সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

|

বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

পানির দাবীতে নাসিকের ২ ওয়ার্ডে বিক্ষোভ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ২৩:০৭, ২৯ মার্চ ২০২৪

পানির দাবীতে নাসিকের ২ ওয়ার্ডে বিক্ষোভ

ফাইল ছবি

সুপেয় পানির বিষয়ে বারবার আশ্বস্ত করলেও গত ১বছরেরও বেশী সময় ধরে পানি নেই নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বন্দর এলাকার ২১ ও ২২নং ওয়ার্ডে। বিশেষ করে চলতি রমযানে অবর্ননীয় দুর্ভোগের মুখে শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর বিক্ষোভ করেছেন এই দুই ওয়ার্ডের হাজারো জনগন। তারা বন্দর বাজার এলাকার প্রধান সড়ক অবরোধ করে সেখানে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন। এসময় বিক্ষোভ চলাকালে আশপাশের শত শত মহিলাও রাস্তায় বের হয়ে আসেন। বিক্ষোভকারীরা এসময় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের আচরণকে ইজরাইলের সাথে তুলনা করে কাফনের কাপড় পরে রাস্তায় নামবেন বলে ঘোষনা দিয়েছেন।

বিক্ষোভকারীরা জানান, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) ২০১৯ সালের শেষ দিকে ওয়াসার দ্বায়িত্ব বুঝে নেয়ার পর আমরা আনন্দিত হয়েছিলাম যে পানি সমস্যা সমাধান হবে। ২০২২ সালে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের আগে বর্তমান মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা আমাদের সুপেয় পানি ব্যবস্থা করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ছিলেন। গত এক বছর ধরে আমরা পানি পাচ্ছি না। নতুন মটরের ব্যবস্থাও করতে ব্যর্থ হয়েছে সিটি কর্পোরেশন। অথচ আমরা পানির বিল দিয়ে যাচ্ছি, এমনকি নতুন গভীর নলক’প বসাতে গেলেও সিটি কর্পোরেশনের লোকজন এসে সেখানে কর বসিয়ে যাচ্ছে। পানি ছাড়া  এই দুই ওয়ার্ডের প্রায় ৪০হাজার মানুষ অবর্ননীয় দুর্ভোগ পাহালেও মেয়র কিংবা স্থানীয় কাউন্সিলররা একটি বারের জন্যও আমাদের দুর্ভোগ দেখতে আসেননি। ওয়াসার গাড়ী নিয়ে পানি দেয়ার ব্যবস্থা করার কথা থাকলেও সেটিও নিয়মিত না এবং এই বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য সেটা অত্যন্ত অপ্রতুল। এসময় এলাকায় প্রবীন-মুরুব্বীরা জানান, কয়েক মাস আগে আমরা পানির দাবী নিয়ে মেয়র আইভীর কাছে গিয়েছিলাম। ভোট চাওয়ার সময় যে আচরণ দেখেছিলাম এখন দেখলাম ঠিক তার উল্টো। 

তারা বলেন, আমরা সকল দল মত নির্বিশেষে এখানে সমবেত হয়েছি। যে সিটি কর্পোরেশনের শত শত কোটি টাকার বাজেট হয়, সেই সিটি কর্পোরেশন ওয়াসার পানির পাম্প স্থাপন করতে পারেনা এমনটি আমরা বিশ্বাস করি না। বর্তমান সরকার যে উন্নয়ন করছে তার সবকিছু ম্লান করে দিচ্ছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন। রোযার মাসে বাসা বাড়ীতে পানি থাকার যে কষ্ট সেটা মেয়র ও কাউন্সিলররা উপলব্ধি করতে পারেন না। বিশেষ করে বাড়ীর মা বোনেরা পানির জন্য দূর দূরান্তে ছুটে যাচ্ছেন। বিক্ষোভকারীরা এসময় বলেন, এখন আমাদের আল্লাহর কাছে বিচার দেয়া ছাড়া একটি রাস্তাই খোলা আছে। সেটি হলো কাফনের কাপড় পরে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাওয়া। আমরা কোন হুশিয়ারী দিচ্ছি না, আমরা অবশ্যই প্রধানমন্ত্রীর কাছে হাজার হাজার ভুক্তভোগীরা যাবো।

এদিকে বিক্ষোভকারীদের দাবী সঠিক নয় বলে দাবী করেছেন সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন। তিনি জানান, এক বছর ধরে পানি নেই এটা সম্পূর্ণ অসত্য। কিছুদিন ধরে সেখানে সমস্যা হচ্ছে এবং আমরা সোনাকান্দা থেকে একটি ইন্টারকানেকশন এর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যে পাম্পাগুলো আছে সেগুলো পুরাতন ,তাই সেগুলো সার্ভিসিং করতে হবে। সার্ভিসিং করতে গেলে সেগুলো বন্ধ হয়ে যাবে এবং রোযার মাসে পানি বন্ধ হয়ে যাবে। এজন্য রোযার পর সোনাকান্দার কানেকশনটি চালু করে এগুলোর কাজ করা হবে। এখন বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে গাড়ী দিয়ে পানি দেয় হচ্ছে। অপরদিকে ওয়াসার দ্বায়িত্ব ছেড়ে দেয়া ও সাবিসিডির বিষয়টি কি অবস্থায় আছে সেব্যপারে তিনি তাৎক্ষনিক কোন মন্তব্য করেননি।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের শেষ দিকে ওয়াসার দ্বায়িত্ব বুঝে নেয়ার মাত্র ১৮মাসের মাথায় সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ওয়াসার দ্বায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার এই ইচ্ছা প্রকাশ করা হয়। ২০২১ সালের ২৩ জুন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রেরিত (৪৬.১৬.০০০০.০০৯.৪৩.০৯১.১৮-৩৪নং স্মারকে) এক চিঠিতে নগরীতে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে অপরাগতা প্রকাশ করে দায়িত্ব ফিরিয়ে নেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করা হয়। ঐ চিঠির পর বেশ কয়েকটি পত্র চালাচালির পর গত ২৮ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের উপ সচিব মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত অপর একটি (স্মারক নং ৪৬.০০.০০০০. ০৭১.২২. ০৭৭.১৫.৮২৪) চিঠিতে বলা হয়,‘ স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন ২০০৯ এর ৪১ ধারা ও তফসিল ৩ এর ৮.১ অনুযায়ী, কর্পোরেশন নগরীতে সাধারণ ও ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত পরিমানের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করবে। সেই লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের দায়িত্ব ২০১৯ সালে ওয়াসা থেকে গ্রহণ করার পর কি কারনে এ দায়িত্ব ফিরিয়ে দিতে চায়, অথবা কি কারনে পানি সরবরাহের কার্যক্রমে সিটি কর্পোরেশন অপারগ হচ্ছে তা, পর্যালোচনার জন্য সভা আহ্বানের পূর্বে কারণ সম্পর্কে অবহিত হওয়া প্রয়োজন’। পরবর্তীতে বছরে ২৩ কোটি টাকা সাবসিডি চেয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ে আরো একটি পত্র প্রেরণ করা হয়েছে বলেও সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়।