ফাইল ছবি
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে আধিপত্য বিস্তার ও একটি কোম্পানির বালু ভরাট নিয়ন্ত্রনকে কেন্দ্র করে বিএনপি'র দু’ পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় কয়েকটি বাড়িতে ভাংচুর লুটপাটসহ চারটি বসত ঘরে অগ্নি সংযোগ করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের আষাঢ়িয়ার চর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। রাত সাড়ে ৮টা থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষ দফায় দফায় রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলে। এঘটনায় ১০জন আহত হয়েছে। আহতদের সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্ষে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় সোনারগাঁও থানায় উভয় পক্ষের মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। সংঘর্ষের ঘটনায় স্থানীয় বিএনপির দুই নেতাকে আটক করেছে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার,কোম্পানির বালু ভরাট ও ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সোনারগাঁও থানা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রউফ ও তার আপন ছোট ভাই পিরোজপুর ইউনিয়ন বিএনপি'র সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল জলিলের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এ বিরোধের জেরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে উভয় পক্ষের লোকজন ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া সংর্ঘষে জড়িয়ে পড়ে। এসময় তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ বাড়ি ঘর ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। এক পর্যায়ে আব্দুল জলিলের সমর্থক রহিসউদ্দিন, সারোয়ার হোসেন, তুক্কি মিয়া, বাদশা ও সজিব মিয়ার বাড়িতে আগুন দেয় আব্দুর রব সমর্থকরা। এর আগে গত মঙ্গলবার আব্দুল জলিলের সমর্থকরা আব্দুর রউফের ওপর হামলা করে। এতে আব্দুর রউফ আহত হন। ওই ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে আব্দুর রউফের নেতৃত্বে আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয় চারটি বসত ঘর। আগুনের খবর পেয়ে সোনারগাঁ ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রনের জন্য ঘটনাস্থলে গেলে হামলাকারীরা তাদের উপর ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে। এক পর্যায়ে পুলিশের সহযোগিতায় আগুন নিয়ন্ত্রণ আনে। আগুন নিয়ন্ত্রনে আনার আগেই আগুনে বাড়িঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সংঘর্ষে রানা মিয়া, আল আমিন, সেলিম মিয়া, আব্দুল লতিফ, শফিকুল ইসলাম ও শহিদসহ ১০জন আহত হয়।
সোনারগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই)মো.সারোয়ার হোসেন জানান, আধিপত্য বিস্তার ও কোম্পানির ব্যবসা নিয়ন্ত্রন নিয়ে বিএনপি নেতা আব্দুর রউফ ও আব্দুল জলিলের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাটসহ চারটি ঘরে আগুন দেওয়া হয়। হামলাকারীরা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ওপর ইটপাটকেল ছুঁড়ছে যাতে করে আগুন নেভানো না যায়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলে ধাওয়া দিয়ে দু’পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করা হয়। সংঘর্ষের ঘটনায় আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়।
সোনারগাঁও ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সিনিয়র অফিসার জাহেদুল ইসলাম জানান, ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট প্রায় এক ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এক বাড়ির আগুন নেভানোর আগেই তারা আরেকটি বাড়িতে আগুন দেয়। আগুন নেভাতে গেলে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ওপর ইটপাটকেল ছুড়া হয়।
এলাকাবাসীর দাবি, আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর বিএনপি নেতা দুই ভাই একজন প্রভাবশালী বিএনপির প্রথম শ্রেণীর নেতার শেল্টারে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। মানুষের জমি দখল, কোম্পানির গাড়ি আটক, সরকারী জমিতে দোকানপাট নির্মাণ, নদী দখল করে বালু ভরাটসহ বিভিন্ন মানুষের বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাট করে। বর্তমানে তারা একে অন্যের শত্রæতে পরিণত হয়েছে। আব্দুল জলিল জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী ও আব্দুর রউফ আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে বাহিনী গড়ে তুলে। তারাই একে অন্যের ওপর হামলা, লুটপাট, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করছে।
সোনারগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত)মো. রাশেদুল হাসান খান বলেন, সংঘর্ষ ও বাড়িঘরে আগুনের ঘটনায় দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় মামলাসহ পরবর্তী আইনী কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

