
তাজিয়ার আদলে শিক্ষার্থীদের মিছিল
নারায়ণগঞ্জ, ১৭ জুলাই ২০২৫। সময় গড়িয়ে গেছে, ক্যালেন্ডারের পাতায় আরেকটা বছর যোগ হয়েছে।
তবুও নারায়ণগঞ্জের আকাশে-বাতাসে ভেসে বেড়ায় সেই বিকেলের রক্তঝরা স্মৃতি। এখনও কাঁদায়, কাঁদায় সেই তাজিয়ার মাতম।
২০২৪ সালের ১৭ জুলাই, পবিত্র আশুরার দিন চাষাঢ়ার বুক চিরে বের হয় এক অনন্য শোকমিছিল। তাজিয়ার আদলে সেই মিছিলে ছিল না কোনো ধর্মীয় প্রতীক, ছিল শিক্ষার্থীদের বুকফাটা কান্না, আর গায়ে লেখা শহীদদের নাম— আবু সাঈদ, শহীদ রিয়াজ, নাঈম, জান্নাতুল ফেরদৌস, নাহিদ ও রায়হান।
ওরা কেউ কারও ভাই, কেউ কারও বন্ধু। কেউ কেউ হয়তো ভালোবাসার মানুষ। সবাই ছিল এই দেশের আলো। আর সেই আলোই ম্লান করে দিয়েছিল সেদিনের নিষ্ঠুর গুলি, ক্ষমতার বর্বরতা।
সেই বিকেলে শহরের হৃদয় চাষাঢ়া থেমে যায়। দোকানপাট বন্ধ, যান চলাচল স্তব্ধ। ছাত্ররা গায়ে শহীদদের নাম লিখে, বুক চাপড়ে, ‘আবু সাঈদ আমার ভাই, হত্যাকারীর ফাঁসি চাই’ শ্লোগানে আকাশ কাঁপিয়ে দেয়। শহরের অলিগলি থেকে হাজারো মানুষ ছুটে আসে মিছিলে। কারও চোখে অশ্রু, কারও মুখে ক্ষোভ।
তাজিয়া মিছিলের সেই ব্যতিক্রমী রূপ সেদিন আন্দোলনকে শুধু আরও প্রাণবন্তই করেনি, তা দেশের প্রতিটি সচেতন হৃদয়ে কাঁপন তুলেছিল। কেউ বলেছিলেন, এ এক নতুন ভাষার প্রতিবাদ।
সকাল থেকেই চাষাঢ়া রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, সড়ক মোড়সহ সব জায়গা ছাত্রদের দখল। কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঢাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর নারকীয় হামলা ও ছয়জনের মৃত্যুর খবর নারায়ণগঞ্জে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।
তারা শুধু বিক্ষোভ করেনি, তারা বুকের রক্ত দিয়ে ইতিহাস লিখেছে। আর সেই ইতিহাস আজও মুছে যায়নি। কাঁদায়, আবারও কাঁদায় জুলাইয়ের সেই তাজিয়া।