বুধবার, ১৩ আগস্ট ২০২৫

|

শ্রাবণ ২৮ ১৪৩২

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

প্রকল্পটির দ্রুত বাস্তবায়ন কাম্য

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১৯:২০, ১২ আগস্ট ২০২৫

প্রকল্পটির দ্রুত বাস্তবায়ন কাম্য

ফাইল ছবি

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ রেলওয়ের ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-কুমিল্লা কর্ডলাইন প্রকল্প নির্মাণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে নতুন সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূস ও উপদেষ্টাদের অভিনন্দন জানিয়ে আমি কলাম লিখেছিলাম। স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের সময় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-কুমিল্লা কর্ডলাইন প্রকল্পের সম্ভাব্যতা জরিপ সম্পন্ন হয়েছিল। অতএব, আবারও আরেকটি নতুন সম্ভাব্যতা প্রকল্প গ্রহণের আবশ্যকতা আছে কি? ইতোমধ্যেই সম্পন্ন সম্ভাব্যতা সমীক্ষার প্রতিবেদনটি কি সামান্য ‘রিভাইজ’ করে দ্রুত প্রকল্পের কাজ শুরু করা যায় না?

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দৈর্ঘ্য মাত্র ১৫০ মাইল, অথচ ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের দৈর্ঘ্য ২১৩ মাইল। আমরা অনেকেই ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের আখাউড়া হয়ে ২১৩ মাইলের অস্বাভাবিক ঘুরপথের আসল ঐতিহাসিক কারণটি হয়তো উপলব্ধি করি না। ব্রিটিশ আমলে ঔপনিবেশিক ভারতে রেলপথ স্থাপন করা হয়েছিল ব্রিটিশদের অর্থনৈতিক স্বার্থে। তাই, আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের হেডকোয়ার্টার্স স্থাপিত হয়েছিল চট্টগ্রামে এবং সিলেট ও আসামের অন্যান্য এলাকার শত শত চা-বাগানে উৎপাদিত চা যেন ওই রেলওয়ের মাধ্যমে সহজে চট্টগ্রাম বন্দরে পরিবাহিত হয়ে বিদেশে রপ্তানি করা যায়, সেটাই ছিল আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ে প্রতিষ্ঠার প্রধান অর্থনৈতিক যুক্তি। সেজন্যই চট্টগ্রাম থেকে বর্তমান রেললাইনটি আখাউড়া হয়ে সিলেট ও আসামে চলে গেছে। আখাউড়া থেকে ঢাকা যাওয়া আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের ওই ঔপনিবেশিক রেলপথ স্থাপনের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল না কিংবা এক্ষেত্রে রাজস্ব-আহরণের প্রধান সূত্রও বিবেচিত হয়নি। কারণ, প্রতিষ্ঠাকালে যাত্রী পরিবহণ ওই রেলপথের রাজস্বের মূল সূত্র ছিল না। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের মাধ্যমে পাকিস্তান হওয়ার সময় তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি চা-বাগান ভারতের আসাম ও পশ্চিমবঙ্গে চলে গেছে। তবুও পাকিস্তান আমলে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে চা-রপ্তানি বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশের চা রপ্তানির একমাত্র নিলাম হতো চট্টগ্রামে; এখন শ্রীমঙ্গলে নিলামের প্রধান অংশটা স্থানান্তরিত হয়ে গেছে। এখন বাংলাদেশ থেকে চা-রপ্তানিও অনেক হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে, ঢাকা পূর্ব বাংলা পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানী হওয়ার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে পণ্য পরিবহণের চেয়ে যাত্রী পরিবহণ অনেক বেশি গুরুত্ববহ হয়ে উঠেছিল। আর এখন তো ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ স্বাধীন বাংলাদেশের যাত্রী পরিবহণের জনপ্রিয় ও ব্যয়সাশ্রয়ী মাধ্যমে রূপান্তরিত হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের ৭৮ বছর এবং ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের ৫৪ বছর পার হয়ে গেলেও আমাদের কোনো সাবেক সরকার এই ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ৬৩ মাইল ঘুরপথ বাদ দিয়ে লাকসাম কিংবা কুমিল্লা থেকে দাউদকান্দি ও নারায়ণগঞ্জ হয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত রেলপথকে মাত্র ১৫০ মাইলে নামিয়ে আনার মহাগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি গ্রহণ করতে পারেনি। পতিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার শাসনামলে বেশ কয়েকবার এ বিষয়টি নিয়ে আমি বিভিন্ন পত্রিকায় কলাম লিখলেও তার মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারিনি। অথচ, হাসিনা চট্টগ্রাম-দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ এবং ঢাকা-মাওয়া-ভাঙা-যশোর-পায়রা রেলপথের মতো স্বল্প-প্রয়োজনীয় রেলপথ নির্মাণের জন্য প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকা ইতোমধ্যেই ব্যয় করে ফেলেছেন। প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ঢাকা-মাওয়া-ভাঙা-যশোর রেলপথে বর্তমানে দিনে মাত্র দুটি ট্রেন চলাচল করছে; আর প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে দিনে চারটি ট্রেন যাতায়াত করছে। কক্সবাজারের পর্যটকদের কাছে ট্রেনযাত্রার জনপ্রিয়তা থাকায় হয়তো ভবিষ্যতে এ রেলপথে আরও অনেক ট্রেন চালু করে ঢাকা-কক্সবাজার রুটকে অর্থনৈতিকভাবে আরও কিছুটা লাভজনক করা সম্ভব হবে, তবে ঢাকা-যশোর-পায়রা রেলপথটি সহজে জনপ্রিয় করা যাবে না। (মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথটির ব্যবহার আরও বাড়বে)। তবুও, এগুলোর তুলনায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-কুমিল্লা কর্ডলাইন যে অনেক বেশি প্রয়োজনীয় একটি রেলপথ হবে, সেটি ওয়াকিবহাল মহল সহজেই উপলব্ধি করতে পারবে।

