মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪

|

বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

রহস্যময় দ্বীপ বাল্ট্রা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১৬:১৩, ৫ জানুয়ারি ২০২৪

রহস্যময় দ্বীপ বাল্ট্রা

ফাইল ছবি

পৃথিবী সৃষ্টির মতোই রহস্যময় পৃথিবীর সবকিছুই। তবে অনেক রহস্য উন্মোচনের পর সেগুলো এখন আর রহস্য মনে হয় না।

কিন্তু অনেক রহস্যই এখনো রয়ে গেছে অনুন্মোচিত। যেমন কোনো মীমাংসা হয়নি বাল্ট্রা দ্বীপের রহস্য।

মানববসতিশূন্য একটি দ্বীপবাল্ট্রা। ইকুয়েডরের গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের একটি বিশেষ দ্বীপ এটি। দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডরের নিকটবর্তী ১৩টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত ম্যালাপোগোস দ্বীপপুঞ্জ। আর এই ১৩টি দ্বীপের একটি হচ্ছে বাল্ট্রা।
বাল্ট্রা এখানকার অন্য ১২টি দ্বীপ থেকে একেবারেই অন্যরকম, অদ্ভুত ও রহস্যময়। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দ্বীপপুঞ্জ হওয়ায় প্রচুর বৃষ্টি হয় এই দ্বীপে। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার বৃষ্টির এক ফোঁটাও পড়ে না বাল্ট্রাতে! কোনো এক রহস্যজনক কারণে বাল্ট্রার অনেক ওপর দিয়ে গিয়ে অন্যপাশে পড়ে বৃষ্টি।

বাল্ট্রার অর্ধেক পার হওয়ার পর বৃষ্টির ফোঁটা আর এগোয় না এক ইঞ্চিও। এখানকার প্রতিটি দ্বীপেই আছে সিল মাছ, ইগুয়ানা, দানবীয় কচ্ছপ, গিরগিটিসহ বিরল প্রজাতির পাখি। শুধুমাত্র বাল্ট্রা বাদে।

বাল্ট্রা দ্বীপে নেই কোনো প্রাণী, উদ্ভিদ বা কীটপতঙ্গ। বাল্ট্রা আর পাশের দ্বীপ সান্তাক্রজের মাঝে তিন ফুট গভীর ও কয়েক ফুট চওড়া একটি খাল আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এ গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের কয়েকটি পরের দ্বীপে এয়ারবেস স্থাপন করে ইউএস সরকার। ফ্রেন্সিস ওয়ানার ছিলেন এখানকারই একজন দায়িত্বরত অফিসার।

এ দ্বীপপুঞ্জে থাকাকালীন বিভিন্ন অদ্ভুত ঘটনা আর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন তিনি। যেগুলো পরে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হলে রীতিমতো বিস্ময়ের ঝড় ওঠে। তিনি লিখেছেন, ‘জীবনের সবচেয়ে বড় বড় বিস্ময়কর ঘটনাগুলোর মুখোমুখি হয়েছি আমি বাল্ট্রা দ্বীপে গিয়ে।
একটা নয় দুটো নয়, একের পর এক অসংখ্য অবিশ্বাস্য সব ব্যাপার ঘটেছে আমার চোখের সামনে। বিস্ময়ে হতবাক আমি শুধু দৃষ্টি মেলে দেখেই গেছি এসব, কোনো যুক্তিযুক্ত উত্তর বা ব্যাখ্যা খুঁজে পাইনি। সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের একটি শক্তি কাজ করছে দ্বীপটির ভেতর। যার প্রভাবে ঘটেছে একের পর এক এসব রহস্যময় ও অবিশ্বাস্য ঘটনা। বাল্ট্রাতে এলেই অস্বাভাবিক আচরণ করে নাবিক বা অভিযাত্রীর কম্পাস। সবসময় উত্তর দিক-নির্দেশকারী কম্পাস এখানে কোনো সময় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। দিক-নির্দেশক কাঁটা ইচ্ছেমতো ঘুরতে থাকে অথবা উল্টোপাল্টা দিক নির্দেশ করে।

আরেকটি রহস্যজনক ব্যাপার হলো বাল্ট্রা দ্বীপের ওপর বিমান থাকাকালীন সময়েও এমন অদ্ভুত আচরণ করে কম্পাস। আবার দ্বীপ পার হলেই সব ঠিক। বাল্ট্রার আরেকটি অদ্ভূত দিক হচ্ছে বাল্ট্রায় পা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যে কারও মাথা অনেক হালকা হয়ে যায়। অচেনা অজানা কোনো এক জায়গায় হারিয়ে যাওয়ার আশ্চর্য অনুভূতি আচ্ছন্ন করে ফেলে মনকে।

 বেশিক্ষণ এ দ্বীপে থাকলে দ্বীপ থেকে চলে আসার পর কিছুদিন সেই আশ্চর্য অনুভূতি থেকে যায়। পরে অবশ্য আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যায়। অদ্ভুত দ্বীপ বাল্ট্রায় কোনো গাছ বা পশুপাখি নেই। কোনো পশুপাখি নাকি আসতেও চায় না এ দ্বীপে । দেখা যায় বাল্ট্রাকে এড়িয়ে পাশের দ্বীপ সান্তাক্রুজের ধার ঘেঁষে চলছে প্রাণীগুলো। শুধু কি তাই , উড়ন্ত পাখিগুলোও উড়তে উড়তে বাল্ট্রার কাছে এসেই ফিরে যাচ্ছে। দেখে মনে হয় যেন কোনো দেয়ালে ধাক্কা খাচ্ছে ওরা।

এই দ্বীপের রহস্যের কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। অবশ্য এরিক ফন দানিকেন ও তার অনুসারীরা যথারীতি তাদের স্বভাবসুলভ দৃষ্টিভঙ্গিতে সেই পৃথিবীর বাইরের ভিন্নগ্রহের তথাকথিত মানুষদের টেনে এনেছেন। কিন্তু বিজ্ঞানীরা আজ পর্যন্ত এ রহস্যের কোনো কূলকিনারা করতে পারেন নি। প্রযুক্তিগত দিক দিকে বিশ্ব আজ  অনেক দূর এগিয়ে গেছে। বিজ্ঞানীরা হয়তো একদিন এসব রহস্যের সমাধান মানুষের কাছে তুলে ধরবে। আমরা সেরকম আশা করতেই পারি।