ফাইল ছবি
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোঃ মাহমুদুল হক বলেছেন, একটি শিল্প কারখানায় হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করে। দুর্বৃত্তরা যদি সেই কারখানাটি জ্বালিয়ে দেয় ধ্বংস করে দেয় তাহলে মালিক হয়তো অন্য কোন ব্যবসা কিংবা অন্য কোন শিল্প কারখানা করতে পারবে। কিন্তু এই হাজার হাজার শ্রমিকরা কোথায় যাবে। ওই কারখানাটি তো বছরের মধ্যেও আর ঘুরে দাড়াতে পারবেনা। শ্রমিকদেরকে মাসের পর মাস বেকার হয়ে থাকতে হবে। এজন্য মালিকের চেয়ে শ্রমিকের ইন্টারেস্ট বেশী। তাই কারো কোন উস্কানীতে যাতে শ্রমিকরা শিল্প কারখানার কোন ধরনের ক্ষতি সাধন না করে সেজন্য শ্রমিক নেতাদেরকে অগ্রনী ভূমিকা রাখতে হবে।
বৃহস্পতিবার (৮ আগষ্ট) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে নারায়ণগঞ্জ জেলার আঞ্চলিক ক্রাইসিস প্রতিরোধ কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেলা প্রশাসক।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনা গুলোর কারণে হয়তো শিল্প কারখানার মালিকদের বেতন দিতে দেরী হতে পারে। নানা সমস্যা থাকতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নররা অফিস করছেননা। আর্থিক বিভাগের সচিব, বিভিন্ন ব্যাংকের এমডিসহ উর্ধ্বতনরা অফিস করছেননা। এটা কিন্তু বাংলাদেশে কখনোই হয়নি। অনেক সময় ব্যাংকে লিক্যুইড মানি থাকেনা। আপনারা বিভিন্ন কারখানায় গিয়ে শ্রমিকদের বোঝান। আর একটি কারখানাতেও যাতে কোন ধরনের ভাংচুর নাশকতার ঘটনা না ঘটে। এখন শ্রমিক ও শ্রমিক নেতাদের উচিৎ মালিকদের সাপোর্ট দেয়া।
বর্তমানে জাতির জন্য ভয়ঙ্কর ক্রান্তিকাল চলছে। এখন ন্যায় নীতির পক্ষে দাঁড়ানোর সময়। সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়। পাশে দাঁড়ানোর সময়। আমি সকলের উদ্দেশ্যে মেসেজটি দিতে চাই গত কয়েকদিনে যারাই যা করেছেন সব রেকর্ড আছে। একটা লোকও ছাড় পাবেনা। যেখানে যা কিছু করছে সব কিন্তু সেনাবাহিনীর কাছে রেকর্ড সংগৃহীত হচ্ছে। এখন হয়তো আমাদের প্রোটেষ্ট করার মতো ব্যবস্থা নেই। পুলিশ নেই, বিজিবিও টহলে নামেনি। সেনাবাহিনী ও র্যাব টহল দিচ্ছে। আশা করছি আগামী কিছুদিনের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
তিনি আরো বলেন, নাশকতাকারীরা কিন্তু অল্প সংখ্যক। আর প্রতিটি শিল্প কারখানায় কিন্তু হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করছে। বহিরাগত সন্ত্রাসীরা হামলা চালানোর পরে শ্রমিকরা যদি খালি হাতেও বের হয় তাহলেও নাশকতাকারীরা কিছু করতে পারার কথা নয়। তাই মালিক ও শ্রমিকরা যদি ঐক্যবদ্ধভাবে পাহাড়ার ব্যবস্থা করেন তাহলে ভবিষ্যতে কোন কারখানায় বহিরাগত নাশকতাকারীরা কিছু করতে পারবেনা। এছাড়াও আমি মালিকদের উদ্দেশ্যে বলবো, আপনারাও যত দ্রুত পারবেন শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করবেন। কারণ শ্রমিকরাও তাদের উপার্জনের অর্থে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। আমি বিকেএমইএ’কে অনুরোধ করবো সকল মালিকদেরকে এ বিষয়ে অনুরোধ করার জন্য যাতে তারা শ্রমিকদের বেতন দ্রুত পরিশোধ করে দেন এবং শ্রমিক নেতাদেরকে অনুরোধ করবো শ্রমিকদের বুঝিয়ে শান্ত রাখতে।
এসময় আরো বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাকিব আল রাব্বি, বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, গার্মেন্টস মালিক সালাউদ্দিন আহমেদ শামীম, বাংলাদেশ গার্মেন্টস টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি এম এ শাহীন, সেক্রেটারী ইকবাল হোসেন, বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি সেলিম মাহমুদ, গণসংহতির অঞ্জন দাস, শ্রমিক নেতা জাহাঙ্গীর আলম গোলক, মাহমুদ হোসেন, গাজী মোঃ নূরে আলম, এস এম কাদির, আবু সাঈদ, সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।
বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বর্তমানে ৮০ শতাংশ কারখানায় শ্রমিকদের বেতন ভাতা প্রদানে দেরী হতে পারে। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নররা সকলেই পদত্যাগ করেছে। অনেকেই সঠিক সময়ে শিপমেন্ট করতে পারেননি। ব্যাংকের নানা জটিলতা রয়েছে। এজন্য এই ক্রান্তিকালে শ্রমিকদের ধৈর্য্য ধরতে হবে।
সভায় শ্রমিক নেতারা দ্রুত জুলাই মাসের বেতন প্রদান, কোন ধরনের হাজিরা না কাটা, শ্রমিক ছাটাই না করাসহ নানা প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। এছাড়া শ্রমিকরা ঐক্যবদ্ধভাবে বিভিন্ন শিল্প জোনে গিয়ে শ্রমিকদের পরিস্থিতি সম্পর্কে বোঝাবেন বলেও অবহিত করেন। এছাড়াও ক্ষমতার পালাবদলে বর্তমানে ঝুট সন্ত্রাসীর দৌরাত্ম্যও বেড়েছে বলে সভায় তুলে ধরেন শ্রমিক নেতারা।