মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪

|

কার্তিক ৬ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

দীর্ঘ ২৩ বছরেও বিচার না হওয়ায় মামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ক্ষোভ ও হতাশা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১৫:৫৮, ১৪ জুন ২০২৪

আপডেট: ২২:৫৮, ১৫ জুন ২০২৪

দীর্ঘ ২৩ বছরেও বিচার না হওয়ায় মামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ক্ষোভ ও হতাশা

ফাইল ছবি

আগামী ১৬ জুন নারায়ণগঞ্জ বোমা হামলা ট্রাজেডি দিবস। ২০০১ সালে এই দিনে নগরীর চাষাঢ়ায় আওয়ামী লীগ অফিসে নৃশংস বোমা হামলায় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও মহিলাসহ ২০ জন নিহত হয়। আহত হয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমানসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী। ঘটনার ২৩ বছর অতিবাহিত হলেও এ হত্যাকান্ডের বিচার হয়নি। উদিচী সহ অনেক মামলার বিচার হলেও ২০ খুন মামলারবিচার না হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেন। প্রাণে বেঁচে যাওয়া আহতরা পঙ্গুত্বের অভিশাপ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মামলার নথীতে গুরুত্বপূর্ণ কাগজ না থাকায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে তলব করেছে বিচারিক আদালত। 

২০০১ সালের ১৬ জুন নগরীর চাষাঢ়া বিজয় স্তম্ভের পাশে আওয়ামী লীগ অফিসে শক্তিশালী বোমা হামলায় ৪ নারীসহ ২০ জন প্রাণ হারায়। আহত হয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমানসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী। অনেকেই চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করেন। 

১৬ জুন রাতে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে পূর্বনির্ধারিত গণসংযোগ কর্মসূচিতে বোমা হামলায় ২০ জন নিহত হন। বোমা হামলায় নিহত ব্যক্তিরা হলেন সাইদুল হাসান, আক্তার হোসেন, মোশারফ হোসেন, নজরুল ইসলাম, দেলোয়ার হোসেন ভাষানী, সাইদুর রহমান মোল্লা, নজরুল ইসলাম, স্বপন চন্দ্র দাস, শওকত হোসেন, স্বপন দাস, এনায়েত উল্লাহ, পলি বেগম, হালিমা বেগম, আবদুল আলীম, শুক্কুর আলী, নিধুরাম বিশ্বাস, রাজিয়া বেগম, আবদুস সাত্তার, আবু হানিফ নবী ও অজ্ঞাত নারী।

বোমা হামলার ঘটনার পরদিনই শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট খোকন সাহা বাদী হয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের আসামী করে হত্যা এবং বিস্ফোরক আইনে পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করেন। চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। অন্যদিকে বোমা হামলায় নিহত ফুটপাতের পিঠা বিক্রেতা হালিমা বেগমের ছেলে কালাম বাদী হয়ে শামীম ওসমান ও তার দুই ভাইসহ অনেককে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। পরে প্রথম মামলার বাদী এডভোকেট খোকন সাহার আবেদনের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের নিদের্শে মামলাটি খারিজ হয়ে যায়। এ মামলায় গ্রেফতার হয়েছিল চারদলীয় জোট সরকারের উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের কমিশনার আরিফুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদল নেতা শাহাদাতউল্লাহ জুয়েল, হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানসহ ১০ জন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০০৩ সালে বিস্ফোরক মামলায় ও ২০১৪ সালে হত্যা মামরায় তদন্তকারী সংস্থা ৫ জনকে আসামী করে আদালতে অভিযোগ পত্র দখিল করেন। অভিযুক্ত আসামীদের মধ্যে কারাগারে রয়েছে আদালতে একমাত্র স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেওয়া শাহাদাতউল্লাহ জুয়েল। পলাতক রয়েছে সহোদর আনিসুল মোরছালিন ও মাহাবুবুল মুত্তাকিম। জামিনে রয়েছে নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১২ নং ওয়ার্ডকাউন্সিলর শওকত হাসেম শকু। হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান। সিলেটে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা মামলায় মুফতি হান্নানের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।