আমরা হয়তো অনেকেই জানি না, বিংশ শতাব্দীর আশির দশকে ট্রেনে ঢাকা-চট্টগ্রামের দূরত্ব বর্তমান ২১৩ মাইল থেকে ৬৩ মাইল কমিয়ে ১৫০ মাইলে নিয়ে আসার উদ্দেশ্যে ঢাকা-লাকসাম কর্ডলাইন প্রকল্পটির ‘সম্ভাব্যতা প্রকল্প’ (ফিজিবিলিটি স্টাডি) সম্পন্ন হয়েছিল। ১৯৯০ সালে এরশাদের পতনের পর কোন রহস্যজনক কারণে প্রকল্পটি ‘কোল্ড স্টোরেজে’ চলে গিয়েছিল তা জানা যায়নি। অথচ ওই অপ্রয়োজনীয় ৬৩ মাইল ঘুরে আখাউড়া-ভৈরব হয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যাওয়ার কারণে প্রতিটি ট্রেনের যে দেড়-দুই ঘণ্টা সময় বেশি লাগছে, তার ফলে ট্রেনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধি এবং প্রতিজন প্যাসেঞ্জারের সময়ের অপচয় ও আয়ুক্ষয়ের ব্যাপারটি গত ৩৪ বছরে কত হাজার কোটি টাকা গচ্চার ইতিহাস রচনা করেছে, সেটা আমাদের শাসকদের বিবেচনায় এখনো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল না! রেলওয়ে বিভাগ সরকারের আলাদা মন্ত্রণালয় হওয়ার পর ২০১৪-১৮ মেয়াদের সরকারের রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের ২০১৫ সালের একটি ঘোষণায় আমরা জানতে পারি যে, ঢাকা-লাকসাম কর্ডলাইনের পরিবর্তে দাউদকান্দি হয়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-কুমিল্লা সরাসরি রেললাইন স্থাপনের মাধ্যমে ওই ৬৩ মাইল দূরত্ব কমিয়ে আনা হবে। মুজিবুল হক সুনির্দিষ্টভাবে জানিয়েছিলেন, পরবর্তী বছরের মধ্যেই ঢাকা-কুমিল্লা কর্ডলাইন প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। তিনি যেহেতু লাকসাম-কুমিল্লার সন্তান, তাই আমাদের মধ্যে আশা জেগেছিল যে, সে সময় হয়তো সত্যি সত্যিই তার আগ্রহে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। এ প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে সত্যিকার অর্থে এদেশের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধিত হতো। পদ্মা সেতু বাস্তবায়িত হওয়ায় বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। ভবিষ্যতে ঢাকা নগরীর মেট্রোরেলের সঙ্গে ঢাকা-কুমিল্লা রেলপথ এবং দক্ষিণাঞ্চলের রেলপথ যুক্ত করে দেওয়া হলে সারা দেশে রেল নেটওয়ার্ক একটা আধুনিক যুগে প্রবেশ করবে। দুঃখজনক হলো, ওই ঘোষণার পর আরও প্রায় পৌনে চার বছর মুজিবুল হক রেলমন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও ঢাকা-কুমিল্লা রেলপথ প্রকল্পের আর কোনো অগ্রগতির খবর জানা যায়নি।

