
ফাইল ছবি
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বিএনপির কতিপয় নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি বা দখলের মত নানা অভিযোগের বিষয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিএনপি ব্যবস্থা নিচ্ছে। এরই মধ্যে সাত হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে কিছু সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
কিন্তু কিছু বিষয় এমনও আছে, স্বৈরাচারের আমলে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ব্যবসা বাণিজ্য, দোকান-পাট, ঘরবাড়ি, জমি-জমা পুকুর দখল করা হয়েছিল। ৫ আগস্টের পর দলটির নেতা-কর্মীরা তাদের বৈধ সম্পত্তি বা পৈত্রিক সম্পত্তি আবার ফিরে পেতে গেলেও সেটা ‘দখল’ বলে অপপ্রচার হয়েছে।
বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান এ কথা বলেন। সোমবার (৬ অক্টোবর) সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছে।
প্রশ্ন করা হয়—‘৫ আগস্টের পরে বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি বা দখলের মত নানা অভিযোগ এসেছে। আপনাদের দল থেকে অনেককে বহিষ্কার করা হয়েছে এটা ঠিক, আবার একই সাথে এটাও ঠিক যে এই অভিযোগগুলো কিন্তু বারবার আসছে। তো এটা থামানো যাচ্ছে না কেন?’
জবাবে তারেক রহমান বলেন, আপনার প্রতি সম্মান রেখে আপনার সঙ্গে অ্যাগ্রি যেমন করবো, আবার এখানে অন্য একটি বিষয় আমি তুলে ধরতে চাইবো। এর মধ্যে নিশ্চয়ই আপনারা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দেখেছেন যে প্রায় সাত হাজারের মতো আমাদের নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে আমরা কিছু সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছি। কিন্তু এই সাত হাজারের সবাই কিন্তু আপনি যে অভিযোগ করলেন এই অভিযোগের সঙ্গে জড়িত নন। এর মধ্যে এমন অনেক বিষয় আছে যারা অন্য সাংগঠনিক বিষয়ের সঙ্গে জড়িত। এটি গেল একটি বিষয়।
‘দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে আমাদের কাছে এরকম যখন অনেক অভিযোগ এসেছে। আমরা অভিযোগগুলো তদন্ত করেছি। তদন্ত করার পরে আমরা বেশ কিছু বিষয় পেয়েছি। যেমন আমি দুই-একটি উদাহরণ দিয়ে আপনাকে বলি। যেমন- ধরেন দুই ভাই। কোনো একটি এলাকায় দুই ভাই আছে। দুই ভাইয়ের মধ্যে পারিবারিক সম্পত্তি, সহায়-সম্পত্তি নিয়ে একটি সমস্যা আছে। বিগত যে স্বৈরাচার, পলাতক স্বৈরাচার, তাদের কারও সঙ্গে এক ভাইয়ের খুব ভালো সম্পর্ক। তার ফলে সেই স্বৈরাচারের যে দোসর, তার সঙ্গে যে এক ভাইয়ের সম্পর্ক, সে তার ইনফ্লুয়েন্স ব্যবহার করে অন্য ভাইয়ের সম্পত্তিও জোর করে দখল করে রেখেছে। এখন পাঁচ তারিখের পরে যে ভাই স্বৈরাচারের দোসরকে ব্যবহার করেছিল সেই দোসরও তো পালিয়ে গিয়েছে, তো স্বাভাবিকভাবেই সেই ভাই এখন আর শেল্টার পাচ্ছে না। তো যার সম্পত্তি জোর করে রেখে দিয়েছিল অন্য ভাইটি, সেই অন্য ভাইটি স্বাভাবিকভাবে তার হক আদায় করতে গিয়েছে বা হক বুঝে নিতে গিয়েছে, এখন অ্যাকসিডেন্টলি বা ইনসিডেন্টলি যে ভাই এতদিনভাবে বঞ্চিত ছিল সম্পত্তি থেকে, সেই ভাই বিএনপি করে, বিএনপির কোনো একজন কর্মী বা স্ট্রং সমর্থক বা নেতা যেটাই হোক, চাপিয়ে দিল, অভিযোগ তুলে দিল অন্যজন যে বিএনপি দখল করতে গিয়েছে। এরকম ঘটনা আমরা প্রচুর পেয়েছি। ’
