শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

|

শ্রাবণ ১১ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

হলফনামায় সম্পদ ও ধারের যে তথ্য জানালেন শামীম ওসমান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ২১:৫০, ৮ ডিসেম্বর ২০২৩

হলফনামায় সম্পদ ও ধারের যে তথ্য জানালেন শামীম ওসমান

ফাইল ছবি

টানা দুই মেয়াদে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে সংসদ সদস্যের দায়িত্ব পালন করছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এ কে এম শামীম ওসমান। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামার সঙ্গে বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই সংসদ সদস্যের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাড়লেও আয় বেড়েছে অল্প পরিমাণে। তবে এই পাঁচ বছরের ব্যবধানে ঋণের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

শামীম ওসমান আওয়ামী লীগ থেকে ১৯৯৬, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। হলফনামায় এই সংসদ সদস্য শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ, এলএলবি এবং পেশা ব্যবসা দেখিয়েছেন।

হলফনামা অনুযায়ী শামীম ওসমানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে মোট পাঁচটি। সেগুলো হলো– জ্বালানি তেল আমদানি, পরিবহন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স জেড এন করপোরেশন; জেড এন শিপিং লাইনস লিমিটেড; মাইশা এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড; খান ব্রাদার্স ইনফোটেক লিমিটেড এবং উইসডম নিটিং মিলস লিমিটেড।

হলফনামায় তিনি বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, দোকান ও অন্যান্য খাত থেকে বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৪ লাখ ৫০ হাজার ৬৬৪ টাকা। ব্যবসা থেকে তার বার্ষিক আয় ৩৬ লাখ ৭৫ হাজার ৯৫২ টাকা। শেয়ারের সঞ্চয়পত্র এবং ব্যাংক থেকে জামানত সুদ থেকে আয় ১৫ লাখ ৭৯ হাজার ৫৪১ টাকা। বার্ষিক সম্মানি ভাতা পান ছয় লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে সম্মানি পান ১৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা।

শামীম ওসমানের নগদ টাকা রয়েছে ১৭ লাখ ৮৭ হাজার ৫৯২ টাকা। ব্যাংকে নিজ নামে জমা রয়েছে ৭৩ লাখ ৪ হাজার ৬৮৯ টাকা। এ ছাড়া রয়েছে বন্ড ও শেয়ার জেড এন শিপিংয়ের নামে এক কোটি, মাইশা এন্টারপ্রাইজে ৯৫ লাখ, উইসডম নিটিংয়ে দুই লাখ ৫০ হাজার, জেড এন করপোরেশনে এক কোটি ৭ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫৪ টাকা, খান ব্রাদার্সে দুই লাখ ৫০ হাজার। এমপি শামীম ওসমানের নামে আইএফআইসি ব্যাংকে এফডিআর রয়েছে দুই কোটি ৪৯ লাখ ১ হাজার ৬৪৬ টাকা।

শামীম ওসমানের দুটি গাড়ি রয়েছে। এর একটি ৫৬ লাখ ৯৩ হাজার ১৬৬ টাকা মূল্যের টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার ভি-৮। আরেকটির ৮১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা মূল্যের টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার ব্র্যান্ডের গাড়ি। স্বর্ণালংকার নিজ নামে ৩৮ তোলা। ইলেকট্রনিক্স পণ্য রয়েছে পাঁচ লাখ টাকার।

বাসায় আসবাবপত্র রয়েছে পাঁচ লাখ টাকার। তার নামে লাইসেন্স করা পিস্তলের মূল্য এক লাখ ৫ হাজার টাকা এবং ২২ বোরের রাইফেলের দাম এক লাখ ২০ হাজার টাকা।

এমপি শামীম ওসমানের সোনারগাঁয়ের বারদীতে ১২৩ শতাংশ কৃষিজমি রয়েছে, যার মূল্য ১৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া মাসদাইরে ১০ শতাংশ জমি এবং পূর্বাচলে রাজউকের ১০ কাঠার প্লট রয়েছে, যার মূল্য ৩৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। শহরের জামতলা এলাকায় ১৬ শতাংশ জমির ওপর দোতলা বাড়ির মূল্য দেখানো হয়েছে ৭৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

হলফনামায় উল্লেখ করা ঋণের মধ্যে রয়েছে– বিদেশে কর্মরত বন্ধুর কাছ থেকে সুদবিহীন ঋণ নিয়েছেন ২৬ লাখ ৬৯ হাজার ৯৫০ টাকা। আইএফআইসি ব্যাংক নারায়ণগঞ্জ শাখা থেকে নিয়েছেন ৭৩ লাখ ৪ হাজার ৬৮৯ টাকা। গাড়ি বাবদ ঋণ নিয়েছেন ছয় লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৭ টাকা। ক্রস চেকের মাধ্যমে ঋণ নিয়েছেন এক কোটি টাকা। এ ছাড়া জেড এন শিপিং লাইন লিমিটেডের নামে আইএফআইসি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন ১৫ কোটি টাকা এবং মাইশা এন্টারপ্রাইজের নামে পাঁচ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে।