অথচ রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের মতো ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার মহাবিপজ্জনক মেগাপ্রকল্পের কাজও সোৎসাহে বাস্তবায়িত হয়ে চলেছে। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন দায়িত্ব গ্রহণের পরের পাঁচ বছর ঢাকা-কুমিল্লা কর্ডলাইন প্রকল্পটি শুরু করার কোনো আয়োজন চোখে পড়েনি। পতিত স্বৈরশাসক হাসিনার শাসনামলের সর্বশেষ সাত মাসেও এ ব্যাপারে কোনো নড়াচড়া চোখে পড়েনি।

এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-কুমিল্লা কর্ডলাইন প্রকল্পটির মহাগুরুত্ব অনুধাবনের জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছি। নীতিপ্রণেতাদের কয়েকটি অত্যাসন্ন বাস্তবতাও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। রেলওয়ের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এখন এতটাই অগ্রসর হয়েছে যে, বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে শুধু মিটারগেজ ট্রেন চালাতে হবে এমন ধারণা এখন অচল হয়ে গেছে। সারা দেশে ব্রডগেজ রেলপথ স্থাপনের প্রযুক্তি এখন সহজলভ্য। আগামী দেড়-দুই দশকের মধ্যে বিশ্ব থেকে ক্রমেই মিটারগেজ ট্রেন উঠে যাবে; তখন দেশের সব রেলপথকেই ক্রমে ব্রডগেজ ট্রেন চালানোর উপযোগী করে রূপান্তরিত করে ফেলতে হবে। অতএব, প্রস্তাবিত ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-কুমিল্লা কর্ডলাইনটি শুরু থেকেই ব্রডগেজ রেলপথ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। একইসঙ্গে, চট্টগ্রাম-কুমিল্লা রেলপথকে ডুয়েলগেজে রূপান্তরিত করার কাজটি শুরু করলে পুরো ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ব্রডগেজ ট্রেন চালানো সম্ভব হবে। এমনকি একটু দূরদর্শী পরিকল্পনা নিয়ে এই ১৫০ মাইলের ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ইলেকট্রিক ব্রডগেজ ট্রেন চালানোর প্রকল্প গ্রহণ করা সমীচীন মনে করি; তাহলে তিন ঘণ্টার স্থলে দুই/আড়াই ঘণ্টায় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যাওয়া সম্ভব হবে। সারা দেশকে ২০২১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। অতএব, সারা দেশে ক্রমান্বয়ে বৈদ্যুতিক ট্রেন চালু করার বিষয়টিও এখন আমাদের চিন্তার জগতে চলে আসা উচিত।

