
ফাইল ছবি
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের দোর্দন্ড প্রতাপশালী মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বর্তমানে কারাগারে দিনাতিপাত করছেন। একসময় যে গাজীর কথায় রূপগঞ্জে বাঘে-মহিষে এক ঘাটে পানি খেত সেই গাজী এখন অসহায়। সারা দেশে শেখ মুজিবের নামে নানা সরকারি স্থাপনা হলেও রূপগঞ্জের চিত্র ছিল ভিন্ন। নিজের নামে বিভিন্ন স্থাপনার নামকরণ করতেন গাজী। আওয়ামী লীগের পতনের পর রূপগঞ্জ ছেড়ে পালিয়েছে গাজীর সন্ত্রাসী বাহিনী, স্বস্তি ফিরে এসেছে রূপগঞ্জের সাধারণ মানুষের মাঝে।
২০০৮ সালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে প্রথমবারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন গাজী। তবে নির্বাচিত হওয়ার পরপরই গাজী তার আসল রুপ বের করতে শুরু করে।
প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হওয়ার পরপরই গাজীর বিরুদ্ধে নানান দুর্নীতির অভিযোগ আসতে শুরু করে। রূপগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতায় প্রভাব খাঁটিয়ে জায়গা জমি দখল করতে থাকেন গাজী।
২০১৪ সালের নির্বাচনের পর বোপরোয়া হয়ে ওঠেন গাজী। রূপগঞ্জকে গাজীগঞ্জ হিসেবে তৈরি করতে চেষ্টা চালান গাজী। রূপগঞ্জের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও গাজীর প্রকোপ থেকে রেহাই পাননি। নামমাত্র মূল্যে মানুষকে জিম্মি করে জায়গা জমি লিখে নেয়া গাজীর জন্য নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার ছিল। সমগ্র রূপগঞ্জে গাজীর ভূমিদস্যুতায় তটস্থ থাকত সাধারণ মানুষ এমনকি তার দলের নেতাকর্মীরাও। রূপগঞ্জকে নিজের আয়ত্তে রাখতে ইউনিয়ন ভিত্তিক সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলেন গাজী।
স্কুল, কলেজের মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোও গাজীর হাত থেকে রেহাই পায়নি। রূপগঞ্জের প্রতিটি স্কুল, কলেজের গভর্নিং বডি ছিল গাজী পরিবারের সদস্যদের নিয়ন্ত্রণে। রূপগঞ্জের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও সরকারি স্থাপনা গাজীর নামেই গড়ে উঠেছে গত ১৪ বছরে।
বিএনপিসহ বিরোধীদল গুলোর ওপর গাজী বাহিনী বিগত ১৬ বছর সীমাহীন অত্যাচার ও নির্যাতন চালিয়ে এসেছে। বিএনপি কোন কর্মসূচি দিলেই তাদের ওপর হামলা চালিয়ে কর্মসূচি পন্ড করে দিত গাজীর সন্ত্রাসী বাহিনী। বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের পরিবারের সদস্যরাও গাজীর সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রেয়াই পেত না। রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকার পরেও বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদল নেতাকর্মীদের পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা ও নির্যাতন চালাতেন গাজীর সন্ত্রাসীরা।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা জুড়ে ছাত্র জনতার ওপর হামলা চালাতে শুরু করে গাজীর বাহিনী। পুরো রূপগঞ্জে মহাড়া চালিয়ে আতংকের সৃষ্টি করেন তারা। তবে পাঁচ আগষ্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর রূপগঞ্জ ছেড়ে গাজীর সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা পালিয়ে যায়। আত্মগোপনে চলে যান গাজী। ২০২৪ সালের ২৫ আগষ্ট ঢাকার একটি বাসা থেকে গাজীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।