ফাইল ছবি
আলোচিত এই ঘটনার সাত খুনের নয় বছর পূর্ণ হয়েছে বুধবার। ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল এই হত্যাকাণ্ড হয়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এই হত্যা মামলার রায়ের পর উচ্চ আদালতে ২০১৮ সালে ২২ অগাস্ট ১৫ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। অন্য আসামিদেরও বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়।
বর্তমানে মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
নিহতদের পরিবারসহ নারায়ণগঞ্জবাসী এই মামলার রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানান।
এদিকে, নিহতদের স্মরণে নিহতের স্বজনরা মিলাদ মাহফিল ও দোয়ার আয়োজন করেছেন।
এই মামলায় নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, র্যাব-১১-এর চাকরিচ্যুত সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন ও লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম মাসুদ রানাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং নয় জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজার রায় হয়।
পরবর্তীতে উচ্চ আদালত ১৫ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে; অন্য আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়।
নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী ও একটি মামলার বাদী সেলিনা ইসলাম বিউটি সাত খুন মামলার রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন।
এই হত্যাকাণ্ডে সাত পরিবারের মধ্যে পাঁচটি পরিবার এখন চরম অর্থকষ্টে দিনাদিপাত করছে বলে জানান তিনি।
তিনি জানান, নিহতদের স্মরণে মসজিদ ও মাদ্রাসায় দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছেন।
নিহত মনিরুজ্জামান স্বপনের গাড়ির চালক জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী শামসুন নাহার নুপুর বলেন, তার স্বামী হত্যাকাণ্ডের দুই মাস ১০ দিন পর তাদের মেয়ে রওজার জন্ম হয়। মেয়েটি তার বাবাকে দেখতে পারল না।
তিনি বলেন, তাদের পরিবারের একমাত্র উপাজর্নক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তার স্বামী। কিন্তু গত সাত বছরে কোনো সরকারি সহায়তা তিনি পাননি।
তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে সরকারি সহায়তার দাবি জানান।
নিহত যুবলীগ নেতা মনিরুজ্জামান স্বপনের ভাই মিজানুর রহমান রিপন বলেন, সাত খুন মামলাটি উচ্চ আদালতে ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে অন্য আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়।
“হাই কোর্টে রায় ঘোষণার পর আসামিপক্ষ আপিল করার পর আমরা আশা করেছিলাম দ্রুত আপিল নিষ্পত্তি হবে। কিন্তু এটি বিলম্বের কারণে সাত খুনের নিহত সাত জনের পরিবারই হতাশ হয়ে পড়েছে।”
আপিল বিভাগে মামলাটি দ্রুত শেষ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করছেন।
নিহত তাজুল ইসলামের বাবা আবুল খায়ের বলেন, “আমরা অপেক্ষায় আছি কবে সাত খুন মামলাটির রায় কার্যকর হবে। আমরা এ মামলার রায় কার্যকর দেখে যেতে পারব কিনা জানি না। নিহত সিরাজুল ইসলাম লিটনের বাবা রায় দেখে যেতে পারেননি; তিনি গত বছর মারা গেছেন।”
তিনি বলেন, এই ঘটনায় পাঁচটি পরিবারের সদস্যরা এখন খুবই অসহায় অবস্থায় রয়েছেন। এই পাঁচটি পরিবার এখন চরম অর্থকষ্টে দিনাতিপাত করছে।
“প্রধানমন্ত্রী যদি এই পাঁচটি পরিবারকে যদি দিতেন তবে আমরা একটু উপকৃত হতাম। রায় কার্যকর না হওয়ায় আমরা এখন হতাশ হয়ে পড়েছি।”
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালতে মামলায় হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লার লামাপাড়া থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র ও ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন অপহৃত হন।
অপহরণের তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল নজরুল ইসলামসহ ছয় জনের এবং ১ মে সিরাজুল ইসলাম লিটনের লাশ শীতলক্ষ্যা নদীর বন্দরের শান্তির চর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।
এই ঘটনায় নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন।