
ফাইল ছবি
নারায়ণগঞ্জে সড়ক প্রশস্তকরণ উন্নয়ন প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণের শ্রেণি পরিবর্তন করে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ জমা পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে। মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে অধিগ্রহণকৃত জমির মালিককে সুবিধা দিতে ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করে নাল, ভিটি ও ডোবা হয়েছে বাণিজ্যিক। অপরদিকে ঘুষ না পেলেই অধিগ্রহণকৃত জমির মালিকের কপালে জুটেছে বঞ্চনা। ঘুষ দিতে না পারায় জমির মালিকের বাণিজ্যিক জমি হয়ে গেছে ভিটা। এতে সরকারের বাড়তি খরচ হয়েছে অন্তত ৪৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। ইতিমধ্যে দুদকের দেয়া অভিযোগের ভিত্তিতে জমি অধিগ্রহণের সরকারি টাকা লোপাটের বিষয়ে দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জাহিদ আসান সিদ্দিক। মুঠোফোনে রোববার সন্ধ্যায় তিনি তদন্ত কমিটি গঠিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এর আগে দুদকে দেয়া অভিযোগে জানা যায়, জমি অধিগ্রহণের এই টাকা লোপাটের মূল কারিগর ছিলেন নারায়ণগঞ্জ ডিসি অফিসের কানুনগো এবিএম হাবিব উল্লাহ, সার্ভেয়ার মো. মামুন হোসেন ও সড়ক ও জনপথের সার্ভেয়ার দেওয়ান মো. সোহাগ।
অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক প্রশস্ত করার প্রকল্প নেয়া হয় ২০২২ সালে। এই প্রকল্পের আওতায় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় জমি অধিগ্রহণে ঘটেছে এ নজিরবিহীন ও ভয়াবহ দুর্নীতি।
অভিযোগপত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন মৌজায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক প্রশস্ত করার জন্য প্রকল্প নেয়া হয় ২০২১ সালে। কিন্তু এ প্রকল্পে একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা ঘুষের বিনিময়ে ৪(১) ধারা নোটিশের দীর্ঘদিন পর প্রকল্প সংশোধন করে বাস্তব শ্রেণি পরিবর্তন করতে সহায়তা করেন।
ঘুষের টাকা পাওয়ার পর বরপা মৌজার ৩৯১ডিং দাগে প্রায় ১৫টি জমি অধিগ্রহণে শ্রেণি পরিবর্তন করে বেশি অর্থ জমির মালিককে দেয়ার অভিযোগ বিস্তারিত তথ্য দেয়া রয়েছে। একইভাবে খাদুন মৌজার ৪৩২ নং দাগে, ভুলতা মৌজার ১৬৫৪ নং দাগে, কেশরাব মৌজার ১৩২৮ নং, ১৩৭০ নং দাগে, ১৩৭২ নং, ১৩৮০, ১৪১৬ নং দাগে, ১৪১৭ নং দাগে ও ১৪২৪ নং দাগে ও বিক্রমপুর স্টিলের বরপা মৌজার ৫৯৪ দাগের একই পন্থায় ভূমি পরিবর্তন করে জমির মালিককে অধিকগ্রহণে অতিরিক্ত টাকা ঘুষের বিনিময়ে শ্রেণিভুক্ত জমি নালাকে ভিটা, ভিটাকে বাণিজ্যিক জমি হিসেবে দেখিয়ে অতিরিক্ত টাকা গ্রাহককে দেয়া হয়েছে ঘুষের বিনিময়ে।
অভিযোগের সূত্রমতে, ৪ (৬) ধারা মোতাবেক গণবিজ্ঞপ্তি আকারে যৌথ তদন্তের ফিল্ডবুক জনসাধারণের জন্য প্রকাশ করার কথা রয়েছে। তবে তাদের এসব অপকর্মের পর ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা স্থানীয় জনগণ যাতে বুঝতে না পারে, সেজন্য ২০২৪ সালের ১৪ই অক্টোবরের স্বাক্ষর করা কপি ২১ তারিখে প্রকাশ করা হয়। আর ওইদিনই ছিল আপত্তি দাখিলের শেষ দিন। এতে সাধারণ মানুষ আপত্তি দাখিল করতে পারেনি। এ কারণে তারা দুদকের দ্বারস্থ হয়েছেন বলে অভিযোগে বলা হয়। আর এসব অপকর্মের সহায়তাকারী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে প্রকল্প চলাকালীন সাবেক দুই জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা এলএ শাখার কানুনগো এবিএম হাবিব উল্লাহ ও সার্ভেয়ার মামুন হোসেন ও এবং সড়ক ও জনপথের সার্ভেয়ার দেওয়ান মো. সোহাগকে। আর এই সিন্ডিকেডের মাধ্যমে আনুমানিক ৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে সরকারের প্রকল্প ব্যয় প্রায় ৪৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা বৃদ্ধি করেছে বলে জানানো হয়। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জাহিদ হাসান সিদ্দিকী জানান, তিনি ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের প্রজেক্ট ম্যানেজারকে নিয়ে দুদকে দেয়া অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিষয় তদন্ত কমিটির তদন্ত চলমান রয়েছে, শিগগিরই অগ্রগতি জানানো হবে।