
প্রতীকী ছবি
ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর অঞ্চলে গ্যাস অবকাঠামোর উন্নয়নে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য আট হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে সাত হাজার ২৪৭ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি)। ‘ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ গ্যাস নেটওয়ার্ক অবকাঠামো উন্নয়ন’ নামের এই প্রকল্প প্রস্তাবে সংশ্লিষ্ট এলাকায় গ্যাস সঞ্চালন, বিতরণ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ এবং সম্প্রসারণের কথা বলা হয়েছে। প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভার জন্য প্রস্তুতকৃত কার্যপত্র সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রস্তাবনায় প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছে পাঁচ বছর। ২০২৫ সাল থেকে শুরু হয়ে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ২০৩০ সালের ডিসেম্বর মাসে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হবে তিতাস গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানিকে। প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে আট হাজার ৬৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সাত হাজার ২৪৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ঋণ দিচ্ছে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। তিতাস গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানি লিমিটেড নিজস্ব অর্থায়ন থেকে ব্যয় করা করবে ৮২১ কোটি ৯ লাখ টাকা।
বিশ্বের উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর জোট ব্রিকস প্রতিষ্ঠিত সাংহাইভিত্তিক বহুপক্ষীয় ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি)। ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার সমন্বয়ে গঠিত ব্রিকস জোট ২০১৪ সালে এনডিবি নামে বহুজাতিক ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে। প্রতিষ্ঠাতা পাঁচ সদস্য দেশ এবং বাংলাদেশ, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসরসহ মোট আটটি দেশ এর সদস্য। ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ এনডিবির সদস্যপদ লাভ করে।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এর আওতায় মোট এক হাজার ৪৪ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন স্থাপন করা হবে। এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পাইপ ব্যবহৃত হবে। যেমন– হাই প্রেশার স্টিল পাইপলাইন, মিডিয়াম প্রেশার পাইপলাইন ও লো প্রেশার পাইপলাইন। এই প্রকল্পে মোট ৭৫টি গ্যাস প্রেশার রেগুলেটর স্টেশন (গ্রিড স্টেশন বা সাব-স্টেশন) স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। এসব স্টেশনের কাজ হবে গ্যাস প্রবাহের চাপ নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য রক্ষা, যাতে নিরবচ্ছিন্ন এবং নিরাপদ গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়। এ ছাড়া আরও কিছু সহায়ক অবকাঠামো নির্মাণের কথাও বলা হয়েছে, যেমন– ডিস্ট্রিবিউশন কন্ট্রোল স্টেশন, ডিজিটাল মনিটরিং ও অটোমেশন ইউনিট, ফায়ার ও নিরাপত্তা সিস্টেম এবং প্রশিক্ষণ ও পরিচালনাগার উন্নয়ন।
পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্পটি মূল্যায়ন করে বলেছে, প্রকল্পটি সময়োপযোগী এবং শিল্পায়নের স্বার্থে জরুরি। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের মতো শিল্পসমৃদ্ধ এলাকায় গ্যাস বিতরণ ব্যবস্থা পুরোনো, ঝুঁকিপূর্ণ ও অপর্যাপ্ত হওয়ায় অবকাঠামোগত পুনর্গঠন এখন জরুরি। কমিশন মনে করে, এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সিস্টেমলস কমানো, চুরি রোধ, গ্যাস সরবরাহে গুণগত উন্নয়ন এবং ভবিষ্যৎ চাহিদার সঙ্গে সমন্বয় সম্ভব হবে।
প্রকল্প গ্রহণের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর এলাকায় শিল্প ও জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে; কিন্তু গ্যাস সরবরাহ অবকাঠামো সে হারে উন্নত হয়নি। পাইপলাইনগুলো পুরোনো, ঝুঁকিপূর্ণ ও চাপ ধরে রাখতে অক্ষম। অনেক পাইপলাইন ৩০ থেকে ৪০ বছরের পুরোনো, যেখানে ফাটল, লিকেজ এবং চুরি বাড়ছে। ফলে সিস্টেমলস বেড়ে গেছে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত গ্যাস না থাকায় প্রতিদিন শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো লাখ লাখ টাকার ক্ষতির মুখে পড়ছে, রপ্তানি আদেশ হারাচ্ছে। শ্রমিকরাও বেকার হচ্ছে। ভবিষ্যৎ নগরায়ণ ও শিল্প সম্প্রসারণকে মাথায় রেখে আগাম অবকাঠামো প্রস্তুতের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। আগামী এক দশকে ঢাকা-গাজীপুর করিডোর হবে দেশের প্রধান অর্থনৈতিক অঞ্চল। এই বাস্তবতা মাথায় রেখে বড় পরিসরের গ্যাস নেটওয়ার্ক প্রয়োজন।