শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫

|

আষাঢ় ২৭ ১৪৩২

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

‘অনবরত গুলি হচ্ছে, পরে কথা বলব মা’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১৭:৩৫, ১১ জুলাই ২০২৫

আপডেট: ১৭:৩৬, ১১ জুলাই ২০২৫

‘অনবরত গুলি হচ্ছে, পরে কথা বলব মা’

প্রতীকী ছবি

বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে আন্দোলন চলাকালে ২১ জুলাই লক্ষ্মীপুরের রায়পুরের ফয়েজ আহাম্মদ তার মাকে বলেছিলেন ‘মা অনবরত গুলি হচ্ছে। পরে কথা বলব।’ কিন্তু মায়ের সঙ্গে আর কথা বলা হয়নি স্যানিটারি মিস্ত্রি ফয়েজ আহমদের। ওই দিন বিকাল সাড়ে ৫টায় ঢাকার নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকার একটি ভবনে কাজ শেষ করে বাসায় ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। ফয়েজের মাথায় ও ঘাড়ে গুলিবিদ্ধ হয়। স্যানিটারি ঠিকাদার মো. কাশেম গুলিবিদ্ধ ফয়েজ আহমদকে প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে শহীদ ফয়েজ আহাম্মদকে নিজ বাড়ি রায়পুরের ঝাউডগী গ্রামে দাফন করা হয়। স্যানিটারি ঠিকাদার মো. কাশেম বলেন, ফয়েজ তার সঙ্গে দুই বছর ধরে কাজ করছিলেন। দিনে ৭০০ টাকা মজুরি পেতেন। সামান্য এই আয় দিয়ে স্ত্রী ও এক ছেলেকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। ২১ জুলাই বিকাল সাড়ে ৫টায় সাইনবোর্ড এলাকার একটি ভবনে কাজ শেষ করে বাসায় ফিরছিলেন। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

জানা গেছে, রায়পুরের চরআবাবিল ইউনিয়নের ঝাউডুগি গ্রামের শহীদ ফয়েজ আহাম্মদ তিন ভাই-বোনের মধ্যে ছিলেন সবার বড়। তার উপার্জন দিয়েই চলত পুরো সংসার। তার জন্য এখনো কান্না করেন মা সবুরা বেগম ও বাবা আলাউদ্দিন। ছেলের সঙ্গে সেদিনের ফোনে কথা বলার ও অতীতের নানা স্মৃতি তুলে ধরে বিলাপ করে কাঁদেন বৃদ্ধা সবুরা বেগম। ফয়েজের স্ত্রী বর্তমানে তিন বছরের শিশু সন্তান নিয়ে ঢাকার টঙ্গির একটি বস্তিতে বসবাস করছেন। মা সবুরা বেগম বলেন, ছেলেকে হারিয়ে দুই চোখে তিনি কেবলই অন্ধকার দেখছেন। কি হবে এখন? ফয়েজের স্ত্রী ও শিশু নাতির কি হবে? কে জোগাড় করে দেবে তাদের মুখের আহার? এসব ভাবতে ভাবতে দিন কাটে তার। সরকার এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ টাকা, এক বান টিন, একটি গাভি গরু দিয়েছেন। ফয়েজের বাবা কৃষক আলাউদ্দিন আক্ষেপ করে বলেন, ‘দুটি গুলি আমার ছেলেটারে শেষ করে দিল! ছেলে হত্যার বিচার চাই। আমি চট্টগ্রাম পোর্টে চাকরি করতাম। সেনা সরকারের সময় এক আন্দোলনে আমি চাকরি হারিয়েছি। এবার আরেক আন্দোলনে ছেলেকে হারালাম। আল্লাহর কাছে বিচার চাই।’ তিনি শহীদ ফয়েজের স্ত্রীর জন্য একটা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা দাবি জানান। শহীদ ফয়েজ আহমেদ হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তার স্ত্রী নুর নাহার। রায়পুর ইউএনও ইমরান খান বলেন, এখন পর্যন্ত শহীদ ফয়েজ আহমেদের পারিবারকে প্রায় ১০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন থেকে এক বান টিন, একটি গরুসহ আরও কিছু সহযোগিতা দেওয়া হয়। তার কবরস্থান পাকাকরণ ও হায়দরগঞ্জ বাজারে তার নামে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ করার কথা রয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাবেক এমপি আবুল খায়ের ভূইয়া বলেন, ফয়েজ আহমেদসহ যারা শহীদ হয়েছেন সবার পাশে রয়েছে বিএনপি।