‘আবার আরেকটি আমি উদাহরণ দেই যা সত্য, যা বাস্তব। স্বৈরাচারের সময় সারা বাংলাদেশে আমাদের প্রায় ৫০ লাখের বেশি নেতা-কর্মীর নামে বিভিন্ন রকম গায়েবি মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিল। আমাদের বহু নেতা-কর্মী তাদের ঘরবাড়িতে থাকতে পারতো না। তাদের বিভিন্নভাবে পালিয়ে থাকতে হতো। বিভিন্নভাবে সরে থাকতে হতো। এই সুযোগে স্বৈরাচার তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, দোকান-পাট, ঘর-বাড়ি, জমি-জমা, পুকুর দখল করে নিয়েছিল। পাঁচ তারিখে যখন স্বৈরাচার পলাতক হয়ে গিয়েছে, পালিয়ে গিয়েছে- তখন স্বৈরাচারের যারা দখল করেছে তারাও সঙ্গে সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের নেতা-কর্মীরা তাদের নিজেদের যেগুলি বৈধ সম্পত্তি, পৈত্রিক সম্পত্তি সেগুলো আবার ফিরে পেতে গিয়েছে। তখন আবার কিছু সংখ্যক লোক প্রচার করেছে যে বিএনপির লোকজন দখল করতে গিয়েছে, এরকম ঘটনা প্রচুর ঘটেছে। ’
তারেক রহমান বলেন, আপনি যেই কথাটি বললেন সেরকমও কিছু ঘটেছে। সে কারণেই আমরা আমাদের অবস্থান থেকে ব্যবস্থা নিচ্ছি। তবে এখানে আমার একটি প্রশ্ন আছে, যে প্রশ্নটি আমরা পাবলিকলিও করেছি। দেখুন আমরা একটি রাজনৈতিক দল। কিছু ঘটনা ঘটেছে। আমরা অস্বীকার করছি না। ঘটেছে যেমন, আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি তাদের বিরুদ্ধে। যতটুকু আমরা জেনেছি, যতটুকু আমরা তদন্তের পরে পেয়েছি, যখন সত্যতা পেয়েছি, আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। কিন্তু পুলিশিং করা তো আমাদের কাজ না। রাজনৈতিক দলের কাজ অবশ্যই পুলিশিং করা না। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কখনো বলিনি সরকারকে- যে অমুককে ধরতে পারবে না, তমুককে ধরতে পারবে না, এই করতে পারবে না, ওই কথা। আমরা কিন্তু কখনো বলিনি। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে যাদের কাজ পুলিশিং করা তারা কেন তাদের কাজটি করছে না। তারা কেন তাদের কাজে ব্যর্থ এটি আমাদের প্রশ্ন।
এখানে সরকারের ব্যর্থতা আছে কি না এমন প্রশ্নে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, অবশ্যই। আমি তো আগেই বলছি পুলিশিং তো রাজনৈতিক দলের কাজ না, পুলিশিং করার দায়িত্ব সরকারের।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, পুলিশ পুলিশের কাজ করবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আইনশৃঙ্খলার কাজ করবে। বিএনপি ইনশাল্লাহ সরকার গঠন করলে আমার দলের কোনো নেতা-কর্মী তখনো যদি এরকম কোনো অনৈতিক কাজে সম্পৃক্ত হয় আমরা দলের অবস্থান থেকে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেব। দল তার পক্ষে থাকবে না, দলের অবস্থান এবং দেশের আইন অনুযায়ী। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার দায়িত্ব যাদের, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, তারা তাদের কাজ করবে, সিম্পল। এখানে দুইয়ে দুইয়ে চারের মতন ব্যাপার।