শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫

|

আষাঢ় ২৭ ১৪৩২

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

গোপালদী পৌরসভা যেন মাদকের ঘাঁটি, অর্ধশতাধিক স্পটে চলছে বেচাকেনা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১৭:৩৯, ১১ জুলাই ২০২৫

গোপালদী পৌরসভা যেন মাদকের ঘাঁটি, অর্ধশতাধিক স্পটে চলছে বেচাকেনা

ফাইল ছবি

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার গোপালদী পৌরসভা যেন মাদক কারবারিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। পৌর এলাকার অলিগলিসহ বসতবাড়ির পাশেও চলছে ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা ও চোলাই মদের অবাধ বেচাকেনা। একমাত্র পৌরসভাতেই গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক মাদক স্পট। মাদকের দৌরাত্ম্যে এলাকাবাসী আতঙ্কিত।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গোপালদী পৌরসভার রামচন্দ্রদী ঋষিপাড়া এলাকায় রয়েছে প্রায় ২০টি মাদক বিক্রির স্থান। দক্ষিণপাড়ায় ৮টি, শিকদারপাড়ায় ২টি, উত্তরপাড়ায় ৩টি, দাইরাদি এলাকায় ৫টি, উলুকান্দিতে ১০টি এবং গোপালদী মেথরপট্টি এলাকায় রয়েছে আরও ৪টি মাদক স্পট। এছাড়াও অচিহ্নিত আরও বেশ কিছু স্থানে নিয়মিত মাদক কেনাবেচা চলছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, দিনের বেলায় এসব জায়গা শান্ত থাকলেও সন্ধ্যার পর শুরু হয় মাদক কারবারিদের জমজমাট আসর। তারা জানান, স্পট বন্ধ হলেও কিছুদিন পর আবার নতুনভাবে চালু হয়। এই ব্যবসার পেছনে স্থানীয় কিছু চিহ্নিত চক্র এবং প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় পুরনো কারবারিরা সক্রিয় রয়েছে।

গোপালদী ডিগ্রি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. আব্দুল্লাহ বলেন, মাদকের ভয়াবহ বিস্তার শুধু তরুণ সমাজ নয়, পুরো এলাকার নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে।

সম্প্রতি দাইরাদি এলাকায় যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ডালিমের বাড়ি থেকে তার দুই নারী সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে। উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ মাদক। অপর এক অভিযানে রামচন্দ্রদী এলাকা থেকে চিহ্নিত মাদক কারবারি সাত্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় চোলাই মদের বড় একটি চালান।

আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার নাসির উদ্দিন বলেন, মাদকবিরোধী কার্যক্রমকে আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে স্পট চিহ্নিত করে নিয়মিত অভিযান চলছে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। স্থানীয়দের সহযোগিতাও একান্ত প্রয়োজন।

স্থানীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, মাদক কারবারের পেছনে রয়েছে শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট, যারা রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে দীর্ঘদিন ধরে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। শুধুমাত্র ছোটখাটো কারবারিদের গ্রেপ্তার করে মাদক নির্মূল সম্ভব নয়—এমনটাই মনে করছেন সচেতন মহল।

আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাজ্জাত হোসেন বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মাদকের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা এবং মাদকাসক্তদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ এখন সময়ের দাবি। গোপালদী পৌরসভাসহ সারাদেশে মাদক নির্মূলে প্রয়োজন প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষের সম্মিলিত উদ্যোগ।