
প্রতীকী ছবি
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ভূমি নিবন্ধনের ক্ষেত্রে উৎস কর কমানো হয়েছে। এর সুফল পাবেন সিটি করপোরেশন এলাকার নাগরিকরা। কিন্তু গ্রাম ও মফস্বল শহরের মানুষ এ থেকে তেমন লাভবান হবেন না। কারণ গ্রাম ও মফস্বল শহরের জন্য উৎস কর কমানো হলেও শতকপ্রতি নির্দিষ্ট পরিমাণ উৎস কর ধার্য করা হয়েছে। এতে আগে যে হারে কর দেওয়া লাগত, নতুন নিয়মানুযায়ী তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি উৎস কর পরিশোধ করতে হবে।
২০২৩ সালে প্রণীত কর আইনের ৩৪৩ ধারা অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের জন্য উৎস করা ছিল ৮ শতাংশ। চলতি বছর তা ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। একই সঙ্গে শতকপ্রতি ন্যূনতম উৎস করও উল্লেখযোগ্য হারে কমানো হয়। এ ক্ষেত্রে মানুষ লাভবান হবেন। এসব অঞ্চল ছাড়া অন্যান্য সিটি করপোরেশন ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং জেলা সদরে অবস্থিত সব পৌরসভার অন্তর্গত সব মৌজার ক্ষেত্রে ২০২৪ সালে উৎস কর নির্ধারণ করা হয় দলিলে উল্লিখিত ভূমি মূল্যের ৬ শতাংশ। চলতি বছর তা কমিয়ে ৪ শতাংশ করা হয় এবং শতকপ্রতি ন্যূনতম উৎস করও উল্লেখযোগ্য হারে কমানো হয়। আর জেলা সদর পৌরসভা ছাড়া অন্যান্য পৌরসভার অন্তর্গত সব মৌজার উৎস কর ২০২৪ সালে নির্ধারণ করা হয় দলিলে উল্লিখিত মূল্যের ৪ শতাংশ। ২০২৫ সালে তা কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়। অন্যান্য পৌরসভা ছাড়া অন্যান্য মৌজা অর্থাৎ ইউনিয়ন পর্যায়ে মৌজার উৎস কর নির্ধারণ করা হয় দলিলে উল্লিখিত ভূমি মূল্যের ২ শতাংশ। চলতি বছরও এটি বহাল রয়েছে। কিন্তু শতকপ্রতি ন্যূনতম উৎস কর ধার্য করা হয়েছে। ফলে আগের চেয়ে বেশি কর পরিশোধ করতে হবে। এ ছাড়া সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকায় জমি ও ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে পৌরসভা এলাকায় মানুষ হয়রানিতে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভূমি নিবন্ধনের উৎস করের জন্য যে বিধিমালা প্রণয়ন করেছে তাতে দেখা যায়, আগে বিধিমালা অনুযায়ী ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন ছাড়া অন্যান্য সিটি করপোরেশন, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও জেলা সদরের পৌরসভার মৌজাগুলোতে উৎস কর ধার্য ছিল দলিলে প্রদর্শিত মূল্যের ৬ শতাংশ। এবার তা ৪ শতাংশ করা হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, উৎস কর কমেছে। কিন্তু ভুল ভাঙে যখন দেখা যায়, সেখানে আরও লেখা হয়েছে ‘অথবা শতকপ্রতি ২৫ হাজার টাকা’। এ দুটির মধ্যে যেটি সর্বোচ্চ সেটি পরিশোধ করতে হবে।
ধরা যাক ১ শতাংশ জমির দাম ১ লাখ টাকা। ২০২৪ এর বিধিমালা অনুযায়ী ৬ শতাংশ হারে উৎস কর ৬ হাজার টাকা। কিন্তু ২০২৫ সালের বিধিমালার অধিকতর সংশোধনী অনুযায়ী ৪ শতাংশ হারে ৪ হাজার অথবা ২৫ হাজার টাকা, এ দুটির মধ্যে যেটি অধিক সেটি পরিশোধ করতে হবে। তাহলে আগের বছরের তুলনায় ১৯ হাজার টাকা বেশি দিতে হচ্ছে।
