখতে পারবেন কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। 

দলের একাধিক সুত্র জানায়, নতুন কমিটিতে বিএনপির নারায়ণগঞ্জের শক্তিশালী বলয়গুলোকে মাইনাস করা হয়েছে। এতে জেলা কমিটিতে প্রভাবের ইতি টানা হয়েছে দলের নির্বাহী কমিটির সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, সদস্য আজহারুল ইসলাম মান্নান, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান, জেলা বিএনপির পৃষ্ঠপোষক খ্যাত শাহ আলম, বিএনপির শক্তিশালী বলয়ের নিয়ন্ত্রক জাহিদ হাসান রোজেল, সাবেক জেলার সভাপতি (বহিষ্কৃত) তৈমূর আলম খন্দকার বলয়ের নেতাকর্মীদের। এর মধ্যে থানা বিএনপির নেতাদের অনেকের সাথে বর্তমান ঘোষিত কমিটির সম্পর্ক ভালো নয়। এর মধ্যে সোনারগাঁ বিএনপি, রূপগঞ্জের একাংশের বিএনপি, ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জের একাংশের বিএনপি, আড়াইহাজার বিএনপির রয়েছে দূরত্ব। এর মধ্যে সদ্য বিলুপ্ত কমিটির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক মনিরুল ইসলাম রবি ও সদস্য সচিব মামুন মাহমুদও এখনো নবগঠিত কমিটির সাথে সরাসরি যুক্ত হননি। তারা রয়েছেন দূরে দূরে। সব মিলিয়ে জেলা বিএনপির নবগঠিত কমিটি রাজপথে নিজেদের শক্তি কতটা জানান দিতে পারবে তা নিয়ে রয়েছে সন্দেহ। 

জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনের প্রবীন নেতাদের মতে, নারায়ণগঞ্জে এতদিন রাজপথে বিএনপির নেতারা দাপুটে অবস্থানে ছিলেন। গত কমিটির নেতারা রাজপথ দাপড়ে বেড়িয়েছেন। তবে সেটা যে একেবারেই বাধাহীন ছিল তা নয়। তাদের নেতৃত্বে দলের ১ সেপ্টেম্বরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে পুলিশ বাধা দেয়। বিএনপির নেতাকর্মীরা বাধার পাল্টা জবাব দিলে গুলি চালায় পুলিশ। এতে নিহত হন যুবদল কর্মী শাওন। এর মধ্যে আওয়ামীলীগের একাধিক গ্রুপ শাওনকে নিজেদের লোক দাবি করে তার বাড়ির আশেপাশে মিছিল করে এবং তার পরিবারকেও আওয়ামীলীগের পরিবার হিসেবে দাবি করে। তবে শাওন হত্যার পর অনেকেই মনে করেছিল নারায়ণগঞ্জে বিএনপির রাজপথের ইতি হতে চলেছে। কিন্তু সকলের সেই ধারণা বদলে দিয়ে শাওনের বাড়িতে হাজার হাজার বিএনপি নেতাকর্মীদের ঢল, তার কবরে দোয়া ও তার পরিবারের পাশে দলের নেতাকর্মীদের দাঁড়ানোয় ঘুরে যায় দলের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। জেলায় আরো শক্ত অবস্থান তৈরী করে বিএনপি। পরবর্তীতে কেন্দ্র ঘোষিত শাওন হত্যার প্রতিবাদে নানা কর্মসূচীতে দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে মাঠে টিকে থাকে বিএনপি। 

এর মধ্যে প্রতিটি কর্মসূচীতে হয়তো শহীদ মিনার নয়তো চাষাঢ়া গোল চত্বরে থমকে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের এনে বক্তব্য দেয়ান জেলার নেতারা। জেলার প্রাণকেন্দ্রে দাঁড়িয়ে সরকারের নানা সমালোচনা ও স্থানীয় ক্ষমতাসীনদের নানা কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করেন কেন্দ্রীয় নেতারা। প্রতিটি কর্মসূচীতে জেলার সকল ইউনিট ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের মিছিলে থমকে দাঁড়াত জেলার এই প্রাণকেন্দ্র। মিছিলের পর মিছিলে নজর কাড়তো জেলাবাসীর। ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষও যুক্ত হতে শুরু করেছিল শহরে বিএনপির সেই জোয়ারে।

দলের একাধিক নেতার সাথে আলাপ করে জানা যায়, বর্তমান জেলা বিএনপির কমিটির আহবায়ক গিয়াসউদ্দিন নারায়ণগঞ্জের আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের আসনের বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি আগামী নির্বাচনেও ধানের শীষের প্রার্থী হতে পারেন আর সেজন্য নারায়ণগঞ্জের রাজপথে তাকে দাঁড়াতে দেবেনা শামীম ওসমান ও তার নেতাকর্মীরা। এ ছাড়াও গিয়াসউদ্দিনের সাথে যাদের দূরত্ব রয়েছে এবং কমিটিতে যাদের মাইনাস করা হয়েছে তাদেরকেও হয়তো তেমনভাবে পাশে পাবেন না তিনি। এর মধ্যে প্রশাসনিক বাধাও আরেকটি ধাক্কা হতে পারে গিয়াসউদ্দিনের জন্য। সব মিলিয়ে নগরীর প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়ায় নবগঠিত কমিটির প্রথম কর্মসুচী কি করতে পারবেন কিনা এটি নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেই রয়েছে দ্বিধাদ্বন্দ্ব।

এর মধ্যে সদস্য সচিবের জন্য এটি একেবারেই নতুন চ্যালেঞ্জ। কারণ বিগত সময়ে জেলা বিএনপির মত মূল দলের তাও নারায়ণগঞ্জের মত জেলায় কোন সদস্য পদেও ছিলেন না তিনি। তার নেই জেলা বিএনপির নিয়ন্ত্রণের পূর্বাবিজ্ঞতা। এর মধ্যে জেলা যুবদল থেকে সরাসরি তিনি জেলা বিএনপির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পেয়েছেন। তার নিজের বাড়ি রূপগঞ্জ উপজেলায়। সেখানে সাবেক চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচিতি তার। জেলা যুবদলের দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে তার বাড়িতে হামলা হয় একাধিকবার। এসব হামলার প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ করতে পারেননি খোকন। হামলার প্রতিবাদে রূপগঞ্জে একটি শক্তিশালী মিছিলও করতে পারেননি তিনি। আর তাই জেলা বিএনপিকে নগরীর প্রাণকেন্দ্রে এনে কর্মসূচী সফল করানোটা তার জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এখন দলের নেতাকর্মী ও নারায়ণগঞ্জবাসীর মনে প্রশ্ন, গিয়াস খোকন কি পারবে নগরীর প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়ায় সফল কর্মসূচী করে রাজপথে দাপুটে অবস্থান ধরে রাখতে নাকি পারবেনা। আর যদি কর্মসূচী পালন করার জন্য রাজপথে জড়োও হয় বিএনপির নেতাকর্মীদের তাদেরকে কি শামীম ওসমান কোন বাধা দেবেন নাকি বিএনপির প্রতিবাদ কর্মসূচী তাদেরকে পালন করতে দেবেন। সব মিলিয়ে মঙ্গলবারের কর্মসূচীকে গিয়াস খোকনের জন্য অগ্নিপরীক্ষা হিসেবেই দেখছেন জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।