আমি অতীতেও বেশ কয়েকবার লিখেছি, এদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে রেলওয়ে এবং অভ্যন্তরীণ নৌপথে যোগাযোগকে অবহেলা করে সড়ক যোগাযোগকে মাত্রাতিরিক্ত গুরুত্ব প্রদানের নীতি আমার দৃষ্টিতে বরাবরই মারাত্মক ত্রুটিপূর্ণ মনে হয়েছে। পাকিস্তান আমলের এ ভুল দৃষ্টিভঙ্গি বাংলাদেশেও অব্যাহত থাকায় আমি বারবার হতাশা ব্যক্ত করেছি। রেলওয়ে ও নৌ-যোগাযোগের মতো পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থার পরিবর্তে আমাদের নীতিপ্রণেতারা এখনো কেন সড়ক যোগাযোগকেই অগ্রাধিকার দিয়ে চলেছেন, তা আমার বোধগম্য নয়। বাংলাদেশের মতো নদীমাতৃক একটা দেশে নৌ-যোগাযোগ যে এখনো একেবারেই অবহেলিত ও অনুন্নত রয়ে গেছে, সেটা একজন অর্থনীতির গবেষক হিসাবে আমি কোনোমতেই মেনে নিতে পারি না। আমরা অনেকেই হয়তো জানি না, যত্রতত্র অপরিকল্পিত সড়ক নির্মাণের কারণেই সারা দেশের নগর ও গ্রামগুলোতে পানি নিষ্কাশন বিপর্যস্ত হয়ে জলাবদ্ধতা সমস্যা দিন দিন তীব্র হয়ে উঠছে এবং আমাদের নদ-নদী ও খাল-নালাগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এটাও হয়তো অনেকের অজানা যে, প্রতি বর্গকিলোমিটারে দৈর্ঘ্যরে হিসাবে বাংলাদেশে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সড়কপথ রয়েছে, বেশির ভাগই অবশ্য কাঁচা রাস্তা। এ পরিসংখ্যান নিয়ে গর্ব করার কিছুই নেই, এটা আমাদের অপরিকল্পিত উন্নয়ন প্রক্রিয়ারই প্রতিফলন। যে দেশের ওপর দিয়ে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা রিভার সিস্টেমের মতো বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পানি নিষ্কাশন সিস্টেমের ২৩০টি বড় নদ-নদী এবং সাতশ’র বেশি খালের নেটওয়ার্ক প্রবাহিত হয়ে চলেছে; সেদেশে সড়ক যোগাযোগকে অগ্রাধিকার প্রদানের নীতি যে কত বড় আহাম্মকি, তা আমাদের নীতিপ্রণেতারা এখনো উপলব্ধি করছেন না কেন, বোঝা মুশকিল! নদ-নদী-খালের এ নেটওয়ার্ক আমাদের জন্য আল্লাহতায়ালার নেয়ামত, কিন্তু আমাদেরই ভুলে ওগুলোকে ভরাট করে ফেলে আমরা নানারকম পরিবেশগত বিপর্যয় ডেকে আনছি। ওগুলোর সাংবাৎসরিক নাব্য বজায় রাখতে পারলে বন্যার সঙ্গে আমাদের সহাবস্থান যেমন অর্জিত হবে, তেমন নৌপরিবহণের আধুনিক ও স্বল্পব্যয়ী নেটওয়ার্কও আমাদের জন্য সহজলভ্য হয়ে যাবে। এর পরের অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত রেল যোগাযোগের। এ দুটি পরিবেশবান্ধব পরিবহণ ব্যবস্থাকে অবহেলা করার নীতি সংশোধন করতেই হবে।

রেল যোগাযোগ এবং নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থা শুধু যে পরিবেশবান্ধব তা নয়, এগুলোকে দরিদ্রবান্ধব পরিবহণ ব্যবস্থাও বলা হয়। যাত্রীদের নিরাপত্তার বিচারেও সড়ক পরিবহণের চেয়ে এগুলো শ্রেয়। আমাদের প্রতিবেশী ভারতের ট্রেনগুলোতে ভ্রমণের সুযোগ যাদের হয়েছে, তারা ঠিকই উপলব্ধি করবেন তারা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রেল নেটওয়ার্কটিকে কতখানি সহজলভ্য ও আরামদায়ক করে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। ব্রিটেনের মানুষ পারতপক্ষে সড়কপথে ভ্রমণ করে না তাদের রেল যোগাযোগের স্বল্পব্যয় ও আরামপ্রদ ব্যবস্থার কারণে।

আমাদের রেলওয়েকে প্রাপ্য অগ্রাধিকার দিন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূস এবং উপদেষ্টা প্রফেসর ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ ও ড. ফাওজুল কবির খান। ঢাকা-পায়রা-যশোর রেললাইনের চেয়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-কুমিল্লা কর্ডলাইন অনেক বেশি ‘ফিজিবল’ প্রকল্প। প্রয়োজনে এ রেললাইনটি চট্টগ্রাম পর্যন্ত বিদ্যুৎচালিত আধুনিক প্রযুক্তির রেলপথ হিসাবে নির্মাণ করা অযৌক্তিক হবে না।

ড. মইনুল ইসলাম : সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি; অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়