
ফাইল ছবি
নারায়ণগঞ্জের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে প্রতিবাদী গ্রাফিতী দেখা গেছে।
বুধবার (৩১ জুলাই) শহরের মাসদাইর কেন্দ্রীয় ঈদগাহে এ গ্রাফিতী দেখা যায়। এর আগে রাতের কোন এক সময় এ গ্রাফিতী অঙ্কিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঈদগাহে থাকা মানুষজন।
ঈদগাহে থাকা উজ্জ্বল নামে একজন জানান, আমি সকালে এটি দেখেছি। এর আগে গতকাল বিকেলে এ মাঠ দিয়ে যাবার সময় দেখিনি। তাহলে রাতে এগুলো অঙ্কন করা হয়েছে। এখন সবাই প্রতিবাদী, এতগুলো প্রাণের বিনিময়ে এতটুকু লিখে তো প্রতিবাদ করাই যায়।
এর আগে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জে ১৭ জন নিহত হবার তথ্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে রয়েছে পুলিশ পরিদর্শক, এসএসসি পরীক্ষার্থী, শিক্ষার্থী, শ্রমিক, মিস্ত্রী ও ব্যবসায়ী।
নিহতরা হলেন- নারায়ণগঞ্জে সাইনবোর্ডে আন্দোলনকারীদের হামলায় নিহত হয় পিবিআই এর পরিদর্শক মাসুদ পারভেজ ভূঁইয়া (৫২)। তিনি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারোবাড়ী ইউনিয়নের কালান্ধর গ্রামের আব্দুল জব্বারের ছেলে। তিনি বাংলাদেশ পুলিশে ৯৮ ব্যাচে যোগদান করেন। পরিবার সূত্রে জানা যায়, তিনি পিবিআই এর পরিদর্শক হিসেবে নারায়ণঞ্জে কর্মরত ছিলেন। ১৯ জুলাই রাত ৮টার দিকে তিনি ডিউটি শেষ করে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার জন্য বাজারে যান। সে সময় আন্দোলনকারীদের হামলায় তিনি গুরুতর আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মরা যায়।
নারায়ণগঞ্জ শহরের নয়ামাটিতে নিজ বাসার ছাদে খেলার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ৭ বছর বয়সী রিয়া গোপ নামে একটি মেয়ে শিশু নিহত হয়। বুধবার ২৪ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিহত হয় রিয়া গোপ। সে সদর উপজেলার নয়ামাটি এলাকার দীপক কুমার গোপের মেয়ে।
নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা লিংক রোডের কাজীপাড়া স্ট্যান্ড ও ভুইগড় পেট্রল পাম্পের পাশে ভাঙারি ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান (৫৫) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। সে ফতুল্লার ভূইগড় জোড়াপুকুর এলাকার বাসিন্দা।
ফতুল্লায় রাকিব (২০) নামে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে। সে ফতুল্লার খোশপাড়া এলাকার ভাড়াটিয়া ও বরিশাল সদর এলাকার মোশারফ মিয়ার ছেলে।
সিদ্ধিরগঞ্জ চিটাগাং রোড ও শিমরাইল সাইনবোর্ড এলাকায় সংঘর্ষের সিদ্ধিরগঞ্জে আরাফাত হোসেন আকাশ (১৫) নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থী নিহত হয়। সে তার বাবা আকরাম হোসেনের সঙ্গে চিটাগং রোড খানকা মসজিদের সামনে ভ্যানগাড়িতে করে ফলের বিক্রি করতো।
মিলন (৩৮) নামে সিদ্ধিরগঞ্জ পুল এলাকায় কাঁচাবাজারের মাছ ব্যবসায়ী নিহত হন। সে যাত্রাবাড়ী মাছের আড়তে মাছ আনতে যাওয়ার সময় শিমরাইল ডাচ বাংলা ব্যাংকের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।
সজিব (২০) নামে একজন নিহত হয়। সে পটুয়াখালীর ধুমকি থানার ঘাটারা এলাকার আলী হোসেন হাওলাদারের ছেলে ও চিটাগাং রোড আহসান উল্লাহ সুপার মার্কেটের বিক্রমপুর হার্ডওয়ার দোকানের কর্মচারী।
ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান সৈয়দ মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজু (৩৬)। সে সিদ্ধিরগঞ্জের হিরাঝিল এলাকায় মটর ওয়ার্কসপের মিস্ত্রি ছিলেন। সে সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদী নতুন মহল্লা এলাকার সরোয়ার আলমের বাড়ীর ভাড়াটিয়া ও লক্ষীপুর জেলার রামগঞ্জ থানার পশ্চিমবিঘা গ্রামের সৈয়দ আবদুল করিমের ছেলে।
মেহেদী (২০) নামে একজন নিহত হয়। সে গজারিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র। মেহেদীর বাবার নাম সানাউল্লাহ।
শাহীন(২৩) নামে সিদ্ধিরগঞ্জের নিউ হীরাঝিল হোটেলের ক্যাশিয়ার মারা যান।
সুমাইয়া আক্তার সুমির (২০) নামে এক গৃহিনী সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদি নতুন মহল্লায় থাকতেন। বারান্দায় থাকা অবস্থায় ছুটে আসা গুলিতে বিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। সে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের বাসিন্দা।
আলা উদ্দিন (৩৫) নামে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। সে চাঁদপুরের মতলব থানার সিদ্দিকুর রহমান সরদারের ছেলে ও সে সিদ্ধিরগঞ্জের নিমাইকাশারী নুরবাগ এলাকায় শাহাজাহানের বাড়ির ভাড়াটিয়া তার বেয়াইনের বাসায় বেড়াতে আসে।
সিদ্ধিরগঞ্জে হৃদয় (২৫) মৌচাক এলাকার সজল (২২) ও মিনারুল ইসলাম (২৫), নামে তিন জন নিহত হয়েছে। এদের বিস্তারিত পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি।
ঢাকা চট্রগাম মহাসড়েকর পাশে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড় হাজী ইব্রাহীম শপিং কমেপ্লেক্স ও প্রিয়ম নিবাসে অগ্নিসংযোগের পরে ভবনে থাকা দোতলায় ডাচ বাংলা ব্যাংকের কক্ষ থেকে ৩ জন কাঠ মিস্ত্রির পোড়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মৃতদেহ তিনটি হলো- কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি থানার চরজগনাথপুর গ্রামের মোঃ ওহাব মন্ডলের ছেলে সেলিম মন্ডল (২৯), একই এলাকার সাবের বিশ্বাসের ছেলে সালাম বিশ্বাস এবং সিলেট জেলার বিশ্বনাথ থানার কাকুরা গ্রামের তোকালশুর রহমানের ছেলে শাহেল (২১)। নিহতরা পেশায় কাঠ মিস্ত্রি। তারা ব্যাংকের ভেতর সংস্কার কাজ করছিল।