শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫

|

শ্রাবণ ১০ ১৪৩২

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

চাল-মুদির দোকানেও গ্যাস সিলিন্ডার, জানা নেই আইন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১২:০৩, ২২ জুলাই ২০২৫

চাল-মুদির দোকানেও গ্যাস সিলিন্ডার, জানা নেই আইন

ফাইল ছবি

আড়াইহাজারের খাগকান্দা লঞ্চঘাট এলাকায় চালের ব্যবসা করেন জয়নাল আবেদীন। ক্রেতার চাহিদা থাকায় এর সঙ্গে গ্যাস সিলিন্ডারও বিক্রি করেন তিনি। এতে অনুমোদন লাগে কিনা, জানা নেই তাঁর। বালিয়াপাড়া বাজারে ভ্যারাটিজ স্টোরে সিলিন্ডার বিক্রি করেন মোক্তার ভূঁইয়া। তাঁর ভাষ্য, সব ধরনের পণ্য বিক্রি না করলে সংসার চালানো কঠিন। কিন্তু সিলিন্ডার বিক্রির অনুমোদন নেই। একই কথা বললেন বাজারের রঙের দোকানি মামুন মিয়া।
অগ্নিনির্বাপক ও বিস্ফোরক লাইসেন্স ছাড়াই নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় এভাবে যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে লিকুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) সিলিন্ডার ও দাহ্য পদার্থ। মুদি ও চায়ের দোকানেও মিলছে সিলিন্ডার। জনবহুল স্থানে ঝুঁকিপূর্ণভাবে এভাবে দাহ্য ও বিস্ফোরণ হওয়ার মতো পণ্য বিক্রি হলেও দু-একজন ব্যবসায়ী ছাড়া কারও অনুমোদন নেই। বিক্রিতে অনুমোদন লাগে, সেটিও জানেন না । এতে দুর্ঘটনার শঙ্কা বাড়ছে।
এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির নীতিমালা অনুযায়ী, গ্যাস সিলিন্ডার আমদানি, উৎপাদন, মজুত, পরিচালনা, ডিলার ও ডিস্ট্রিবিউটর নিয়োগের মাধ্যমে বিতরণ, বিপণনের জন্য সরকার থেকে পূর্বানুমতি নিতে হবে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এলপি গ্যাস বিতরণ বা বিপণন করতে পারবে না।  কিন্তু অনুমতি ছাড়াই সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে।
সরেজমিনে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সার, কীটনাশক, ডিজেল, পেট্রোল বা ইলেকট্রনিক্স, মুদি দোকানে সিলিন্ডার বিক্রি করতে দেখা গেছে। এসব মজুত ও বিক্রির যাবতীয় স্থাপনা আবাসিক বা জনবহুল স্থান পরিহারের নিয়ম থাকলেও বিক্রেতারা এর তোয়াক্কা করছেন না। জনবহুল বাজার, বাসস্ট্যান্ড, এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশেও এসব দাহ্য পদার্থ বিক্রি করতে দেখা গেছে।
নিয়ম অনুযায়ী, খুচরা বিক্রির জন্য দোকানে সর্বোচ্চ ১০টি গ্যাস সিলিন্ডার মজুত রাখা যাবে। সে ক্ষেত্রে বিস্ফোরক অধিদপ্তর এবং ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স থাকতে হবে। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড ও দোকানের পণ্য বাজেয়াপ্ত করার বিধান রয়েছে। অথচ লাইসেন্স করার বিষয়টি অনেক ব্যবসায়ী জানেনই না। কেউ কেউ বলছেন, লাইসেন্স করতে অনেক টাকা লাগে। হয়রানির শিকার হতে হয় বলেও অভিযোগ তাদের।
কয়েক দিন ধরে উপজেলার গোপালদী, কালীবাড়ি, জাঙ্গালিয়া, পাঁচরুখী, কামরানীরচর, প্রভাকরদী, পুরিন্দা, বালিয়াপাড়া, ফাউসা, শান্তির বাজার, বঙ্গারবাজার, উচিৎপুরা, মারুয়াদিসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দোকানের সামনে খোলা জায়গায় বিভিন্ন কোম্পানির সিলিন্ডার সাজিয়ে রাখা। এগুলো বিক্রির জন্য আলাদা কোনো দোকান পাওয়া যায়নি। অন্যান্য সামগ্রীর সঙ্গে সড়ক বা মহাসড়কের পাশে সাধারণ দোকানেই বিক্রি হচ্ছে সিলিন্ডার।
গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করতে কোনো লাইসেন্স লাগে না বলে দাবি খাগকান্দা এলাকার মুদি দোকানি হাসান আলীর। এক পর্যায়ে জানা যায়, এ-সংক্রান্ত আইন সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই তাঁর।
পরিবেশকদের অগ্নিনির্বাপক লাইসেন্স দেওয়ার বিধি রয়েছে বলে জানান আড়াইহাজার ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ইনচার্জ রবিউল হাসান। চাল, রং, চা, কাপড়, মুদি মনিহারি, ক্রোকারিজের দোকানে গ্যাস বিক্রির জন্য কোনো অগ্নিনির্বাপক লাইসেন্স দেওয়া হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, এসব দোকানে গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি করা বেআইনি ও ঝুঁকিপূর্ণ।
যত্রতত্রভাবে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করা যাবে না উল্লেখ করে ইউএনও সাজ্জাত হোসেন বলেন, অবৈধভাবে যারা গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করছেন, তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খুচরা বিক্রির জন্য দোকানে ১০টি গ্যাস সিলিন্ডার মজুত রাখা গেলেও যথাযথ ট্রেড লাইসেন্স ও অনুমোদন থাকতে হবে। সিলিন্ডার এমন স্থানে রাখতে হবে যাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকে। এ তথ্য জানিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিস্ফোরক পরিদর্শক ড. আসাদুল ইসলাম বলেন, বিধি মোতাবেক গ্যাস সিলিন্ডার, পেট্রোল, মবিল বিক্রির জন্য পাকা মেঝেসহ আধাপাকা ঘর, অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার এবং মজবুত ও ঝুঁকিমুক্ত সংরক্ষণাগার থাকতে হবে। 
শর্তগুলো পূরণ করলেই পেট্রোলজাতীয় দাহ্য পদার্থ বিক্রির নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন জানিয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, লাইসেন্সবিহীন দাহ্য পদার্থ বিক্রি করা যাবে না। কিন্তু আইনের তোয়াক্কা না করেই খোলা বাজারে চলছে এ ব্যবসা। তদারকি জোরদার করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব এলাকা পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।