শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

|

বৈশাখ ১২ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

একনজরে ফুলকপির গুণাগুণ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

একনজরে ফুলকপির গুণাগুণ

সংগৃহীত

ফুলকপি। শীতে সহজলভ্য এই সবজিকে যদি বলা হয় এটি শর্ষে পরিবারভুক্ত, অনেকেই পাগল ভেবে বসবেন। এই সত্যি শুনে একটু অবাক হওয়ারই কথা। তবে এটি মূলত ব্রাসিকা বংশের একটি প্রজাতি। যার নাম ব্রাসিকা ওলারেসা। এটি আবার ‘কোল’ ফসলেরও অন্তর্ভুক্ত। প্লিনি তার উন্নত উদ্ভিদের বর্ণনা ‘ন্যাচারাল হিস্ট্রি’তে সবজিটিকে অভিহিত করে করেছেন এভাবে: ‘এক্স অমনিবাস ব্রাসিক জেনারিবাস সুভিসিমা ইস্ট সাইমা’। সাইমা নামেই প্লিনি একে তাঁর বইয়ে উল্লেখ করেছেন, যা বাঁধাকপির বংশের মধ্যে সবচেয়ে সুস্বাদু।

মধ্যযুগে ফুলকপির আদি রূপ সাইপ্রাস দ্বীপের সঙ্গে যুক্ত ছিল এমনটাই ধারণা করা হয়। ফুলকপির এই জাতটি আবার পশ্চিম ইউরোপেও বিস্তার লাভ করেছিল, যা কখনো কখনো সাইপ্রাস কোলওভার্ট নামেও পরিচিতি পায়। ইতালিয়ানরা একে ডাকত কলি-ফাইরি নামে। চমৎকার স্বাদের জন্য এটি বাগানে বিশেষ মর্যাদা পেতে লাগল। তবে চতুর্থ লুইয়ের সময় পর্যন্ত ফুলকপি সাধারণত গ্র্যান্ড টেবিল পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি। আর ভারতে তথা ভারতীয় উপমহাদেশে আসে ব্রিটিশদের হাত ধরে ১৮২২ সালে। এই হলো ফুলকপির মোটামুটি ইতিহাস।

কলিফ্লাওয়ার বা ফুলকপির নামটি এসেছে ইতালীয় ক্যাভলফিয়োর থেকে। যার অর্থ ‘ক্যাবেজ ফ্লাওয়ার’ বা ‘বাঁধাকপি ফুল’। তবে নামের অরিজিন কিন্তু ভিন্ন। লাতিন শব্দ কুলিস মানে বাঁধাকপি ও ফ্লাস মানে ফুল থেকে মূল শব্দটি এসেছে। আর এখন এই মৌসুমি সবজিটি নানা স্বাদে, নানা ঢঙের রান্নায় আমাদের খাবার টেবিলে পরিবেশিত হচ্ছে। ফুলকপির সাধারণ তরকারি ছাড়াও ফুলকপি ক্রাস্ট পিৎজা, ফুলকপির কোরমা, কারি মসলাদার ফুলকপি, গার্লিক পার্মেজান ফুলকপি এমন নানা বাহারি নামে খাবার হয়ে আমাদের রসনায় স্বাদ জুগিয়ে চলেছে। দৃষ্টিনন্দন এই সবজিটির রয়েছে বিবিধ উপকারী গুণও।

একনজরে ফুলকপি

  • শত শত ঐতিহাসিক ও বর্তমানে বাণিজ্যিক জাতের ফুলকপি বিশ্বজুড়ে ব্যবহৃত হয়। নর্থ ক্যারোলাইনা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে প্রায় ৮০টি নর্থ আমেরিকান জাতের একটি বিস্তৃত তালিকা রয়েছে।

  • রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) থেকে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে ফুলকপিকে ‘পাওয়ার হাউস অব ফ্রুটস অ্যান্ড ভেজিটেবল’ তালিকায় ২৪তম স্থানে রাখা হয়েছে।

  • সাধারণত সাদা ফুলকপিই আমরা দেখি ও খেয়ে থাকি। কিন্তু রঙের দিক থেকেও এর বিভিন্নতা আছে। কমলা, সবুজ এমনকি বেগুনি রঙের ফুলকপিও পৃথিবীতে রয়েছে।

  • রং যা-ই হোক না কেন, স্বাদ প্রায় একই। হালকা, সামান্য মিষ্টি আবার কিছুটা বাদামের মতো স্বাদেরও হয়ে থাকে। ফুলকপি হলো ক্রসিফেরাস ভেজিটেবল, যাতে প্রাকৃতিকভাবেই ফাইবার ও ভিটামিন বি অধিক পরিমাণে থাকে।

গুণাগুণ

এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট ক্যানসারের বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। ফুলকপির একটি গ্রুপ রয়েছে, যা গ্লুকোসিনোলেটস নামে পরিচিত। যখন এটি চিবানো হয় এবং হজম হয়, তখন এই পদার্থগুলো এমন যৌগে বিভক্ত হয়ে যায়, যা ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে—এগুলো কোষকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টিভাইরাল এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল প্রভাবও রয়েছে।

ফুলকপির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট ক্যানসারের বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখে

ওজন কমানো ও হজম শক্তি বাড়ানোর জন্য ফাইবার রয়েছে, কোলাইন যা স্মৃতিশক্তির জন্য প্রয়োজনীয় এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানে পূর্ণ এই ফুলকপি।

এতে বিদ্যমান উপাদানগুলো হাড়কে মজবুত করতে ও কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমকে উন্নত করতে সহায়তা করে।

ফুলকপি পানি ও ফাইবারের ভালো উৎস। উভয় উপাদানই কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ, সুস্থ পরিপাকতন্ত্র বজায় রাখা এবং কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।

গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়েটারি ফাইবারগুলো প্রতিরোধক্ষমতা এবং প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে। তাই এটি কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, ডায়াবেটিস, ক্যানসার ও স্থূলত্বের মতো প্রদাহজনিত অবস্থার ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।

এর উচ্চ ফাইবার গ্রহণের ফলে রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করতে, ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে এবং স্থূলতাজনিত লোকের ওজন হ্রাস করতে সহায়তা করে।