ব্যবসা খাত থেকে সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের স্ত্রী সালমা ওসমান লিপির বছরে আয় ৩৬ লাখ ৭৫ হাজার ৯৫২ টাকা এবং মেয়ের আয় ১৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা। শেয়ারের সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক থেকে জামানত সুদ থেকে আয় ২৪ লাখ ৩৪ হাজার ৯৮৭ টাকা এবং মেয়ের আয় ৭ লাখ ৪৪ হাজার ৩৯ টাকা। নগদ টাকা রয়েছে ১০ হাজার ৩৪৪ টাকা। ব্যাংকে রয়েছে ৩৯ লাখ ৯৪ হাজার ৫৯৯ টাকা, মেয়ের নামে এক কোটি ৩৫ লাখ ৫২ হাজার ৬১৬ টাকা। বন্ড ও শেয়ার রয়েছে স্ত্রীর নামে জেড এন শিপিংয়ের ৪২ লাখ, খান ব্রাদার্সের দুই লাখ ৫০ হাজার, জেড এন করপোরেশনের এক কোটি ৫৮ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকার। মেয়ের নামে খান ব্রাদার্স ইনফোটেক লিমিটেডে দুই লাখ ৫০ হাজার টাকার শেয়ার রয়েছে। আইএফআইসি ব্যাংকে এফডিআর রয়েছে তিন কোটি ৯৪ লাখ ১০ হাজার ১০৯ টাকা, সঞ্চয়পত্র ৪৫ লাখ টাকা এবং মেয়ের নামে সঞ্চয়পত্র ৪৫ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে স্বর্ণালংকার ৪০ তোলা। স্ত্রীর নামে ইলেকট্রনিক্স পণ্যের মূল্য এক লাখ ৫০ হাজার এবং মেয়ের নামে ৫০ হাজার টাকার কম্পিউটার সামগ্রী। স্ত্রীর আসবাবপত্র এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে বাবার হেবা সূত্রে প্রাপ্ত ১৫ শতাংশ জমি রয়েছে।

পাঁচ বছর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে দাখিল করা হলফনামা অনুযায়ী, ওই সময়ে সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের চারটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল। সেগুলো হলো– মেসার্স জেড এন করপোরেশন, জেড এন শিপিং লাইনস লিমিটেড, মাইশা এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড এবং শীতল ট্রান্সপোর্ট লিমিটেড।

সে সময় এই সংসদ সদস্য বাড়ি, দোকান ও অন্যান্য খাত থেকে বাৎসরিক আয় করেন ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৬৬৪ টাকা। ব্যবসা থেকে তার বাৎসরিক আয় ছিল ২২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া শেয়ারের সঞ্চয়পত্র এবং ব্যাংক থেকে জামানত সুদ থেকে তার বাৎসরিক আয় ১৩ লাখ ৬৩ হাজার ৬৮১ টাকা। জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে সম্মানি ২২ লাখ ৪৭ হাজার ৩২৫ টাকা।

শামীম ওসমানের নিজ নামে নগদ অর্থ ছিল ১০ লাখ ৮২ হাজার ৫৭০ টাকা। তার বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ প্রায় ৪ কোটি ৬৪ লাখ ৩০ হাজার ৬৮২ টাকা। তার লাইসেন্স করা পিস্তলের মূল্য ৩৫ হাজার টাকা। ওই সময় জেড এন শিপিং লাইনস, শীতল এসি ট্রান্সপোর্ট এবং মাইশা এন্টারপ্রাইজ নামে তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ১২ কোটি ৩৭ লাখ ২৪ হাজার ৪৬৭ টাকা ঋণ ছিল শামীম ওসমানের।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে এই সংসদ সদস্যের স্ত্রী সালমা ওসমান লিপি ব্যবসা খাত থেকে বছরে আয় করেন ২২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে নগদ ছিল ১৩ লাখ ৬০ হাজার ৮২০ টাকা। এ ছাড়া শেয়ারের সঞ্চয়পত্র এবং ব্যাংক থেকে জামানত সুদ থেকে তার স্ত্রীর বাৎসরিক আয় ১৬ লাখ ৫৫ হাজার ৩৪ টাকা। এ ছাড়া সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ওপর নির্ভরশীলদের নামে ৬৫ লাখ ১২ হাজার ৬৩৪ টাকা ছিল। স্ত্রীর নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা অর্থের পরিমাণ ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৬৫২ টাকা। নির্ভরশীলদের নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা কোনও টাকা ছিল না।