জেলা সদরের পৌরসভা ছাড়া অন্যান্য পৌরসভার উৎস করের ক্ষেত্রে আগে এসব মৌজার উৎস কর ধার্য ছিল ৪ শতাংশ। কিন্তু সংশোধনীতে উৎস কর ধার্য করা হয়েছে ২ শতাংশ। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে উৎস কর কমেছে। কিন্তু ভুল ভাঙে একটু পর, যখন দেখা যায় সেখানে আরও লেখা হয়েছে ‘অথবা শতকপ্রতি ১০ হাজার টাকা, দুটির মধ্যে যেটি অধিক’। এ ক্ষেত্রে ১ শতাংশ জমির দাম ১ লাখ টাকা হলে আগে ৪ হাজার টাকা উৎস কর পরিশোধ করা লাগত। কিন্তু ২০২৫ সালের বিধিমালার অধিকতর সংশোধনী অনুযায়ী ২ শতাংশ হারে ২ হাজার অথবা ১০ হাজার টাকা, দুটির মধ্যে যেটি অধিক হয়। তাহলে আগের বছরের তুলনায় ৬ হাজার টাকা বেশি দিতে হচ্ছে।
আবার ইউনিয়ন পর্যায়ের মৌজার ক্ষেত্রে আগে উৎস কর ধার্য ছিল ২ শতাংশ। সংশোধনীতে উৎস কর ধার্য করা হয়েছে আগের মতো ২ শতাংশ। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে ইউনিয়নে উৎস করের কোনো হ্রাস-বৃদ্ধি হয়নি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে শতকপ্রতি ৫০০ টাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ জমির মূল্য যদি ১ লাখ টাকা হয়, তাহলে ২০২৪ সালের বিধিমালা অনুযায়ী উৎস কর ছিল ২ হাজার টাকা। ২০২৫ সালের বিধিমালার অধিকতর সংশোধনী অনুযায়ী ২ শতাংশ হারে ২ হাজার অথবা শতাংশপ্রতি ৫০০ টাকা হারে ৫ হাজার টাকা, দুটির মধ্যে যেটি অধিক হয়। তাহলে আগের তুলনায় ৩ হাজার টাকা বেশি দিতে হচ্ছে।
অন্যদিকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ এবং অন্যান্য সিটি করপোরেশনের অধীন অধিকাংশ মৌজার (শতকপ্রতি দাম বেশি) এবং জেলা সদরের অধীন পৌরসভার বিভিন্ন মৌজার (শতকপ্রতি দাম বেশি) জমি রেজিস্ট্রেশনে উৎস করের হার হ্রাস পেয়েছে। আরও স্পষ্ট করে বলা যায়, আয়কর বিধিমালার সংশোধনে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন ও জেলা পৌরসভার আওতাধীন প্রত্যন্ত অঞ্চল এবং উপজেলা পৌরসভা ও ইউনিয়নের অধীন জমির দলিল রেজিস্ট্রেশনে উৎস কর বৃদ্ধি পেলেও বিভিন্ন সিটি করপোরেশন, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, জেলা শহরের পৌরসভার আওতাধীন উন্নত এলাকার জমির রেজিস্ট্রেশনে উৎস কর হ্রাস পেয়েছে।
ভূমি নিবন্ধনের জন্য উৎস করের বাইরে দলিলে প্রদর্শিত মূল্যের ১ শতাংশ নিবন্ধন ফি, ১ দশমিক ৫ শতাংশ স্ট্যাম্প ডিউটি, ২-৩ শতাংশ স্থানীয় কর এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ভ্যাট পরিশোধ করতে হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভূমি নিবন্ধনের সঙ্গে যুক্ত একাধিক সাব-রেজিস্ট্রার নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২০২৫ সালে ভূমি নিবন্ধনে উৎস কর কমানোর যে বিধান করা হয়েছে, তাতে লাভবান হবেন সিটি করপোরেশন এলাকার মানুষ। ‘ক’ শ্রেণির বাইরের অন্যান্য পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কারণ আগে ইউনিয়ন ও ছোট পৌরসভার ক্ষেত্রে শতকপ্রতি ন্যূনতম উৎস কর ছিল না। এবার নির্দিষ্ট উৎস কর ধার্য করা হয়েছে। ফলে আগের তুলনায় বেশি কর পরিশোধ করা লাগবে।