
ফাইল ছবি
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন ৫ ঘণ্টা এক বাথরুমে স্ত্রীসহ লুকিয়ে ছিলেন তুমুল সমালোচিত দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য ওয়ালের এক্সিকিউটিভ এডিটর অমল সরকারকে দেওয়া ওবায়দুল কাদেরের এক সাক্ষাৎকার সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। সেখানেই তিনি ওই দিনের ঘটনা বর্ণনা করেন। ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, অমল সরকারকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন ওবায়দুল কাদের। তবে নিউজ টোয়েন্টিফোরের পক্ষ থেকে সেই সাক্ষাৎকারের সত্যতা স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
সাক্ষাৎকার ভিডিওতে ওবায়দুল কাদের বলছিলেন, সেদিন আমার বেঁচে থাকার কথা ছিল না। মৃত্যু থেকে অনেক কাছে ছিলাম। নিজের বাসাকে এড়িয়ে পার্শ্ববর্তী আরেকটা বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলাম। তখন চারদিক থেকে মিছিল আসছিল। এটা আসলে ছিল গণভবন কেন্দ্রিক।
তিনি বলেন, আমি যে বাসাটায় ছিলাম, তারা সে বাসাতেও হামলা করে। তারা জানতো না যে সেখানে আমি আছি। আমার বাসা তারা ‘লুটপাট’ করেছে, কিন্তু যে বাসায় আমি গিয়ে আশ্রয় নিলাম, সেখানে হামলা করবে আমি ভাবতে পারিনি। দেখলাম অনেক লোকজন ঢুকে পড়েছে। আমি আমার স্ত্রীসহ বাথরুমে লুকিয়ে ছিলাম। অনেকক্ষণ ছিলাম, প্রায় ৫ ঘণ্টা। তারপর একটা পর্যায়ে তারা বাথরুমে ভেতরেও কমোড-বেসিন এগুলো ‘লুটপাট’ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমার ওয়াইফ বাথরুমের মুখে দাঁড়িয়ে বারবার বলছিল, আমি অসুস্থ। এ কথা বলে তাদের ফিরিয়ে দিচ্ছে। একটা পর্যায়ে তারা বাথরুমে যেগুলো আছে, সেগুলো লুট করার জন্য জোরপূর্বক প্রবেশের হুমকি দেয়। সে সময় আমার ওয়াইফ জিজ্ঞাসা করলো কী করবো? বললাম, খুলে দাও। তারপর ৭-৮ জন ছেলে ঢুকলো। খুবই আক্রমণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। হঠাৎ তারা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, নেত্রী চলে গেল আপনি যাননি কেন? আমি কিছু বলছিলাম। তাদের মধ্যে কী উদয় হলো-আমি জানি না। তারা আমাকে বলে, আপনার ছবি তুলবো।’
কাদের আরও বলেন, ‘তারপর ছবি তুলতে শুরু করলো, সেলফি নিচ্ছিলো। এই ছাত্রদের অনেকে হয়তো আমাকে চিনতো। কী কারণে যে আক্রমণাত্মক মনোভাবটা ছিল, সেটা নিমিষেই শীতল হয়ে গেল! তখন ঠান্ডা মেজাজি কথা বলছিল। এদের মধ্যে এক পর্যায়ে একটা গ্রুপ চেয়েছিল আমাকে রাস্তায় সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিতে। কেউ কেউ আবার এটাও চেয়েছিল যে, জনতার হাতে তুলে দিতে। এটা অবশ্যই তখন একটা মানসিকভাবে ভেতরে ভেতরে ভেঙে পড়েছিলাম।’
‘এরপর একটা শার্ট, এদের ব্যাচ, লাল পতাকাশোভিত ব্যাচ লাগিয়ে কালো একটা মাস্ক মুখে দিয়ে আমাকে হাঁটতে হাঁটতে সংসদ এলাকা থেকে বড় রাস্তা, গণভবন অভিমুখী রাস্তায় নিয়ে যায়। ওখানে নিয়ে হঠাৎ করে কোথা থেকে একটা ট্যাক্সি আসে, একটা ইজি বাইক। সেটা খালিই ছিল। ওখানে গাড়ি-ঘোড়া কিছুই ছিল না। হঠাৎ করে কেন যেন এসে পড়লো, হয়তো আমার ভাগ্য। এরা দুইজনে আমাকে ও আমার ওয়াইফকে নিয়ে অটোতে উঠলো। আর বলতে লাগলো। পথে তো অসংখ্য মানুষ। চেকআপ সবজায়গায়। বলতে লাগলো আমাদের চাচা-চাচি অসুস্থ হাসপাতালে নিচ্ছি। ডিস্টার্ব করবেন না। এই করে করে নিয়ে গেল। অনেক দূরে একটা জায়গায়।’
‘এটা ভাবতেও পারিনি যে ওরা বাথরুমে ঢুকলো, সেদিন বেঁচে থাকাটা পরম সৌভাগ্যের বিষয়। আনস্পেকটেডলি বেঁচে গেছি। দিস ইজ দ্য ইম্পর্ট্যান্ট,’ যোগ করেন তিনি।