শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

|

বৈশাখ ৫ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

শীত আসলেই আমার মন রস খুঁজে বেড়ায়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ২৩:৩০, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২

শীত আসলেই আমার মন রস খুঁজে বেড়ায়

খেজুরের রস

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে এক সময় খেজুর গাছিদের ব্যস্ততা ছিল চোখে পরার মত । এখন আর নেই আগের মত কোন ব্যস্ততা। নেই কোন তাড়া। খেজুরের রস সংগ্রহ করে আগে বাজারে নিয়ে বিক্রয় করতেন প্রতিযোগিতা নিয়ে । এখন আর তা আগের মত দেখা যায় নাহ দিন দিন খেজুরের গাছ কমে যাচ্ছে। বয়স্ক গাছ গুলো থেকেও এখন আর বেশি রস মিলে নাহ। নতুন করে কেউ আর গাছ ও লাগায় নাহ। পুরাতন গাছ গুলো পরিচর্যার অভাবে মারা যাচ্ছে। বছরে একবার রস সংগ্রহ করার পর আর কেউ খবর রাখেনা এই খেজুর গাছ গুলোর।

বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের ঢাকা বিভাগের  একটি জেলা নারায়ণগঞ্জ। সোনালী আঁশ পাটের জন্য প্রাচ্যের ড্যান্ডি নামে পরিচিত। সেই নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে বাংলার ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু খেজুর রস। এক সময়ে শীত মৌসুমের শুরুতেই এই এলাকার মানুষ খেজুরের গাছ কাটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীতের সকালে কে-কার আগে খেজুর গাছ কেটে প্রকৃতির সেরা উপহারসমূহের মধ্যে অন্যতম খেজুর রস সংগ্রহ করতে পারে এ প্রতিযোগিতায় নেমে পড়তেন। একসময় ছুটির দিন গুলোতে শীতের সকালে খেজুর রসে তৈরি নানা প্রকার পিঠা-পায়েস ছিল সব শ্রেণির মানুষের সেরা খাদ্য সামগ্রী। সময়ের বিবর্তনে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী এই খেজুরের রস।

আজ থেকে ত্রিশ বছর পূর্বেও সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় শত শত খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতেন গাছিরা। গত ২০ বছর ধরে প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ জলবায়ু পরিবর্তন গাছ কেটে বাড়ি ঘর নির্মান করার ফলে খেজুর গাছের সঙ্কট দেখা দিয়েছে এখন গাছ নাই বললেই চলে। যার ফলে এখন আর রস পাওয়া যাচ্ছে নাহ আগের মত । ফলে দিনে দিনে খেজুর রস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এই এলাকার মানুষ। 

সিদ্ধিরগঞ্জ বাজার এলাকার আওলাদ হক বলেন, এখন আগের মত খেজুর গাছ পাওয়া যায় না । দুই একটা থাকলেও সেই গাছ কাটতে কাউকে দেখি নাহ। নিজের খেজুর গাছ না থাকায় পরের গাছ থেকে রস কিনে খেতে হচ্ছে তবে এখন শহরে ঠান্ডা আর কুয়াশা কম থাকায় রস আগের মত মিষ্টি হয় নাহ ।

আটি গ্রাম এলাকার মোবারক খন্দকার  বলেন,  শীত আসলেই আমার মন রস খুঁজে বেড়ায়। ছোট বেলা থেকে খেজুরের রস খাওয়া আমার অভ্যাস। খেজুর রসের স্বাদই আলাদা। এই রসের যে একটি মিষ্টি গন্ধ আছে, যেটি অন্য কোন রসে নেই। ছোট বেলায় শীতের সকালে নিজেদের গাছের রস খেতাম।  বাড়ি করার ফলে অনেক আগেই বাবা গাছ গুলো কেটে ফেলেছে তাই এখন প্রতি গ্লাস ৪০ টাকা করে কিনে খেতে হচ্ছে।  

ফরিদপুর থেকে আসা গাছি জাকির হোসেন বলেন,  প্রতি বছর ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ৩ মাসের জন্য আমি এখানে গাছ কাটতে আসি। এখানে আগে অনেক গাছ ছিলো আস্তে আস্তে অনেক গাছ মারা গেছে, এখন প্রায় ৩৪ টি গাছ আছে যার থেকে প্রতি দিন সকাল ও সন্ধ্যা মিলিয়ে প্রায় ৫৫ থেকে৬০ লিটার রস সংগ্রহ করি। আর আমার প্রতিটি গাছে নেট দেওয়া আছে যাতে করে রসে কোন ময়লা নাহ পরে। গাছ থেকে রস নামানোর পর রস গুলকে ছেকে তারপর বিক্রয় করি। তাছাড়া আমার এখানে প্রতিদিনের রস প্রতিদিন শেষ হয়ে যায়। অনেককে দূর থেকে নিতে আসি কিন্তু আমি রস দিতে পারি নাহ ফিরায় দিতে হয়। তাই এখন সবাইকে বলি ফোন করে অর্ডার দিয়ে আসতে তাহলে আর ফিরে যেতে হবে নাহ। বছরে এই তিন মাস শুধু আমি এই ব্যাবসা করি বাকী মাস গুলোতে গ্রামে অটো চালাই।