মামলার বাদী নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট খোকন সাহা আশা প্রকাশ করে বলেন, প্রতি বছর আর বলতে হবে না আগামী জুনের আগেই বিচার সম্পন্ন হবে। এবার সত্যিই হবে। মামলার ১৯ জনের সাক্ষীতে বিচার হওয়ার মত মুল বিষয় গুলো এসে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আদালতের নজরে আসে নিহত কয়েকজনের ময়না তদন্ত রিপোর্ট নথিতে নাই। তাই গত ধার্য্য তারিখে (১৫-০৫-২০২৪) আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করে মামলার তৎকালিন কর্মকর্তা আমিনুল ইসলামকে ৫ কায্য দিবসের মধ্যে ব্যাখ্যাসহ হাজির হওয়ার নিদের্শ দেন। কিন্তু সে আসেনি, আমি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাব। সারা দেশের মানুষ, নারায়ণগঞ্জবাসীসহ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা দ্রুত মামলার বিচার চায়। 

দীর্ঘ ২৩ বছরে ২০ হত্যা মামলার বিচার না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা। ক্ষোভে এখন নির্মম হত্যার বিচার আল্লাহ করবে বলেই কান্নায় ভেঙে পরেন নিহত নজরুল ইসলাম বাচ্চুর অসুস্থ স্ত্রী হামিদা বেগম। পরিবারের একমাত্র উর্পাজনক্ষম স্বামীকে হারিয়ে কোন রকম সহযোগিতা না পেয়ে ২৩ বছর সংসারের ঘানি টেনে এখন নিজেই অসুস্থ অনাহারে অর্ধহারে দিনাতিপাত করছেন তিনি। অসুস্থ হয়ে এখন চিকিৎসা করানোর মত অবস্থাও তার নেই।

সরকারের কাছে দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়ে পঙ্গুত্বের অভিশাপ নিয়ে বেঁচে থাকা রতন হতাশা প্রকাশ করে বলেন, উদিতী সহ অনেক ঘটনা বিচার হচ্ছে কিন্তু নারায়ণগঞ্জে বোমা হামলার বিচারের হচ্ছে না।

বোমা হামলায় ২০ জন নিহত হয় আর প্রাণে বেঁচে যাওয়া আহতরা পঙ্গুত্বের অভিশাপ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি অনেক পরিবারেরই একমাত্র উপার্জনকারীকে হারিয়ে অসহায় মাববেতর জীবনযাপন করছে। এই অসহায় পরিবার গুলোর দায়িত্ব সরকারকে বহন করার দাবি জানান পঙ্গুত্বের অভিশাপ নিয়ে বেঁচে থাকা চন্দন শীল। তিনি এখন নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। আওয়ামীলীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তাকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বানানোর জন্য।

বোমা হামলার ঘটনার দায়ের করা দু’টি মামলা এখন নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে বিচারাধীন রয়েছে জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর এ্যাডভোকেট মো: মনিরুজ্জামান বুলবুল বলেন, ২৩ বছরেও মামলা নিস্পত্তি না হওয়া দুঃখজনক। জেলা আইনশৃংখলা কমিটির মিটিং এ সব মামলা বিষেশ তালিকায় নিয়ে দ্রুত বিচার কাজ সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরই মধ্যে ১৯ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী ২-৩ টি ধার্য্য তারিখে আরো ১৫ জনের মত স্বক্ষি গ্রহণ করে বিচার কার্য্য সম্পন্ন করা হবে বলে জানান তিনি।

মামলার দ্রুত বিচার নিস্পত্তি করে দোষিদের শাস্তি এবং প্রতিশ্রুতি মোতাবেক প্রধানমন্ত্রী বোমা হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করবেন এমন প্রত্যাশা নারায়ণগঞ্জবাসীর।

আরো পড়ুন