শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪

|

বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

শহরমুখী মানুষ, বিকেন্দ্রীকরণের তাগিদ নগর পরিকল্পনাবিদদের

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১১:০৮, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

শহরমুখী মানুষ, বিকেন্দ্রীকরণের তাগিদ নগর পরিকল্পনাবিদদের

শহরমুখী মানুষ

নারায়ণগঞ্জে অপরিকল্পিত নগরায়ণে বাড়ছে নানা সমস্যা। বড় কাজের আশায় গ্রাম থেকে শহরে ছুটে আসছে মানুষ। নগরে এসে তারা নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বাড়ছে বেকারত্ব, অবনতি হচ্ছে পরিবেশের। 

এছাড়া অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে প্রতি বছর হারিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি, সুপেয় পানির স্বল্পতা দেখা দিচ্ছে। পাশাপাশি খালবিল ভরাট করে বাড়ছে আবাসন প্রকল্প। নগরে মানুষের ঘনত্ব বাড়লেও রাস্তাঘাট বাড়ছে না, ফলে বাড়ছে যানজট। হকার সমস্যাও একই কারণে সৃষ্ট বলে মনে করছেন অনেকে। ঘনবসতির কারণে ব্যাপকভাবে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। নগর ও নাগরিকের এসব সমস্যা সমাধানে সঠিক পরিকল্পনা করে বিকেন্দ্রীকরণ প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ শহরে, উপজেলা ও ইউনিয়নগুলো থেকে ছাড়াও বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী এসে কাজ করছেন। তাদের এই কর্মক্ষেত্র বা কাজের জন্য শহরের আসায় শহরকে তৈরী হয়েছে বাড়তি চাপ। এতে বেড়েছে যানজটসহ নানা নাগরিক সমস্যা। যদি এটি পরিকল্পিতভাবে নগরায়ন ও আবাসনসহ সকল ব্যবস্থাপনা করা যেত তাহলে সমস্যা থাকতোনা। তবে শিল্পাঞ্চল খ্যাত নারায়ণগঞ্জে এটি যে নতুন তা নয়। বহু আগে থেকেই শিল্প বিপ্লবের জন্য এটি অপরিহার্যও ছিল। ১৯০০ সাল থেকে যদি বৈশ্বিক নগরায়ণ লক্ষ্য করা যায়, তাহলে দেখা যাবে, নগরায়ণের সঙ্গে বেড়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগও। আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়তে থাকলে আমাদের নগরায়ণ ও উন্নয়ন টেকসই হবে না। তারা বলছেন, পরিকল্পিত নগরায়ণের অভাবে পরিবেশগত ঝুঁকি বাড়ছে। শিল্পাঞ্চলের কারনে অপরিকল্পিতভাবে আবাদি জমিতে বড় বড় স্থাপনা তৈরি করায় ফসলের জমি কমে যাচ্ছে।

বৈশ্বিকভাবে অনেক শহর রয়েছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শহরগুলোতে ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা দেখা দিচ্ছে। এই চিত্রটা দিন দিন বাড়ছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, বড় শহরগুলোতে নদী ভাঙনের শিকার প্রচুর মানুষ আসে। এছাড়া কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিতে শহরে প্রতিনিয়ত আসছে মানুষ। ফলে শহরে জনসংখ্যার ঘনত্ব যেমন বাড়ছে তেমনি বাড়ছে সড়কে যানজট। যে কারণে মানুষ নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। চাপ বাড়ছে আবাসনের ওপর, ফলে দূষিত হচ্ছে—মাটি, পানি। কমে যাচ্ছে বায়ুর মান। বাড়ছে বস্তির সংখ্যা।

এই নগর পরিকল্পনাবিদ জানান, পরিকল্পিতভাবে নগরায়ণ হলে জনসংখ্যার অনুপাতে নাগরিক সুবিধা দেওয়া সম্ভব হতো। এ কারণে প্রয়োজন সমগ্র দেশকে নিয়ে পরিকল্পনা করা। পৌরসভাগুলোতে পরিকল্পিতভাবে সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিনিয়োগ করতে হবে। তাহলে বিকেন্দ্রীকরণ হবে। মানুষ তার নিজের শহরেই কর্মসংস্থান, চিকিত্সাসেবা পেলে, তারা আর বড় শহরে আসবে না। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশ খুব ছোট দেশ, এখানে ভবিষ্যতে খাদ্য সংকট হতে পারে, সে কারণে কৃষিজমি, জলাভূমি, বনভূমি, পার্ক প্রাকৃতিক ভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, বিশ্বব্যাপী অপরিকল্পিত নগরায়ণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ দুটোই বাড়ছে। আগামী দিনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে শহরকে রক্ষা করতে পরিকল্পিত উন্নয়নের বিকল্প নেই। আমাদের নগরের জন্য যথার্থ পরিকল্পনা দরকার। উন্নয়নকাজে আমাদের যথেষ্ট সমন্বয়হীনতা রয়েছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আইন অমান্য করার সংস্কৃতি। আইন প্রণয়নের পাশাপাশি বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

নগর গবেষণা কেন্দ্রের (সিইউএস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশে নগরায়ণের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। গ্রাম থেকে লোক কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে শহরের দিকে ধাবিত হচ্ছে। গ্রামীণ সমাজব্যবস্থায় কৃষি উত্পাদন ব্যতীত অন্য পেশা গ্রহণের সীমিত সুযোগ ও গ্রামীণ কৃষিভিত্তিক উত্পাদন ব্যবস্থায় ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য-বস্ত্র, শিক্ষা-চিকিৎসাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির অনিশ্চয়তা এবং পাশাপাশি জলবায়ুজনিত পরিবর্তনের বিভিন্ন প্রভাবের কারণে, মানুষ অনেকটা বাধ্য হয়েই শহরের দিকে ধাবিত হচ্ছে।